সালমানের বয়ান : হাসিনা ও তার কমিশন পরিবার
 
																
								
							
                                - আপডেট সময় : ৪৪৬ বার পড়া হয়েছে
নতুন প্রকল্প হলেই চাই মোটা দাগের কমিশন, বাড়তো প্রকল্প ব্যয়
কমিশন পরিবার গড়ে তোলে হাতিয়ে নিতের মোটা দাগের অর্থ। ফলে বাড়ত প্রকল্প ব্যয়। আর এই কমিশন প্রকল্পের প্রোপ্রাইটার ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমিশন পরিবারের তহবিলে অর্থ না দিয়ে কোন প্রকল্পের যাত্রা করা ছিলো অকল্পনীয়। কমিশন বাণিজ্যের কারণেই নতুন নতুন বের করার তাগিদ দিতেন হাসিনা পরিবারের সদস্যরা। আর এই কমিশন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। সেই সঙ্গে আত্মগোপনে চলে যান মন্ত্রী, এমপি ও উপদেষ্টারা।
এক পর্যায়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাবার সময় সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার হন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তাদের দফায় দফায় পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
জিজ্ঞাসাবাদের মুখে উল্লেখিত বিস্ফোরক তথ্য দেন বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান। শেখ হাসিনার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। সেই সালমানের বয়ানেই বেড়িয়ে আসে চোখ কপালে ওঠার মতো বক্তব্য।
রিমান্ডে সালমান এফ রহমান জানিয়েছেন, নতুন নতুন প্রকল্প বের করার তাগাদা দিতেন শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা। নতুন প্রকল্প মানেই বড় অঙ্কের কমিশন। এর সবকিছুই জানতেন শেখ হাসিনা। তবে তিনি কখনো তাতে না করেননি।
সালমান সেখানে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে এস আলম প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা পাচারের তথ্যও উঠে এসেছে। পাচারের অর্ধেক টাকা শেখ রেহানা ও হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সালমান এফ রহমান।
সালমান এফ রহমানের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এস আলমের মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হওয়া দেড় লাখ কোটি টাকার অর্ধেকই শেখ রেহানা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এসব অনিয়ম হয়। তবে এসব বিষয়ে কেউ কথা বলার সাহস পাননি। কেবল অর্থ পাচার নয়, দেশের ইস্টার্ন রিফাইনারি, চিনিকল হাতিয়ে নিলেও এস আলমের বিষয়ে সবাই নীরব ছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর থেকেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন সালমান এফ রহমান। শেখ পরিবারের অতি লোভের কারণেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটা শোচনীয় হয়েছে। তাতে সব সময়ই সায় দিতেন সরকারের শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্যক্তি। শেখ হাসিনাকে বোঝাতে গিয়ে অনেকে ছিটকে পড়েছেন। কারণ, তিনি সব সময়ই তার নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতেন বলে দাবি করেন সালমান এফ রহমান।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংককে লুটপাটের জন্য বেছে নিয়েছিলেন সালমান এফ রহমান। তাই নিজের পছন্দের মতো চেয়ারম্যান এবং এমডি নিয়োগ দিতেন। পছন্দ না হলে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ব্যাংকে যোগদান করতে দিতেন না। কেউ যোগদান করে ফেললেও অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করতেন। এ ছাড়া তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তাকে বন্ড ছেড়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন। তিনি বারবার অসুস্থতার কথা বলে এড়িয়ে গেছেন বলে দাবি করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দাবি করেন, তাদের কাছে তথ্য এসেছে ‘সুকুক’ বন্ডের মাধ্যমে সালমান তুলে নিয়েছেন ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এই বন্ড কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করেছেন তিনি। প্রথম দিকে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করানো হয়, যাতে ব্যাংকগুলো বন্ডে বিনিয়োগে বাধ্য হয়। তবে সালমান এফ রহমান বারবার নিজের অসুস্থতার দোহাই দিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন।
গত ১৩ আগস্ট রাজধানী ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
 
																			
























