স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগ একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা। কিডনি রোগের ব্যাপক প্রকোপ, এ রোগের মারাত্বক পরিণতি, অতিরিক্ত চিকিৎসার খরচ এবং চিকিৎসার ব্যয় সাধ্যাতীত সিংহভাগ রোগীই প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করে। কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা: এম এ সামাদ গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে “বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৩” উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দেশের কিডনি বিষয়ক বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পাস) এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব মন্তব্য করেন। ক্যাম্পাসের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, কিডনি রোগী দূর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুকিঁতে থাকে। আমরা জানি, কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। সারা বিশ্বে ৮৫ কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত।
বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক কিডনি রোগী। প্রতি বছর ৩৫-৪০ হাজার লোক কিডনি সম্পূর্ণ বিকলের শিকার বাংলাদেশে। আরও ১৫/২০ হাজার আকস্মিক কিডনি বিকল হয়। তাদের বেঁেচ থাকার জন্য ডায়লাইসিস ও কিডনি সংযোজন প্রয়োজন হয়। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে শতকরা ১০জন এর ব্যয় সংকুলান করতে পারে। চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য নিশ্চত করতে হলে ডায়লাইসিস ও কিডনি সংযোজন বীমার আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো: টিটো মিয়া বলেন, প্রত্যাশিত দূর্যোগের সময় নন কমিউনিকেবল রোগীরা সম্মুখীন হয়ে থাকে তাই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে দূর্যোগের সময় কিভাবে আমরা কিডনি বিকল রোগী বা নন কমিউনিকেবল রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারি। এর জন্য সরকারকেই মূখ্য বা নেতৃত্বের ভুমিকায় অবর্তীণ হতে হবে। হার্ট ফেইলিওর (রিহ্যাব ও প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজি) ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো: হারিসুল হক বলেন, অনাকাঙ্খিত স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতেনীতি নির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে হবে।
অসংক্রামক ব্যাধিসমূহ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি নতুন রোগ শনাক্তকরণ এবং কিডনি রোগসহ হৃদরোগ, ডায়বেটিকস, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সকলকে নিয়ে সমন্বিত কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। সরকারের উচিত হবে আপংকালীন সময়ে এসব রোগীকে চিকিৎসা পৌছে দেয়ার প্লান প্রণয়ন এবং রোগীদের উচিত হবে তাদের হাতের কাছে সর্বদা একটা কিট সংরক্ষণ করা যাতে প্রয়োজনীয় ঔয়ধপত্রের পাশাপাশি খাবারও রাখা যায়। ক্যাম্পাসের নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন বলেন, ক্যাম্পাস কিডনি রোগ-প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত সচেতনতার বাণী প্রচার করে যাচ্ছে।
আমরা যদি কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলি তাহলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সরকারি ও বেসরকারী পর্যায় থেকে যদি সকলে এগিয়ে আসে তা হলে এই রোগ নিরাময় অনেকটাই সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা করে নয় বরং প্রতিরোধ করাই এ রোগের প্রাদুর্ভাব প্রশমন করা হবে আর তার জন্য সচেতনতাই একমাত্র উপায়। কিডনি রোগ-প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা প্রশংসা করেন এবং বিত্তবানদের এমন মহৎকাজে সহযোগীতার জন্য আহবান করেন। গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার এর মহাপরিচালক মো: মিজানুর রহমান। ফায়ারসার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এর সাবেক মহাপরিচালক আলি আহম্মেদ খান, কিডনি ফাউন্ডেশন এর সভাপতি হারুন-উর-রশিদ, রেনাল এসোসিয়েশন এর সভাপতি ডা. নিজাম উদ্দিন চৌধূরী, বাংলাদেশ বিশিষ্ট ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।