# আমেরিকায় সাবেক কোন প্রেসিডেন্টের প্রথম সাজা
# জেলে যেতে হবে না
আজাদ রহমান, নিউইয়র্ক : আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (৭৬) বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের ম্যানগাটনের একটি ফেডারেল আদালত ধর্ষণ মামলার রায়ে তাকে ‘যৌন নীপিড়ক’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন এবং মানহানিকর বলে গতকাল রায় দিয়েছেন। তবে তাকে ধর্ষক না বলে অর্থ দন্ড দিয়েছেন ৫ মিলিয়ন ডলার। যা প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। এই অর্থ অভিযোগকারী লেখিকা জ্যান ক্যারলকে (৭৯) দিতে হবে ট্রাম্পের। তবে ট্রাম্পকে কোন জেল দেওয়া হয়নি বলে বিচারক জানান। আমেরিকার কোন সাবেক প্রেসিডেন্টের এ ধরনের সাজা এই প্রথম। এক ডজনেরও বেশি নারী বিভিন্ন সময় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিপিড়নের অভিযোগ আনেন। গতকাল নিউইয়র্কসহ আমেরিকার মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খবর হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। ক্রিমিনাল কোর্টে ধর্ষণ মামলা হলে তাকে জেলে যেতে হতো বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
১৯৯০ দশকে নিউইয়র্কের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ম্যাগাজিনের কলামিস্ট ই জ্যান ক্যারল সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হন। জুরি বোর্ডের কাছে সেই অভিযোগ তোলা হয়। কিন্তু ট্রাম্পকে বার্গডর্ফ গুডম্যানের ড্রেসিংরুমে জ্যান ক্যারলকে ধর্ষণের জন্য দায়ী করা হয়নি, তবে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। পাশাপাশি লেখকের অভিযোগকে মিথ্যে বলে দাবি করার জন্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়। এই প্রথম ট্রাম্প যৌন নিপীড়নের জন্য আইনিভাবে দায়ী হলেন। ম্যানহাটনের জুরি ট্রাম্পকে ৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার ছয়জন পুরুষ ও তিনজন নারীর জুরি বোর্ড তিন ঘণ্টারও কম সময়ের আলোচনার পর তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছেন। রায়ের পরে ক্যারল একটি লিখিত বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘গোটা বিশ্ব অবশেষে সত্যটি জানে। এই বিজয় শুধু আমার জন্য নয়, প্রতিটি নারীর জন্য যারা ভুক্তভোগী।’ যেহেতু বিচার ফৌজদারি না হয়ে দেওয়ানী আদালতে হয়েছিল, তাই ট্রাম্পকে যৌন অপরাধী হিসাবে নিবন্ধন করা হবে না। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট- যিনি ক্যারলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, ম্যানহাটন ফেডারেল আদালতে দুই সপ্তাহের দেওয়ানী বিচারে অংশ নেননি। রায় পড়ার সময় ৭৯ বছর বয়সী ক্যারল তার আইনজীবীদের হাত ধরেছিলেন।
বিচারকরা যখন তাকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিচ্ছিলেন শুনে তার মুখের হাসি ক্রমেই চওড়া হচ্ছিলো। ট্রাম্পের আইনজীবী জো ট্যাকোপিনা বিচার শেষে হাত তুলে ক্যারলকে বলেন ‘অভিনন্দন ও শুভকামনা’। বাদী পক্ষের আইনজীবী রবার্টা কাপলান এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি শুধুমাত্র ই জিন ক্যারলের জন্য নয়, এটি গণতন্ত্রের জয়।‘ রায়ের পরে, ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ বড় অক্ষরে পোস্ট করেছেন, ‘আমি জানি না এই নারী কে। এই রায় অপমানজনক।’ দেওয়ানী মামলায় প্রমাণের বিষয়টি ফৌজদারি মামলার তুলনায় কম, অর্থাৎ বিচারকদের শুধুমাত্র এটি খুঁজে বের করার প্রয়োজন ছিল যে ট্রাম্প ক্যারলকে আক্রমণ করেছিলেন কিনা। যদিও বিচারকরা ট্রাম্পকে যৌন নিপীড়ন এবং ক্যারলের মানহানির জন্য দায়ী বলে মনে করেন, তবে ধর্ষণের জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেননি তাঁরা ।
ক্যারল এবং ট্রাম্পের অ্যাটর্নিদের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ তর্ক -বিতর্ক দেখা গেছে। ক্যারলের আইনি দল ১১ জন সাক্ষীকে ডেকে তার দাবির সত্যতা প্রমাণ করে ট্রাম্প তাকে ১৯৯৬ সালে বিলাসবহুল দোকানের অন্তর্বাস বিভাগে লাঞ্ছিত করেছিলেন। সাক্ষীদের মধ্যে দু’জন নারীও ছিলেন যারা জানিয়েছেন, কয়েক দশক আগে তাঁরাও ট্রাম্পের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। একজন নারী বিচারকদের বলেছিলেন যে ট্রাম্প ১৯৭০ এর দশকে একটি ফ্লাইটের মধ্যে তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। অন্য একজন নারী বলেছেন যে ট্রাম্প তাকে জোরপূর্বক চুম্বন করেছিলেন যখন তিনি ২০০৫ সালে লেখা একটি নিবন্ধের জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। ক্যারলের দুই দীর্ঘদিনের বন্ধুও সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দেবার পর যেভাবে ট্রমার মধ্যে দিয়ে এক একটি দিন কাটিয়েছেন সে কথাও বিচারকদের জানান ক্যারল। ট্রাম্প এদিন কোনও সাক্ষীকে ডাকেননি এবং শুধুমাত্র একটি জবানবন্দির ভিডিওতে উপস্থিত ছিলেন যা বিচারকদের জন্য চালানো হয়েছিল। সেখানে তিনি ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেন। গোটা অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলেও তিনি উড়িয়ে দেন। ক্যারলের মামলায় আরও যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে ২০২২ সালের অক্টোবরে একটি পোস্টে ক্যারলের মানহানি করেছিলেন। কারণ সামাজিক মাধ্যমে তিনি ক্যারলের দাবিগুলিকে সম্পূর্ণ ভুল এবং প্রতারণা এবং মিথ্যা বলে অভিহিত করেছিলেন। ক্যারলের আইনি দল যুক্তি দিয়েছিলেন যে ট্রাম্প জবানবন্দির সময় নিজেই নিজের সাক্ষী হিসাবে আবির্ভুত হন। অ্যাকসেস হলিউড টেপ নামে পরিচিত এবং ২০১৬ সালে ফাঁস হওয়া অডিও বিচারকদের সামনে প্রস্তুত করা হয় যেখানে ট্রাম্প নারীদের সম্ভ্রমহানি করার চেষ্টা করেন। ২০২২ সালে নিউইয়র্ক অ্যাডাল্ট সারভাইভারস অ্যাক্ট পাস করার পর প্রাক্তন এলি ম্যাগাজিনের কলামিস্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা আনতে সক্ষম হন। আইন মোতাবেক ভুক্তভোগীরা যৌন নিপীড়নের মামলা দায়ের করার জন্য এক বছরের সময়কালের অনুমতি পান।