দল পাল্টে বিএনপির আশ্রয় খুঁজছেন মহিউদ্দিন মহারাজের একান্ত সহচর জেপি নেতা শাহীন
- আপডেট সময় : ২১ বার পড়া হয়েছে
দল বদলের রাজনীতিতে বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) আহ্বায়ক ও পত্তাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফ্যাসিবাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. শাহীন হাওলাদার। এক সময় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত শাহীন হাওলাদার এখন স্থানীয় কিছু নেতার সহযোগিতায় বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পায়তারা করছেন বলে জোর আলোচনা শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঞ্জু-সমর্থিত ক্ষমতার জোরে চেয়ারম্যান হওয়ার পর শুধু পত্তাশী ইউনিয়ন নয়, পুরো উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রমে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শাহীন। তাঁর বিরুদ্ধে মুজিববর্ষের ঘর প্রকল্পে অর্থ আত্মসাৎ, ইউনিয়নে চৌকিদার ও দফাদার নিয়োগে লাখ লাখ টাকার ঘুষ গ্রহণ, ভিজিডির চাল চুরির অভিযোগ, সরকারী গাছ কেটে বিক্রি, বিভিন্ন প্রকার ভাতার কার্ড বিতরনে আর্থিক কেলেঙ্কারি এবং ইউপি সদস্যদের প্রাপ্য সুবিধা বঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ সদস্য তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও দিয়েছিলেন এবং তা বিধি মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে দীর্ঘদিন পার হয়ে যাওয়ার পরও ইউপি সদস্যদের আবেদনের কোন সুরাহা হয়নি।
রাজনৈতিকভাবে সুযোগসন্ধানী হিসেবে পরিচিত শাহীন অর্থ ও ক্ষমতার লোভে নিজের রাজনৈতিক অভিভাবক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর যোগ দেন মঞ্জুর সাবেক শিষ্য, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজের দলে। মহারাজের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও আর্থিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্থানীয়দের অভিযোগ— বিতর্কিত সেই নির্বাচনে জিয়া গাজীর অন্যতম সহযোগী ছিলেন শাহীন হাওলাদার। নির্বাচনে জিয়া গাজিকে বিজয়ী করতে ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে ব্যাপক বোমাবাজি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে মহিউদ্দিন মহারাজের ঘনিষ্ঠ সহচর শাহীন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। ওই সময় শাহীনের দাপটে ইন্দুরকানীর বিএনপি এমনকি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। পত্তাশী ইউনিয়ন বিএনপির অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও আছে শাহীনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সন্ত্রাস ও বিষ্ফোরক আইনে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা চলমান আছে।
পত্তাশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা ও বিভিন্ন মামলার আসামীরা একত্রিত হয়ে গভীর রাতে পরিষদের কার্যালয়ে শাহীনের ছত্রছায়ায় মিটিং করে বলেও অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। এরই প্রেক্ষিতে গেল সপ্তাহে পত্তাশী ইউনিয়ন পরিষদে অভিযান চালিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পরিষদের পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় শাহিন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে আওয়ামী লীগের কিছু প্রচারপত্র উদ্ধার করেছিল।
ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও স্থানীয় হাইব্রিড কিছু বিএনপি নেতার সহযোগিতায় শাহীন হাওলাদার এখনো বহাল তবিয়তে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। নিজস্ব প্রভাব ব্যবহার করে তিনি নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু কার্ড, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টার, বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা বণ্টন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
৫ আগষ্টের সফল গন অভ্যুত্থানের পর সুযোগসন্ধানী শাহীন এখন নতুন রাজনৈতিক আশ্রয়ের সন্ধানে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি সম্প্রতি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বেশ কিছু বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ছেন। এমনকি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় পিরোজপুরে বা ঢাকায় গিয়ে বিএনপিতে যোগদানেরও চেষ্টা করছেন মহিউদ্দিন মহারাজের দোসর মাছ ব্যবসায়ী শাহীন। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
পত্তাশী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি কবির খান বলেন, “আওয়ামী লীগের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও, ব্যক্তিগত আক্রোশে শাহীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে আমাকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়েছিল। শাহীনের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও সন্ত্রাসের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি শাহীনের বিরুদ্ধে বিএনপির অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার মামলা থাকলেও সে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি শাহীন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল, তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র মো. হাবিবুর রহমান মালেক, এবং খুলনায় শেখ হেলালের সাথেও সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এসব নাম ব্যবহার করে তিনি দীর্ঘদিন স্থানীয় বিএনপি জামায়াতের নেতাদের তটস্থ করে রেখেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতকিছুর পরেও শাহীন হাওলাদার কিভাবে স্বপদে বহাল আছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনগন।















