×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৩-১৩
  • ৭২ বার পঠিত
সাঈদ আহাম্মেদ খান : বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে দেশে বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে শুধু অবকাঠামো খাতে আড়াই হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলার। গতকাল রোববার  বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’ এর দ্বিতীয় দিনে দেশের নীতি নির্ধারকরা বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

এদিন সকাল ১০টা থেকে বিজনেস সামিটে একের পর এক প্লেনারি ও প্যারালাল সেশন শুরু হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, নীতিনির্ধারকসহ বিদেশ থেকে আগত উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা অংশ নেন।
এদিন সকালে বিজনেস সামিট শুরু হয় একটি প্লেনারি সেশন দিয়ে। ‘বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এই অধিবেশনে জানানো হয়, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ সবুজ বিনিয়োগে সুযোগ রয়েছে দেড় হাজার কোটি ডলারের। এসব বিনিয়োগ টেকসই করতে ইতোমধ্যে দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগ সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩৪টি সংস্থার দেড় শতাধিক সেবা সহজীকরণ করা হয়েছে। যেখানে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ওয়ান স্টপ সার্ভিস পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে বাংলাদেশে। গত ১৩ থেকে ১৪ বছর ধরে দেশের প্রবৃদ্ধির ধারা বেশ ইতিবাচক। দারিদ্রের হার কমেছে, নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্য এসেছে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া কঠোর নীতির মাধ্যমে বন্ধ করা হয়েছে দুর্নীতি ও অর্থপাচার। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে এরই মধ্যে বিনিয়োগ করেছে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। আমাদের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজও এগিয়েছে। এরই মধ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে বিডা। ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা এসেছে। ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে কাজ করছে দেশ। এ বিনিয়োগে আমাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এফবিসিসিআই। সামিটের আন্তর্জাতিক মিডিয়া পার্টনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি হামীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বলেন, বাংলাদেশে ভালো জব মার্কেট আছে, যেটা অন্য দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী। ইকোনমিক জোনে ননস্টপ সার্ভিস শুরু হয়েছে। সুতরাং আপনারা (বিদেশি) বাংলাদেশে নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বিনিয়োগ-ব্যবসা সহজ করতে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সেতুসহ আরও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ সবুজ কারখানা এখন বাংলাদেশে। আমাদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ রয়েছে। এ সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। সেশনে বাংলাদেশের মূল খাতগুলোতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেগুলো তুলে ধরা হয়। এতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়কমন্ত্রী অ্যান-ম্যারি ট্রেভেলিয়ান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, সংগঠনটির সাবেক সভাপতি একে আজাদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াঙ্গুন করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সুং, আসিয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আঞ্চলিক সিইও তাকেশি মামিয়াসহ আরও কয়েকজন বিদেশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অংশ নেন।

এরপর দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, পোশাক ও বস্ত্র, খাদ্যপণ্য, অবকাঠামো, ডিজিটাল ইকোনমি, এনার্জি সিকিউরিটি, কৃষি খাত এবং জাপান-বাংলাদেশ ব্যবসা সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি প্লেনারি এবং পেরালাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং বিনিয়োগের প্রত্যাশা করেন।
এর আগে, শনিবার বেলা ১১টার দিকে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট- ২০২৩’ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতিনিধি, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন আগামী ১৩ মার্চ পর্যন্ত চলবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত নিয়ে ১৭টি সেমিনার ও ৩টি প্লেনারি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ৭টি দেশের মন্ত্রী এবং ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী, বিশ্বের ১৭টি দেশের দুই শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী নেতারা সম্মেলনে অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে অনেকেই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।

এই সামিটের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন, যোগাযোগ, পোশাক ও বস্ত্র, হালকা প্রকৌশল, কৃষি ও স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো খাতে বিপুল বিদেশি বিনিয়োগের আশা করা হচ্ছে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat