ঢাকা ০৪:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

রামগতিতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ

মেঘনায় মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলেরা

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ২৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনায় জাটকা ও মা-ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আজ শনিবার রাত ১২ টায়। নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ শিকারে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এ অঞ্চলের জেলেরা।গত ৩ অক্টোবর রাত ১২ টা থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২ টা পর্যন্ত মোট ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার। এই ২২ দিনে বেশীরভাগ জেলেরা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকলেও উপজেলা কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির নিয়োগকৃত দালালের মাধ্যমে রামগতি মাছঘাট, বয়ারচর ব্রীজঘাট, গাবতলী ঘাট, টাংকিরঘাট সহ মেঘনা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে নৌকা প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নিয়ে অবাধে মা-ইলিশ নিধন করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযানের শেষ দুই দিন জাটকা ও মা-ইলিশ নিধনের প্রতিযোগিতায় নামেন বড়খেরী নৌ-পুলিশ ও মৎস্য অফিস। গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বেশ কিছু নৌকা আটক করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে নৌকা প্রতি ১০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুর রহমান। এমনটাই জানিয়েছে ২ জন জেলে। এতে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। খোদ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষরাই এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করাই জনমনে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা গেছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। নৌকা-ট্রলার ধোঁয়া মোছার কাজে ব্যস্ত তারা। অনেকেই জাল বুনতে দেখা গেছে। উপজেলার কয়েকটি জেলে পল্লীতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে, কেউ জাল ও মাছ ধরার নৌকা মেরামত করে আগেই প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন,আবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে নদী পাড়ের মাছের আড়তগুলো। কয়েক ঘন্টা পর নদীতে নামবেন তারা। তাই এখন দম ফালানো সময় নেই তাদের। অভিযান সফল হওয়ায় আগামীতে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রামগতিতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৬০ জন। আলেকজান্ডার মাছঘাটের জেলে রবিউল মাঝি জানান,অন্যবারের তুলনায় এবারের নিষেধাজ্ঞায় ছিল নড়েবড়ে। এ কারণে প্রচুর জেলে নদীতে মা-ইলিশ শিকার করতে পেরেছে। ফলে আমরা যারা নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে যায়নি,তারা কেউ মহাজন থেকে, কেউ এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালিয়েছি।বিবিরহাট উছখালী ঘাটের জেলে মফিজ মাঝি জানান, এই ২২ দিন অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছি। সরকার সামান্য কিছু চাল দেয়, তা দিয়ে তার ৯ জনের সংসার চলেনা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় বেশ খুশি তিনি।রামগতি মাছঘাটের জেলে নিজাম উদ্দিন বলেন আমার তিনটা ছোট বাচ্চা, স্ত্রী, মা সবাই তাকিয়ে থাকে আমার রোজগারের দিকে। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা সুদের উপর ঋণ নিয়ে চলেছি। নিষেধাজ্ঞা শেষ এখন নদীতে গিয়ে ওই ঋণ পরিশোধ করতে হবে সংসারও চালাতে হবে।মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায়, আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৩ অক্টোবর রাত ১২ টা থেকে ২৫ অক্টোবর মোট ২২ দিন মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এই ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার সময় ওইসব এলাকায় সব রকমের ইলিশ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুতকরণ নিষিদ্ধ ছিল।উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সৌরব-উজ জামান বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফলতার সাথে শেষ হয়েছে। মৎস্য বিভাগ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রামগতিতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ

মেঘনায় মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলেরা

আপডেট সময় :

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনায় জাটকা ও মা-ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আজ শনিবার রাত ১২ টায়। নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ শিকারে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এ অঞ্চলের জেলেরা।গত ৩ অক্টোবর রাত ১২ টা থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২ টা পর্যন্ত মোট ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার। এই ২২ দিনে বেশীরভাগ জেলেরা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকলেও উপজেলা কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির নিয়োগকৃত দালালের মাধ্যমে রামগতি মাছঘাট, বয়ারচর ব্রীজঘাট, গাবতলী ঘাট, টাংকিরঘাট সহ মেঘনা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে নৌকা প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নিয়ে অবাধে মা-ইলিশ নিধন করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযানের শেষ দুই দিন জাটকা ও মা-ইলিশ নিধনের প্রতিযোগিতায় নামেন বড়খেরী নৌ-পুলিশ ও মৎস্য অফিস। গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বেশ কিছু নৌকা আটক করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে নৌকা প্রতি ১০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুর রহমান। এমনটাই জানিয়েছে ২ জন জেলে। এতে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। খোদ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষরাই এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করাই জনমনে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা গেছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। নৌকা-ট্রলার ধোঁয়া মোছার কাজে ব্যস্ত তারা। অনেকেই জাল বুনতে দেখা গেছে। উপজেলার কয়েকটি জেলে পল্লীতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে, কেউ জাল ও মাছ ধরার নৌকা মেরামত করে আগেই প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন,আবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে নদী পাড়ের মাছের আড়তগুলো। কয়েক ঘন্টা পর নদীতে নামবেন তারা। তাই এখন দম ফালানো সময় নেই তাদের। অভিযান সফল হওয়ায় আগামীতে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রামগতিতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৬০ জন। আলেকজান্ডার মাছঘাটের জেলে রবিউল মাঝি জানান,অন্যবারের তুলনায় এবারের নিষেধাজ্ঞায় ছিল নড়েবড়ে। এ কারণে প্রচুর জেলে নদীতে মা-ইলিশ শিকার করতে পেরেছে। ফলে আমরা যারা নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে যায়নি,তারা কেউ মহাজন থেকে, কেউ এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালিয়েছি।বিবিরহাট উছখালী ঘাটের জেলে মফিজ মাঝি জানান, এই ২২ দিন অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছি। সরকার সামান্য কিছু চাল দেয়, তা দিয়ে তার ৯ জনের সংসার চলেনা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় বেশ খুশি তিনি।রামগতি মাছঘাটের জেলে নিজাম উদ্দিন বলেন আমার তিনটা ছোট বাচ্চা, স্ত্রী, মা সবাই তাকিয়ে থাকে আমার রোজগারের দিকে। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা সুদের উপর ঋণ নিয়ে চলেছি। নিষেধাজ্ঞা শেষ এখন নদীতে গিয়ে ওই ঋণ পরিশোধ করতে হবে সংসারও চালাতে হবে।মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায়, আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৩ অক্টোবর রাত ১২ টা থেকে ২৫ অক্টোবর মোট ২২ দিন মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এই ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার সময় ওইসব এলাকায় সব রকমের ইলিশ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুতকরণ নিষিদ্ধ ছিল।উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সৌরব-উজ জামান বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফলতার সাথে শেষ হয়েছে। মৎস্য বিভাগ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।