আমনের বাম্পার ফলনে কলাপাড়ায কৃষকদের উচ্ছ্বাস
- আপডেট সময় : ২৫ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালীর সাগরপারের জনপদ কলাপাড়ার গোটা উপকূলের আমনক্ষেতে বইছে সোনালি রঙের সমারোহ। ধানের ভারে নুইয়ে পড়ছে ছড়াগুলো। আমনক্ষেতে বাতাসে যখন দোল খায়, তখন কৃষকের বুকে শিহরণ জাগে। গাছে হলুদ ও সোনালি ধানের ছড়ার শিহরণে কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠছে উচ্ছলতা। পাকা ধানগুলো নুইয়ে জানাচ্ছে ভালো ফলনের ইঙ্গিত। আমনের বাম্পার ফলন ঘরে তোলায় এখন ব্যস্ত আছেন এখানকার কৃষক। এক কথায়, দক্ষিণের কলাপাড়া উপকূলের সর্বত্র এবছর আমনের বাম্পার ফলনের উজ্জল সম্ভাবনা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। মাঠজুড়ে সর্বত্র হালকা সোনালী কিংবা গাঢ় সোনালী আভা ছড়াচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি, এই মুহূর্তে যদি আর কোন রোগ-বালাই কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে, তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই কলাপাড়ার কৃষকরা আমনের বাম্পার ফলন ঘরে তুলতে পারবেন।
কলাপাড়ায় এবছর আমন আবাদের পুরো মৌসুমে প্রকৃতি ছিল অনুকূলে নয়। ছিল কখনও খরা, কখনও টানা বৃষ্টি। অনেকটা ধকল সইতে হয়েছে কৃষকের। জলাবদ্ধতায় বহু কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। তারপরও এখন পর্যন্ত শতকরা ৯০ ভাগ কৃষকের অভিমত ধান অধিকাংশ পাক ধরেছে। এক তৃতীয়াংশ কাটাও শেষ হয়েছে। যে কয়দিন লাগবে কাটা ও মাড়াইতে, এর মধ্যে আর কোন দূর্যোগ বা রোগবালাই না হলে তারা বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, সর্বত্র বইছে সোনালি রঙের সমারোহ। গাঢ় সোনালী রঙের আস্তরনে ঢেকে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। অনেকেই কাটছেন, মাড়াই করছেন, বিক্রিও করছেন। তবে দাম এক হাজার থেকে ১১০ টাকা মণ থাকায় কৃষকের মন কিছুটা খারাপ। ফলন নিয়ে স্বস্তি থাকলেও দাম নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। এজন্য নির্দিষ্ট একটি দলের নেতা-কর্মীও নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটকে অনেকাংশে দায়ী করছেন অধিকাংশ কৃষক।
কৃষকরা জানালেন, প্রকৃতি এবছর কিছুটা প্রতিকূলে ছিল। বলিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক জানান, তিনি ১২ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত আমন ক্ষেতের যে দৃশ্য তিনি দেখছেন, তাতে ভালো ফলনের আশাবাদ করছেন। দুই-চার দিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে। মিঠাগঞ্জ গ্রামের কৃষক আবুল বাশার জানান, তিনি এবছর ২৬ বিঘা জমি চাষাবাদ করেছেন। একটু মাজরা পোকায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তবে তেমন গুরুতর নয়। তার ভাষ্য, কানি (৮ বিঘা) জমিতে ১২০–১৪০ মণ ধান পাবেন। ছোট বালিয়াতলী গ্রামের আব্দুস সোবাহান জানান, তিনি চার কানি (৪৮ বিঘা) জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। তাঁর দাবি, বাকি সময়ে যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগবালাই না ঘটে, ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারবেন। একই বক্তব্য নীলগঞ্জের ইউনুস মোল্লা, হাবিব গাজীসহ অধিকাংশ কৃষকের। একর প্রতি গড়ে ৫০ মণ ধান ঘরে তোলার সম্ভাবনার কথা জানালেন কুমিরমারা গ্রামের অধিকাংশ চাষী।
উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের শতকরা ৯০ ভাগ কৃষক এবছরও বাম্পার ফলন ঘরে তোলার আশা করছেন। তবে আগামী সপ্তাহের পরে সাগর নদীর পানি লোনা হয়ে যাবে। স্লুইসগেটের সামনে অস্থায়ী বাঁধ না দিতে পারলে লোনা পানির প্লাবনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নীলগঞ্জের কুমিরমারা গ্রামের প্রবীণ কৃষক সুলতান গাজী।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবছর কলাপাড়ায় ৩০,৬৯৭ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। ফলনও এখন পর্যন্ত যা কাটা হয়েছে খুব ভালো মনে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত রোগ-বালাইয়ের তেমন প্রকোপ নেই। হঠাৎ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন পাবেন এখানকার কৃষক। সকল কৃষকের এখন মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা—বাম্পার ফলন যেন ঘরে তুলতে পারেন, এবং রক্ষা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগ-বালাই থেকে।


















