জাকের আলী শুভ : করোনার কারনে দুই বছর পর আবার কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়া আঁখড়া বাড়ীতে শুরু হচ্ছে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তিন দিন ব্যাপী দোল উৎসব ও সাধুসঙ্গ। এ উপলক্ষ্যে মাজার প্রাঙ্গনে আসতে শুরু করেছে ভক্ত সাধু, লালন অনুসারী, আর দর্শনার্থীরা। এবার ১৫ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ তিনদিন ব্যাপী উৎসবকে কেন্দ্র করে লালন আঁখড়াবাড়িতে ইতিমধ্যেই মাজারকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। ভেতরে বসেছে বাউল ফকিরদের আসর আর কালি নদীর পাড়ে বসেছে বিশাল মেলা ও লালন মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে আলোচনা সভার এবং রাতভর লালন গানের জন্য। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন।
‘ভবে মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার’। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ । সোনার মানুষ হওয়া আর মনের মানুষের সন্ধান পাওয়ার জন্য বাউলদের সহজিয়া ধর্ম সাধণা। শুদ্ধ আত্মায় মুক্তি এমন বিশ্বাস ধারণ করা বাউলরা মনে করেন, সাধুসঙ্গ করে আত্মাকে শুদ্ধ করা যায়। আর আত্মাশুদ্ধি হলেই মনের মানুষকে পাওয়া যায়। সাধুসঙ্গে গুরু প্রদত্ত জ্ঞান দিয়ে সহজিয়া মতের সাধনায় সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়ার চুড়ান্ত পর্যায়। ফকির লালন শাহ্ তার জীবনদর্শায় তার শিষ্যদের নিয়ে সাধুসঙ্গ করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর দোলপূর্ণিমার তীথিতে বাউল মতালম্বীরা সাধুসঙ্গ করে আসছেন। দৌলপূর্ণিমায় আকাশ যখন আলোকিত তখন গোষ্ঠগানের মধ্য দিয়ে সাধুসঙ্গ শুরু হয়। চোখে চোখে ভাবের আদান প্রদান, গুরু শিষ্যের ভাববিনিমিয় আর প্রার্থণা দিয়ে চলে সাধুসঙ্গ।
ভাববাদী লৌকিক ধর্মের স্রষ্টা বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই। তাঁর জীবদ্দশায় এমন ফাল্গুনের জোৎস্নালোকের রাতে বসতো দোলপুর্ণিমা উপলক্ষে সাধুসঙ্গ। এই উৎসবের একটা ভিত্তি হচ্ছে ঠিক এমনি এক দোলের দিনে লালন সাঁইজির আর্বিভাব ঘটেছিলো ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর ঘাটে। সাঁইজী তার জীবদ্দশায় এই সাধুসঙ্গ করতেন নিজে। সাঁইজির নিজের ঘর, দেলবার সাঁই, চৌধুরী সাঁই, পাঞ্জু সাঁই ও মহিম সাঁইজির এক ঘর নিয়ে সাঁইজির সাধু সঙ্গের ধারা অনুসারে তার ভক্ত ও অনুসারীগণ এই ধারায় প্রতিবছরই দোলপূর্নীমাতে সাধুসঙ্গ করতেন। সেই ভাববাদি পরম্পরা চলছে এখনও। তবে করোনার কারনে গত দুই বছর সকল ধরনের উৎসব ও সাধুসঙ্গ বন্ধ থাকায় ভক্ত ও অনুসারীদের মাঝে আক্ষেপ থাকলেও এবার তিন দিন ব্যাপী দোলৎসব ও সাধুসঙ্গ আয়োজন হওয়ায় খুশি তারা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সহযোগীতায় ও লালন একাডেমীর আয়োজনে উৎসব সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে।
ভক্তবৃন্দসহ জনসাধারনের নিরাপত্তা এবং অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ন ও নির্বিঘ্ন করার জন্য জেলাপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন যৌথ ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। লালন মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত দোকানীরা পসরা সাজাতে এখন দিন-রাত কাজ করছে কালী নদীর বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে।
লালনের মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতা সামগ্রিকভাবে প্রেরণা জুগিয়েছে ভক্তদের মাঝে। পাশাপাশি আধ্যাত্ম-সাধনার নিগুড় পদ্ধতি গুরু-শিষ্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর গানের মাধ্যমে। তিনদিনের আয়োজনে এমন কথা ও অজানা তথ্য যেন জানতে পারে ভক্তরা। পাশাপাশি উৎসবে মানুষের মিলন-মেলা আরও জমবে এমনটিই প্রত্যাশা সকলের।
এ জাতীয় আরো খবর..