সংবাদ শিরোনাম ::
জামায়াতে ইসলাম কি ক্ষমতায় যেতে পারবে?
এ এইচ ইমরান
- আপডেট সময় : ৯৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ২০২৬ সালের নির্বাচনকে ঘিরে নানা আলোচনা চলছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলাম কি এই নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে পারবে—এই প্রশ্নটি এখন অনেকের মনে। দলটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ ছিল, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পুনর্গঠন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়তা এবং তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা অনেককে ভাবিয়ে তুলছে।
২০২৫ সালের শেষের দিকে এসে দেশের প্রধান রাজনৈতিক মঞ্চে আওয়ামী লীগ কার্যত অনুপস্থিত, আর বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী মুখোমুখি অবস্থানে। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে ভোটের সমীকরণে নতুন ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করছে জামায়াত ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী ধারার দলগুলো।
জামায়াত ইসলামী তাদের নিবন্ধন ও প্রতীক ফেরত পাওয়ার পর থেকেই সক্রিয়ভাবে মাঠে নেমেছে। তারা এখন একাধিক ছোট ইসলামী দল, জাতীয় পার্টির ভাঙা অংশ, এবং কিছু আঞ্চলিক দলকে নিয়ে নির্বাচনি আসন ভিত্তিক সমঝোতা করছে।
তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামের সামনে বড় বাধা হলো তাদের জোটভিত্তিক রাজনীতি এবং বড় দলগুলোর প্রভাব। এ ছাড়া সাধারণ ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করাও তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতএব, জামায়াতে ইসলাম ২৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে পারবে কি না, তা নির্ভর করছে তাদের রাজনৈতিক কৌশল, জনগণের সমর্থন, এবং নির্বাচন কমিশনের নীতির ওপর।
জামায়াতের নেতারা দাবি করছেন, জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে তারা কাজ করছেন এবং তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে “ইসলামী কল্যাণভিত্তিক সমাজ” গঠনের অঙ্গীকার করেছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জামায়াত একসময় ভোট ব্যাংকের দিক থেকে প্রভাবশালী ছিল, কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার তাদের অবস্থান দুর্বল করলেও সাংগঠনিকভাবে দলটি শক্তিশালী অবস্থানে আছে। ফলে ২০২৬ সালের নির্বাচনে দলটি সরাসরি ক্ষমতায় যেতে পারবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।
তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা যায়, শিক্ষার্থী ও নবীন নাগরিকদের মধ্যে, সীমিত নগর-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে জামায়াতের কমন সমর্থন নজরে আসার মতো। কিছু সার্ভে-সূত্রে দেখা গেছে তরুণ প্রজন্ম, ছাত্র, প্রাইভেট সেক্টর ও মাদ্রাসা-ভিত্তিক ভোটারদের মধ্যে জামায়াতের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।
এদিকে সাম্প্রতিক সংবাদে বলা হচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে—জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গনভোট, সিটবন্টন, রেফারেন্ডাম- টাইমলাইন, সাংগঠনিক শর্ত ইত্যাদি নিয়ে দ্বন্দ চলছে। ফলে তাদের রাজনৈতিক বিচ্ছেদে দল দুটি নিজদের অবস্থান থেকে আলাদা চ্যালেঞ্জের কথা বলছে। এরফলে দু’দলের মধ্যে ঐতিহ্যগত জোট-গঠন অনিশ্চিত হয়ে পরছে।
তবে ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনি জোট না করে আসনভিত্তিক সমঝোতার পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছে। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা চালালেও, শেষ পর্যন্ত তারা কাঠামোগত জোট না করে আসন ভাগাভাগির কৌশল গ্রহণ করেছে।
দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হলো প্রচলিত কাঠামোগত জোট না করে সমমনাদের সঙ্গে বসে নিশ্চিত করা যাতে একই আসনে একাধিক প্রার্থী না হয়।
তিনি আরও জানান, তারা কোনো গোপন কৌশল নয়, বরং সরাসরি নির্বাচনি সমঝোতার মাধ্যমে একে অপরের ভোট সংরক্ষণ করতে চান।
দলটির আমির ড. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা কোনো জোট করার সিদ্ধান্ত নেইনি এবং আমরা কোনো জোট করব না। আমরা নির্বাচনি সমঝোতা করব। প্রতিটি জায়গায় একটি ভোট বাক্স হবে- সেই নীতিতেই আমরা এগুচ্ছি।
এদিকে বিএনপি ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থী তালিকায় সমমনাদের জন্য নির্দিষ্ট আসন খালি রেখেছে। জামায়াতও একই পথে হাঁটছে— কিছু আসন নিজেদের প্রার্থীদের জন্য রাখবে, আবার কিছু আসন সমমনাদের জন্য ছেড়ে দেবে।
স্থানীয় পর্যায়ে যেসব প্রার্থী ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে, সমঝোতা অনুযায়ী তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরে দাঁড়াবেন বলে জানানো হয়েছে।
এবিষয়ে সমমনা দলের খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, আমরা শুরু থেকেই আসনভিত্তিক সমঝোতার পক্ষে। আমাদের চিন্তা হলো, নিজেদের ভোট যেন নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি না হয়।
একইসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি ইসলামপন্থি দলও এই সমঝোতার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে থেকে ক্ষমতায় আসে জামায়াত। সেই সময় দলটির দুই নেতা মন্ত্রীও হন। কিন্তু ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে চারদলীয় জোট ভেঙে দেয়ার পর থেকে উভয় দলের সম্পর্ক দূরত্বে চলে যায়।
তবে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াত এবং তাদের সমমনাদের মধ্যে। নির্বাচনি কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন ও প্রতীক স্থগিত করার পর এই সমীকরণ আরও পরিষ্কার হয়েছে।
এরফলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনি মঞ্চ তৈরি হচ্ছে, যা দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।


















