স্টাফ রিপোর্টার : শীতের আগমনী বার্তা। শুষ্কতায় বাতাসে বাড়ছে দূষণ, ধূলিকণা। কমছে আর্দ্রতা। আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জনজীবনে। ডেঙ্গুর প্রকোপ একটু কমলেও নির্মূল হয়নি এখনো। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে জ্বর, ঠান্ডা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। হাসপাতালে ছোটা রোগীদের মধ্যে বয়স্ক রোগীই বেশি। শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগের পাশাপাশি হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগ নিয়েও ছুটছে হাসপাতালে। রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ঠান্ডাজনিত জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার রোগীই বেশি।
গতকাল শিশু হাসপাতালে সকাল থেকেই ছিল দীর্ঘ লাইন। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুপুরে ১২টার দিকেও দেখা যায় বহির্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কমপক্ষে ৫০ জন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ বাড়তি রোগী আসছে প্রতিদিন। শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, শিশুকে কোলে নিয়ে কিংবা বেঞ্চে বসিয়ে রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মা-বাবা কিংবা স্বজনরা। অনেকে বসার জায়গা না পেয়ে মেঝেতেও বসেছেন। জরুরি বিভাগের ১৩৫ নম্বর কক্ষে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন তিনজন চিকিৎসক ও একজন নার্স। শ্বাসজনিত সমস্যা নিয়ে আসা একমাস বয়সী শিশু সাইদুরের মা বলেন, রাত থেকে কান্নাকাটি করছে সাইদুর। নিশ্বাস নিতে পারছিল না। সকালে গলায় আওয়াজ হচ্ছিল আর সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এরপর দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসছি।
হাসপাতালের ইমার্জেন্সি অবজারভেশন অ্যান্ড রেফারেল ওয়ার্ডের সবকয়টি বিছানা শিশু রোগীতে পরিপূর্ণ। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্সরা জানান, ভর্তি বেশির ভাগ শিশুই ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে এসেছে। এ সময় ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন ডা. মো. আমজাদ। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীত মৌসুম আসার ফলে নতুন ঋতুতে শিশুদের খাপ খাওয়াতে একটু সমস্যা হয়। এছাড়া পরিবেশ দূষণের কারণে নানারকম ভাইরাল সমস্যাও অনেক বেড়েছে। এছাড়া হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশু আসছে।
ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে চিকিৎসক ডা. সাহেদ আব্দুল্লাহ বলেন, শীতের শুরুতে প্রতিবারই ঠান্ডাজনিত সমস্যার রোগী বাড়ে। সামনে শীত বাড়লে রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। এই মুহূর্তে বেশিরভাগ বয়স্ক রোগী পাচ্ছি। যারা দীর্ঘদিন নানা অসুখে ভুগছেন। অনেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাদের মৌসুমি রোগবালাই বেশি হচ্ছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। যাদের গুরুতর নিউমোনিয়া হচ্ছে, যারা বয়স্ক, যাদের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, শ্বাসকষ্ট বেশি থাকে তাদের ভর্তি করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, শীতকাল এলে নানা ধরনের ঠান্ডাজনিত রোগ হয়। এর মধ্যে বয়স্ক, শিশু ও দীর্ঘদিন রোগে ভোগা মানুষ বেশি অসুখে ভোগে। এছাড়া যাদের শ্বাসজনিত রোগ অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ আছে তাদের শীতকালে সমস্যা বাড়ে। তিনি বলেন, বাতাসের সঙ্গে অক্সিজেন শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছায়।
আর এ বাতাসের সঙ্গে রোগ-জীবাণু, ধুলাবালি ঢুকে শ্বাসনালীর সংক্রমণ করে। বিশেষ করে এ সমস্যাগুলো শীতকালে বেশি হওয়ার কারণ তখন ফুসফুসের শ্বাসনালীতে আর্দ্রতা কমে যায়। এতে ফুসফুসে ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের রোগ বাড়ে। এসময় শ্বাসজনিত রোগ-বালাই থেকে বাঁচতে বেশি পানি পান করার পরামর্শ দেন তিনি। এতে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকবে। শরীরের রোগ-জীবাণু বের হয়ে যাবে। এছাড়া তাজা ফলমূল খেতে পারেন সুস্থ থাকতে। প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা কায়িক শ্রম করতে হবে। যারা শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হার্টের রোগ অথবা কিডনি রোগে ভুগছেন তাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়া প্রতিষেধক টিকা নিতে হবে। তাহলে শীতে তারা সুস্থ থাকবেন- জানান ডা. মোশাররফ।
এ জাতীয় আরো খবর..