এম সাদ্দাম হোসেন পবন :
দেশের সর্ব বৃহৎ প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠান আনসার ও গ্রাম প্রতি রক্ষা বাহিনী যার মূলমন্ত্র "শান্তি শৃঙ্খলা উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় সর্বত্রে আমরা" এই মটো গন-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে ১৯৯৫ সালে শৃঙ্খলা বাহিনীর মর্যাদা দেয় সরকার।
সারাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একজন ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা পুরুষ ও একজন দলনেত্রী মহিলা দুটি পদে সরকার থেকে সম্মানী ভাতায় তারা কর্মরত। মাসের প্রায় পনেরো কর্ম-দিবস বাহিনীর প্রদত্ত দায়িত্ব পালনের সম্মান স্বরুপ সরকার নির্ধারিত কিছু ভাতা দেয়া হয়। ইউনিয়ন দলনেতা-দলনেত্রীরা গ্রামীন জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও স্থানীয় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় কাজে সহায়ক ভূমিকায় সরকারের জন-কেন্দ্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলস ভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
১৯৭৬ সালের ৫ জানুয়ারী গ্রাম প্রতিরক্ষা দল ভিডিপি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা পুরুষ ও দলনেত্রী মহিলা এই দুটি পদে সম্মানী ভাতার আওতায় স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে তাদের নিয়োগ করে বাহিনী। পরবর্তী কালে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং ২০০৯ সনের স্থানীয় সরকার আইনে এই বাহিনীকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা হিসাবে ক্ষমতা দেয়া হয়।
১৯৮২ সালে ইউনিয়ন দলনেতা ও নেত্রীরা এক'শ আশি টাকা ভাতায় কাজ শুরু করে বিএনপি শাসনামলে আড়াই'শ থেকে ২০০৫ সালে তিন'শ ২৫ টাকা এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তা বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা সম্মানী ভাতায় স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে দেশ ও জাতির কল্যানে কাজ করছে। দেশের অন্যান্য সরকারি সংস্থার অস্থায়ী জনবল রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণীদের মানবিকতায় স্থায়ী হলেও একমাত্র ভিডিপি ইউনিয়ন দলনেতা-নেত্রীদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। রাষ্ট্রের অন্য কোন সংস্থার দীর্ঘ সময়কালে স্বেচ্ছাসেবায় এতে বড় ত্যাগের ইতিহাস নেই অথচ ভিডিপি সদস্যদের ত্যাগের ইতিহাস গৌরবময়।
একজন ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা ও নেত্রীর মাসে পনেরো কর্ম দিবস বাহিনীর প্রদত্ত দায়িত্বের মধ্যে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ে দু-দিন মাসিক সমন্বয় সভা,ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় সভা, স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা,দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভা,স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সভায় উপস্থিতসহ মাসে তাদের প্রত্যেককে মাসের পনেরো কর্মদিবস সরকারী কাজে কর্মরত থাকতে হয়। এর বিনিময়ে সরকার প্রদত্ত সম্মানী ভাতায় বর্তমান বাজারমূল্যে একটি পরিবারের তিন দিনের ভরণপোষণের ব্যয়ের সমমান। একজন ভিডিপি ইউনিয়ন দলনেতা-নেত্রী সমাজের মানুষের কল্যানে সামাজিক দায়বদ্ধতায় কাজ করছে। বাংলাদেশে শতভাগ দারিদ্র্যতা নিরসনের ক্ষেত্রে এই পরিবারগুলোর উন্নয়ন আনা প্রয়োজন।
ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা-নেত্রীর পরিবারের সদস্যরা ঈদের আনন্দে স্বাচ্ছন্দ্যের সুযোগ পায়নি। ছেলে-মেয়েদের নতুন কাপড় বা ভাল খাবারের ব্যবস্থা ওই সম্মানী ভাতার অর্থে কখনও সম্ভব হয়ে উঠে না। এতো কষ্টের পরেও ইউনিয়ন দলনেতা-নেত্রীদের আক্ষেপ নেই তবে মানবিক প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টিতে ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা-নেত্রীদের ত্যাগের স্বীকৃতি স্বরুপ অবসরে বার্ধক্যের এই চরম বিপদগ্রস্ত সময়ে জীবিকার স্বচ্ছলতায় এক কালিন অনুদান পাওয়ার আকুতি নিয়েই তারা পথ চেয়ে আছে।
আনসার ও ভিডিপিকে যুগোপযোগী করার জন্য বয়স ও শারিরীক গঠন বিবেচনায় উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা ও নেত্রীদের অব্যাহতি প্রদানের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বাহিনীর মাঠ কর্মকর্তারা। ২৫ বছর কর্মরত বা ৫৯ বছর বয়সসীমায় অব্যাহতি নিচ্ছে ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা-নেত্রীরা। দীর্ঘ সময় কর্মরত থাকার পরে শুন্য হাতেই তাদের বিদায় নিতে হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা শেখ ফরিদ জানান- ভিডিপি গঠনের পর থেকে সরকার প্রদত্ত বাহিনীর দায়িত্ব নিরলস ভাবে পালন করে যাচ্ছি। সরকারি অন্য সব দফতরের ভাতাভোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হলেও বঞ্চিত ভিডিপি ইউনিয়ন দলনেতা-নেত্রীদের আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগেনি।
এই প্রতিবেদকের সাথে কথোপকথনের সময়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বলেন- কেউ ৩০ বছর থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত এই বাহিনীতে এখনও কর্মরত আছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই খালি হাতে অবসর বা বয়সের কারনে অব্যাহতি নিচ্ছেন অথচ বর্ধক্যের এই চরম বিপদগ্রস্ত কষ্টের সময়ে জীবিকায় অনিশ্চয়তা বা পরিবারের অবহেলায় থাকতে হবে।
আনসার ও ভিডিপি'র রংপুর রেঞ্জ পরিচালক মো. আব্দুস ছামাদ গনমুক্তি কে বলেন-সুশৃঙ্খল বৃহৎ এই বাহিনীতে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা-নেত্রীদের সাথে কাজ করার সুবাদে অনেক অভিজ্ঞতা অন্বেষণ হয়েছে। দেশ ও জাতির কল্যানে ভিডিপি সদস্যরা অধিক আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে। ভিডিপি ইউনিয়ন দলনেতা-নেত্রীদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি এবং অবসর সংক্রান্ত এক কালিন অনুদানের বিষয়টি বাহিনীর নীতি-নির্ধারণী মহলের বিশেষ বিবেচনায় রয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিচালক কামরুন নাহার গনমুক্তির প্রতিবেদককে বলেন-আনসার ও ভিডিপি'র আধুনিকায়নে সরকার ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন এবং এই বাহিনীকে সময়ের সাথে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্য সরকার সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করছেন। ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা-নেত্রীদের সমস্যা সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে বাহিনীর সদর দফতর যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।
এ জাতীয় আরো খবর..