মো. হৃদয় হোসেন, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডসস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিউল্যাহ সড়কের দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ গত দেড় যুগেও হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিরাটকার গর্ত আর বর্ষার কাদা পানিতে বিধ্বস্ত এখানকার জনজীবন। রুগ্ন ব্যাক্তি,নারী,বৃদ্ধ কিংবা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী- সড়কটি নিয়ে সবাই আছেন বেকায়দায়। গত মঙ্গলবার (৮ই আগষ্ট) সড়কটির গর্তে রিকশা উল্টে আহত হন আবুল হোসেন (৬২) ও চালক সাকিব হাসান (২২) নামে দুই ব্যাক্তি। ষাটোর্ধ আবুল হোসেন পা ও কোমরে আঘাত পেয়ে ঠাঁই নিয়েছেন বিছানায়। ব্যাথার দরুন তার অবস্থা বড়ই শোচনীয়। শুধু আবুল হোসেন নন এর আগে গত জুলাইয়ের ১৪ তারিখ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের পুকুরে পড়ে সিএনজি চালিত একটি যাত্রীবাহী অটোরিকশা। পুকুর পাড়ের নারিকেল গাছে ঠেঁকে সে যাত্রায় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও সড়কটি নিয়ে কমেনি স্থানীয় জনমানুষের শঙ্কা। সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই সড়কটি নির্মাণের পর হয়নি ছোটো-বড়ো কোনো সংস্কার কাজ। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে সড়কটি করা হলেও পরে সংস্কারের জন্য গত দেড়যুগেও জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান, স্বতন্ত্র কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল কিংবা বর্তমান সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন (এম,পি) কারো নজরে পড়েনি বীর মুক্তিযোদ্ধার নামের এই সড়কটি।
সড়কটির অবস্থান কেরোয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সদকাখোলা এলাকায়। দৈর্ঘ্যে এটি প্রায় ২ কিলোমিটার। ২০০৪ সালের দিকে এই সড়কটির ১ কিলোমিটার এবং ২০২০ সালে আরো এক কিলোমিটার হয়ে মোট ২ কিলোমিটারের দীর্ঘ রাস্তায় রুপ নিয়েছে। রায়পুর পৌর সভার পৌর ৭নং ওয়ার্ডের পীর ফয়জুল্লাহ্ সড়কের সাথে এর সংযোগ থাকলেও দেড় যুগ আগে করা রাস্তাটি রয়েছে বেহাল দশায়। অর্থাৎ আগের ও পরের অংশ ঠিক থাকলেও মাঝের অংশের অবস্থা রুপ নিয়েছে- ভেতরকার সদরঘাটের মতো। প্রাক্তন সংসদ সদস্যদের কাছে বেশ কয়েকবার রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানানো হলেও নেওয়া হয়নি দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ- এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বারবার আশ্বাস দিলেও সড়কটি নিয়ে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহন করেননি এমন অভিযোগও করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘ দুই কিলোমিটার এই সড়কটি প্রায় ৫ হাজার মানুষ নিজেদের চলাচলের রাস্তা হিসেবে করছেন ব্যবহার। তবে এই সড়কটির দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তা ২০২০ সালে দেড়যুগ পর করে মোট ২ কিলোমিটার করা হলেও বাকি আরো এক কিলোমিটারের কাজ আজও করা হয়নি। ফলে একদিকে বিরাটাকার গর্তের ১ কিলোমিটার এবং কাদামাটির ১ কিলোমিটার ও মাঝখানের ভালো এক কিলোমিটারসহ মোট ৩ কিলোমিটার রাস্তার জীর্ণশীর্ণ দশা নিয়ে চলছে এখানকার মানুষের জীবন।
স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন আবু (৪৫) বলেন, সড়কটি দেড়যুগ আগে করা হয়েছে। পরে কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। ২০২০ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিডিআর সফিউল্যার নামে সড়কটি নামকরণ করে আরো ১ কিলোমিটার রাস্তার কাজ একই বছর করা হলেও মাঝের অংশের কাজ হয়নি। রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানাই।
আবদুর রহিম (৫০) নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, এক অংশ ভাঙা আরেক অংশ কাঁচা সড়ক নিয়ে চলছে আমাদের জীবন। আর কত দিন সহ্য করবো রাস্তার কষ্ট-বলতে পারেন কি?- না আবদুর রহিমের এমন প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে নেই।
স্থানীয় রিকশা চালক হারুনর রশীদ (৪০) বলেন, যাত্রী পারাপারের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সড়কটির বেহাল দশায় দুদিন পর পরই নষ্ট হয় যন্ত্রাংশ। সড়কটির প্রসঙ্গে ওয়ার্ডটির ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম শিপন মোল্লা বলেন, আমি সড়কটি সম্পর্কে অবগত আছি। দুর্ভোগ চরমে। বর্ষায় চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে কেরোয়া ইউপির চেয়ারম্যান শাহিনুর বেগম রেখা বলেন, সড়কটি স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা বিডিআর সফিউল্লাহ সাহেবের নামে নামকরণ করে আরো ১ কিলোমিটার সড়ক সংযুক্ত করা হয়েছে ২০২০ সালে। সড়কটির পুর্বের অংশে খানাখন্দ রয়েছে। বিষয়টি এ আসনের সংসদ সদস্যকে জানাবো।
এ জাতীয় আরো খবর..