ঢাকা ১১:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানা সমস্যায় জর্জরিত

শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ২৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেবার মান বাড়েনি যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে ৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত জনবল না থাকা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাব ও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না উপজেলার বিপুল জনগোষ্ঠী।। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনদের।
এদিকে, জনবল সংকট ছাড়াও সার্জারি যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, অপরিচ্ছন্নতা, ওয়ার্ডে পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত বাথরুমসহ নানা সমস্যা রয়েছে হাসপাতালটিতে। এ হাসপাতালে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের দুটি অপারেশন থিয়েটার দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। ভর্তি হন ৩৫/৪০ জন। চিকিৎসা দিতে না পারায় বেশিরভাগ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে জেলা হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। যারা আছেন, তাদের অনেকেই নিয়মিত রোগী দেখেন না। অফিস সময়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখাকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় সাধারণ মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যও প্রাইভেট ক্লিনিক বা শহরের হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।
অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে আসা হাসিনা বেগম বলেন, সকাল আটটায় এসেছি, সাড়ে ১১টা বাজলেও এখনো ডাক্তারের দেখা মেলেনি। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, আরও ৩০জনের পরে দেখা হবে। এত দেরিতে কীভাবে চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব।
ভুক্তভোগী এক রোগীর স্বজন বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার আশায় এসেছিলাম। কিন্তু এখানে নেই সঠিক চিকিৎসক নেই মানসম্মত খাবার, নেই পর্যাপ্ত ওষুধ। সব কিছুই সিন্ডিকেটের দখলে।
সেবা নিতে আসা রোগীরা নানা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে সব ধরনের সেবা থাকলেও ডাক্তার ও ল্যাব টেকনিশিয়ানরা তাদেরকে প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দুই একটি ওষুধ ছাড়া সব ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। ঠিকমত পরিষ্কার করা হয় না। বাথরুম। পুরুষ ও মহিলা রোগীদের একই বাথরুম ব্যবহার করতে হয়।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের পরিবেশ একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। অধিকাংশ বেড ভাঙা ও জোড়াতালি দেওয়া, বাথরুম নোংরা ও অকার্যকর। রাতে ফ্যান ও লাইট না থাকায় হাসপাতাল অন্ধকারে ভুতুড়ে পরিবেশ ধারণ করে। হাসপাতালের চারটি কেবিন সবসময় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দখলে থাকে। ‘ম্যানেজ’ করতে পারলেই কেবল কেবিন পাওয়া যায়।
ভর্তি রোগীদের জন্য প্রতিদিন সরকারি খরচে খাবার সরবরাহ করা হলেও তা মানসম্মত নয়। তালিকাভুক্ত খাবার দেওয়া হয় না, যে খাবার রোগীরা পায় তা মুখে দেওয়ার মতো নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে রোগীরা খাবার বাইরে থেকে কিনে বা বাড়ি থেকে এনে খেতে বাধ্য হন। বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও নামমাত্র সরবরাহ করা হয়। গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা এমন মৌলিক জিনিসও রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দালাল ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে রেখেছে। ওষুধ ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়। টেন্ডারে উল্লেখিত মানের জিনিস না দিয়ে নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। এমনকি স্টোরে কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও নাইট গার্ড নেই, যে কারণে চুরির ঝুঁকি সব সময় বিরাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে শার্শার সাধারণ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। জরুরি সংক্ষার, পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ, দালাল চক্রের বন্ধ এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা না হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
রোগীদের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার তৌফিক পারভেজ বলেন, আমাদের হাসপাতালে একই ঠিকাদার দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য সরবরাহ করছে। তাকে বারবার নিম্নমানের খাদ্য না দিয়ে ভালো খাদ্য দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। ঠিকাদারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে হাসপাতালে টেস্ট না করিয়ে রোগীদের বাহিরে টেস্ট করতে পাঠানোর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
তিনি আরও বলেন, শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট চরমে। ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে। এ জনবল দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা দিতে আমাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোন ডাক্তার সেবা নিতে আসা রোগীদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিচ্ছে এমন অভিযোগ আমার কাছে কেউ দেয়নি। এ ধরনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানা সমস্যায় জর্জরিত

আপডেট সময় :

৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেবার মান বাড়েনি যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে ৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত জনবল না থাকা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাব ও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না উপজেলার বিপুল জনগোষ্ঠী।। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনদের।
এদিকে, জনবল সংকট ছাড়াও সার্জারি যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, অপরিচ্ছন্নতা, ওয়ার্ডে পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত বাথরুমসহ নানা সমস্যা রয়েছে হাসপাতালটিতে। এ হাসপাতালে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের দুটি অপারেশন থিয়েটার দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। ভর্তি হন ৩৫/৪০ জন। চিকিৎসা দিতে না পারায় বেশিরভাগ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে জেলা হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। যারা আছেন, তাদের অনেকেই নিয়মিত রোগী দেখেন না। অফিস সময়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখাকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় সাধারণ মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যও প্রাইভেট ক্লিনিক বা শহরের হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।
অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে আসা হাসিনা বেগম বলেন, সকাল আটটায় এসেছি, সাড়ে ১১টা বাজলেও এখনো ডাক্তারের দেখা মেলেনি। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, আরও ৩০জনের পরে দেখা হবে। এত দেরিতে কীভাবে চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব।
ভুক্তভোগী এক রোগীর স্বজন বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার আশায় এসেছিলাম। কিন্তু এখানে নেই সঠিক চিকিৎসক নেই মানসম্মত খাবার, নেই পর্যাপ্ত ওষুধ। সব কিছুই সিন্ডিকেটের দখলে।
সেবা নিতে আসা রোগীরা নানা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে সব ধরনের সেবা থাকলেও ডাক্তার ও ল্যাব টেকনিশিয়ানরা তাদেরকে প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দুই একটি ওষুধ ছাড়া সব ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। ঠিকমত পরিষ্কার করা হয় না। বাথরুম। পুরুষ ও মহিলা রোগীদের একই বাথরুম ব্যবহার করতে হয়।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের পরিবেশ একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। অধিকাংশ বেড ভাঙা ও জোড়াতালি দেওয়া, বাথরুম নোংরা ও অকার্যকর। রাতে ফ্যান ও লাইট না থাকায় হাসপাতাল অন্ধকারে ভুতুড়ে পরিবেশ ধারণ করে। হাসপাতালের চারটি কেবিন সবসময় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দখলে থাকে। ‘ম্যানেজ’ করতে পারলেই কেবল কেবিন পাওয়া যায়।
ভর্তি রোগীদের জন্য প্রতিদিন সরকারি খরচে খাবার সরবরাহ করা হলেও তা মানসম্মত নয়। তালিকাভুক্ত খাবার দেওয়া হয় না, যে খাবার রোগীরা পায় তা মুখে দেওয়ার মতো নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে রোগীরা খাবার বাইরে থেকে কিনে বা বাড়ি থেকে এনে খেতে বাধ্য হন। বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও নামমাত্র সরবরাহ করা হয়। গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা এমন মৌলিক জিনিসও রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দালাল ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে রেখেছে। ওষুধ ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়। টেন্ডারে উল্লেখিত মানের জিনিস না দিয়ে নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। এমনকি স্টোরে কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও নাইট গার্ড নেই, যে কারণে চুরির ঝুঁকি সব সময় বিরাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে শার্শার সাধারণ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। জরুরি সংক্ষার, পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ, দালাল চক্রের বন্ধ এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা না হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
রোগীদের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার তৌফিক পারভেজ বলেন, আমাদের হাসপাতালে একই ঠিকাদার দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য সরবরাহ করছে। তাকে বারবার নিম্নমানের খাদ্য না দিয়ে ভালো খাদ্য দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। ঠিকাদারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে হাসপাতালে টেস্ট না করিয়ে রোগীদের বাহিরে টেস্ট করতে পাঠানোর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
তিনি আরও বলেন, শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট চরমে। ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে। এ জনবল দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা দিতে আমাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোন ডাক্তার সেবা নিতে আসা রোগীদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিচ্ছে এমন অভিযোগ আমার কাছে কেউ দেয়নি। এ ধরনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।