সংবাদ শিরোনাম ::
চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিদ্ধান্তহীনতায় ইসি
এ এইচ ইমরান
- আপডেট সময় : ১৩৮ বার পড়া হয়েছে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অদৃশ্য এক চাপে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকারপ্রধানের ঘোষিত সময়সূচি ধরে রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিলেও প্রতীক বরাদ্দ, নতুন দল নিবন্ধন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাছাই এবং রাজনৈতিক সংলাপসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ইসি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অদৃশ্য চাপ ইসির স্বাধীনতা ও প্রস্তুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কেননা রোডম্যাপ ঠিক, কিন্তু সিদ্ধান্তে দ্বিধা।প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণায় নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। ইসি ঘোষণা অনুযায়ী প্রস্তুতি এগোলেও নানা ইস্যুতে থমকে গেছে সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া।
সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হচ্ছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, যেখানে জোটবদ্ধ দলগুলোকে নিজ নিজ প্রতীকে ভোট করার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বলছে, এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী পরিবেশকে জটিল করছে এবং ছোট দলগুলোর প্রতীক পরিচিতিকে সীমিত করে দিচ্ছে। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, “ইসি সরকারের নীতির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। নিরপেক্ষতার প্রমাণ তারা দিতে পারছে না।
এছাড়া নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের প্রতীক হিসেবে শাপলা দাবি করছে। কিন্তু ইসি শাপলা প্রতীক দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।দলটি ঘোষণা দিয়েছে শাপলা না পেলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এই ইস্যুতে ইসির নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে এবং কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। এনসিপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “ইসি কোনো অদৃশ্য চাপের কারণে আমাদের শাপলা প্রতীক দিচ্ছে না। ফলে শুধু এনসিপিই নয়, আরও কয়েকটি নতুন দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে।
এদিকে সংলাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইসির ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন দলগুলোর নিবন্ধন সম্পন্ন না হওয়ায় সেই সূচি পিছিয়ে গেছে।
বর্তমানে দেশে ৫৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থাকলেও নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগসহ পাঁচটি দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। ফলে ৫২টি দলের মধ্যে কারা সংলাপে আমন্ত্রণ পাবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা এখন সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। কাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়েও বিতর্ক চলছে। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অভিযোগ করেছে, পূর্ববর্তী নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কিছু বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা যেন এবার ভোটের দায়িত্ব না পান।
তারা ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা হাসপাতাল ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করে বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, গত তিন নির্বাচনে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। কিন্তু এ অবস্থায় ১০ লাখ কর্মকর্তার মধ্যে বাদ দিতে গেলে, পুরো প্রক্রিয়াই অচল হয়ে যাবে।
এ নিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বলেন, প্রতীক বরাদ্দ, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাছাই, গণভোটের দাবি এসব ইসির জন্য বড় চাপ। এসব কারণে কমিশনের প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান মনে করেন, “শাপলা প্রতীক ইস্যুটি ইসির ‘ইগো’তে পরিণত হয়েছে। এখন এনসিপিকে শাপলা দিলে বলা হবে চাপের মুখে সিদ্ধান্ত বদলেছে। তিনি আরও বলেন, ইসলামি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভোটের দায়িত্বে না রাখার দাবি অবশ্য যৌক্তিক।
ইসির তার অবস্থান থেকে বলছেন সব বিতর্কের মধ্যেও ইসি আশাবাদী। ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “রোডম্যাপ অনুযায়ী সব প্রস্তুতি এগোচ্ছে। কিছু বিষয়ে সমন্বয় করতে হয়, এটা স্বাভাবিক। আতঙ্কিত বা দুশ্চিন্তার কিছু দেখি না।
নির্বাচনের মাত্র তিন মাস বাকি থাকলেও প্রতীক বিতর্ক, নতুন দল নিবন্ধন, সংলাপের বিলম্ব ও কর্মকর্তাবাছাইয়ের অনিশ্চয়তা ইসির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইসির নিরপেক্ষতা ও প্রস্তুতি নিয়ে জনআস্থা আরও প্রশ্নের মুখে পড়বে।




















