×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-১১-১৯
  • ৬৩ বার পঠিত
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের ৪২%-এর বেশি তরুণ-তরুণী দেশের বাইরে চলে যেতে চান। আবার ৭০%-এর বেশি তরুণ মনে করেন, দেশেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে)-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)-এর করা ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে ২০২৩ শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষকরা বলছেন, এই জরিপে ইতিবাচক চিত্রও পাওয়া গেছে। ৭০%-এর বেশি তরুণ মনে করেন এই দেশেই তাদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। তরুণদের একটি অংশ দেশের বাইরে চলে যেতে চাইলেও শতকরা প্রায় ৬০% যে দেশেই থাকতে চান, সেটাও একটা ইতিবাচক দিক বলে তারা মনে করেন। দেশের সব বিভাগের ১৬-৩৫ বছর বয়সী ৫,৬০৯ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর ফেসবুকের মাধ্যমে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৮.৬% তরুণ-তরুণী মনে করেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা কর্মসংস্থান বা ব্যবসায়িক উদ্যোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়ক নয়। উত্তরদাতাদের ৫৫% মনে করেন, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ নয়। ৫৭% মনে করেন, গত পাঁচ বছরে দেশে বিচার ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে। ৮৮.৮% তরুণ-তরুণী দুর্নীতিকে দেশের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। আর ৬৭.৩% বেকারত্বকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫০.৫% মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটকে প্রধান এই সময়ের চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ৬১.৮% উত্তরদাতার মতে, তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মূল্যস্ফীতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আর ৪০% উত্তরদাতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে চাকরির নিরাপত্তাহীনতা। ৭৩.৪% জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। জরিপে দেখা  গেছে, ৭১.৫% তরুণ-তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো পাবলিক প্ল্যাটফর্মে মত প্রকাশকে অনিরাপদ মনে করেন। আর ১৮ বছরের বেশি যাদের বয়স, তাদের ৭২% তরুণ-তরুণী আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া ৪২.৪% তরুণ-তরুণী বিদেশে যেতে চান এবং যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তবে ৫৭% তরুণ-তরুণী এখনো বাংলাদেশে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। আর অবস্থার পরিবর্তন হলে দেশের বাইরে যেতে চাওয়া  ৮৫.৫% আবার দেশে ফিরে আসতে চান। জরিপের প্রধান গবেষক হোসেন মোহাম্মদ ওমর খাইয়ুম বলেন, তরুণদের মধ্যে যে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা, তার কারণ পুরো জরিপেই প্রতিফলিত হয়েছে। তারা নিরাপত্তা, পেশাগত ও আর্থিক উন্নয়নকে বিবেচনায় নিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা গণতন্ত্রের যে অবনতি, তা বিবেচনা করেছেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব, দুর্নীতি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং সার্বিকভাবে কাজ ও প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্টের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দেশের বাইরে যেতে চান তারা। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের গবেষণা পরিচালক ড. এম সানজীব হোসেন বলেন, তাদের যেমন উদ্বেগ আছে, তেমনি তাদের দেশ নিয়ে অনেক আশাও আছে। প্রায় ৬০% তরুণ-তরুণী তো দেশেই থাকতে চান। ৭০%-এর বেশি মনে করেন, দেশেই তার ব্যক্তিগত উন্নতি হবে। প্রায় ৭০% সামনের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। হতাশার জায়গা আছে। তবে আশার জায়গাও আছে। তার ভাষ্য, জরিপে যেসব হতাশার জায়গা উঠে এসেছে তা নিয়ে র্রা ও প্রকৃত সুশীলদের কাজ করতে হবে। তরুণদের দেশ প্রেমের কোনো ঘটতি নেই।

সেটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ মনে বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ, তাতে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তরুণদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা থাকবে। এটা বন্ধ হবে না। পৃথিবীর গড় জন ঘনত্বে ২৪ গুণ বেশি ঘনত্ব বাংলাদেশে। পাশের দেশেও এই প্রবণতা ব্যাপক। তারা দেশের বাইরে গেলেও যেন দেশের জন্য কাজ করেন সেই দেশপ্রেমের শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তা নেই, উন্নত দেশে তা আছে। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষা আছে। তারা ভালো থাকতে চায়, ভালো পরিবেশ চায়। বাংলাদেশে এর অভাব আছে। এখন আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। ফলে বিদেশে যেতে চাওয়ার অনেক কারণও আছে। এটা সব সময় যে খারাপ তাও নয়। আবার এর মাধ্যমে মেধা পাচারও হয়। কিন্তু যেখানেই তারা থাকুক দেশের জন্য কাজ করলে তা দেশের ইতিবাচক।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat