ছারছিনা দরবারে আখেরি মোনাজাতে লাখো মুসল্লি
- আপডেট সময় : ১৯ বার পড়া হয়েছে
উপমহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক কেন্দ্র ছারছীনা দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হলো শতবর্ষের ঐতিহ্যমণ্ডিত ১৩৫তম তিনদিনব্যাপী ঐতিহাসিক ঈছালে ছাওয়াব মাহফিলের আখেরি মোনাজাত। আজ সোমবার বাদ আসর অনুষ্ঠিত এ আখেরি মোনাজাতে লাখো মুসল্লির অশ্রুধারায় দরবারের বিশাল মাঠ পরিণত হয় এক আবেগঘন, রূহানী মাহফিলস্থলে।
নামাজের পূর্বমুহূর্ত থেকেই ভক্ত-মুরিদদের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে মাহফিল প্রাঙ্গণ। মোনাজাতের সময় লাখো মানুষের সমবেত “আমিন” ধ্বনি প্রকম্পিত করে তোলে পুরো এলাকা। দেশ-বিদেশ থেকে আসা মুসল্লিরা কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রভুর ক্ষমা, রহমত, কল্যাণ ও শান্তির প্রার্থনায় মগ্ন হন।
মোনাজাত পরিচালনা করেন দরবার শরীফের পীর ছাহেব কেবলা, আমীরে হিযবুল্লাহ আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমদ হুসাইন (মা.জি.আ.)।
মোনাজাতের পূর্বে তিনি ভক্ত-মুরিদদের উদ্দেশ্যে নসীহত, সৎ উপদেশ, রূহানী দিকনির্দেশনা এবং জিকিরের তালিম প্রদান করেন। তাঁর হৃদয়স্পর্শী বয়ানে মাহফিলস্থল হয়ে ওঠে গভীর আধ্যাত্মিক আবেশে পরিপূর্ণ।
তিনদিনব্যাপী মাহফিলে দেশবরেণ্য আলেম-ওলামা, মুফতি, খতীব, মাশায়েখ এবং ছারছীনা আলিয়া ও দ্বীনিয়া মাদ্রাসার আসাতিজায়ে কেরামগণ কুরআন-হাদিস, তাসাউফ, আকীদা, নৈতিকতা, সমাজ সংস্কার ও দ্বীনি ইলমের নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উপস্থাপন করেন।
প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হয় নামাজ, জিকির-আসকার, ইলমী আলোচনা এবং রূহানী অনুশীলন।
মাহফিল উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাফেলা এসে পৌঁছায় ছারছীনা দরবারে।
রিজার্ভ বাস, লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার, পিকআপ, ট্রাক, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে দলে দলে ভক্তরা সমাবেশে যোগ দেন। অনেক কাফেলাকে পায়ে হেঁটেও পৌঁছাতে দেখা যায় এই পুণ্যময় দরবারে।
মাহফিল নির্বিঘ্ন করতে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশুদ্ধ পানি, খাবার, বিশ্রাম, যানবাহন সমন্বয়সহ সার্বিক সেবায় নিয়োজিত ছিল বিভিন্ন শাখার শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে মুসল্লিদের সেবা দিয়ে মাহফিলকে আরও সুশৃঙ্খল করে তোলে।
রাতের আকাশে চাঁদের আলো, দরবার শরীফের মিনারের নূরানি দৃশ্য, আর হাজারো মানুষের সম্মিলিত জিকির—সব মিলিয়ে ছারছীনা দরবারের পরিবেশ ছিল রূহানী প্রশান্তিতে ভরপুর।
ভক্তদের আনুগত্য, ভালোবাসা ও ধর্মীয় উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে এক অতুলনীয় আধ্যাত্মিক পরিবেশ।
ঐতিহাসিক ঈছালে ছাওয়াব মাহফিল ঘিরে ছারছীনা দরবার পরিণত হয় দেশ-বিদেশের লাখো মানুষের সমাগমস্থলে—রূহানী প্রশান্তি, শান্তি ও বরকতের উৎসস্থল হিসেবে এর খ্যাতি আরও দৃঢ় হয়।
তিনদিনব্যাপী এ ঐতিহাসিক মাহফিল আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলেও, ভক্ত-মুরিদদের হৃদয়ে এর প্রভাব ও রূহানী বার্তা দীর্ঘদিন অম্লান থাকবে।












