ঢাকা ০৪:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

নিয়ামতপুরে ‘মৃত’ বলে ৫ মাসেই অস্ত্রোপচার করল ক্লিনিক

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৪:২০:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫ ২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

নওগাঁর নিয়ামতপুরে তাড়াহুড়ো করে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে সিজারিয়ান অপারেশন (অস্ত্রোপচার) করার অভিযোগ উঠেছে এক ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। এতে জীবিত অবস্থায় জন্ম নেওয়ার পর নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, গর্ভের শিশু বেঁচে নেই বলে দ্রুত অপারেশন করায় নিয়ামতপুর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিশুটিকে দাফন করতে গিয়ে জানা যায় সে বেঁচে আছে। কিন্তু পরে মারা যায়।

জানা গেছে, শুক্রবার ৯ মে বিকেলে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের গোপাল চক এলাকার ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগমের (২৫) রক্তক্ষরণ হলে যন্ত্রণা নিয়ে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকের মালিক শরিফুল ইসলাম অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটের বাচ্চা মারা গেছে বলে রোগীর স্বজনদের জানান এবং দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দেন। তা না করলে প্রসূতিকে বাঁচানো যাবে না বলে তাড়াহুড়ো শুরু করেন। তাঁদের তাড়াহুড়োয় অপারেশন করার জন্য সম্মতি দেন প্রসূতির মা-বাবা।

এ বিষয়ে ক্লিনিকের মালিক শরিফুল ইসলামের স্ত্রী পারমিতা বলেন অন্তঃসত্ত্বার সন্তানকে নষ্ট করার জন্য বাচ্চার বয়স যখন ৩ মাস তখন এমএম কিট ঔষুধ খাওয়ায়। ঔষুধ খাওয়ার পরেও যখন বাচ্চা নষ্ট হয় নাই তখন পুনরায় বাচ্চা নষ্ট করার জন্য ঐ এমএম কিট খাওয়ায়। তারপরেও বাচ্চা নষ্ট না হয়ে অন্তঃসত্ত্বার পেট ব্যথা ও অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি হয়। প্রায় ১০/১৫ দিন থেকে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। তখন তারা ৮ মে বৃহস্পতিবার আমাদের এখানে এসে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে রির্পোট দিয়ে বলে বাচ্চার এখনও হার্ডবিট আছে। কিন্তু পানি স্বল্পতা রয়েছে। এখন উপায় হয় বাচ্চা নষ্ট করতে হবে তা না হলে অন্তঃসত্ত্বাকে বাঁচাতে পারবো না। সাথে অন্তঃসত্ত্বার বাবা, ভাবী, মাও ছিলো। তখন তারা বাড়ীতে ফিরে যায়। বাসায় যাওয়ার পর রোগীর মা আমাকে ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা কি করবো। তখন তারা ৯ মে শুক্রবার আবার আমাদের ক্লিনিকে আসে। ক্লিনিকে তখন ডাঃ রুহুল আমীন অবস্থান করছিল। ডাঃ রুহুল আমীন দেখে তাদের রাজশাহীতে নিয়ে যেতে বলে। কিন্ত রোগীর আত্মীয়দের জোরাজুরিতে আমাদের ক্লিনিকেই অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশনের আগে রোগীর বাবা ও ভাবী একটি অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করে। সবকিছু দায় দায়িত্ব তাদের। অপারেশনের পর প্রায় দেড় ঘন্টা নবজাতক বাচ্চা কোন প্রকার নড়াচড়া করে নাই। তখন তারা বাচ্চাটিকে মৃত ভেবে বাড়ী নিয়ে চলে যায়। দাফনের ব্যবস্থা করে তখন বাচ্চা কান্না দিয়ে উঠে।

এদিকে তারা শিশুটির প্রাণ আছে বুঝতে পেরে দ্রুতই উপজেলা সদরে আসেন। থানায় বিষয়টি অবহিত করলে তারা উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেয়। প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কায়সার রহমান শিশুটি জীবিত রয়েছে বলে জানান। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। তবে রামেকে নেওয়া হলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই অন্তঃসত্ত্বার মা নাজমা বলেন, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ থাকায় দ্রুত অপারেশন করা হয়েছে। শিশুটি মারা গেছে বলে আমাদের কাছে তুলে দেয়। দাফন করার উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলে শিশুটি নড়ে ওঠে। ডাঃ রুহুল আমীন বলেন, আমি রির্পোট দেখে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের বলি রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। এখানে অপারেশন করলে বাচ্চাকে বাঁচানো কোন ভাবেই সম্ভব নয়। রোগীরও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। পারলে আপনারা রাজশাহীতে নিয়ে যান। কিন্তু রোগীর আত্মীয় স্বজন অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে আমাকে অনুরোধ করে অপারেশন করতে। আমি যথা নিয়মে অপারেশন করি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. কায়সার রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘শিশুটিকে আমি জীবিত অবস্থায় পেয়েছিলাম।’
নিয়ামতপুর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, নবজাতককে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা বা কোন অভিযোগ হয়নি।

মোঃ মিলন হোসেন
নিয়ামতপুর প্রতিনিধি, নওগাঁ
০১৩০৩-৫৭৯০৫০
তাং-১১/০৫/২০২৫ইং

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নিয়ামতপুরে ‘মৃত’ বলে ৫ মাসেই অস্ত্রোপচার করল ক্লিনিক

আপডেট সময় : ০৪:২০:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

 

নওগাঁর নিয়ামতপুরে তাড়াহুড়ো করে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে সিজারিয়ান অপারেশন (অস্ত্রোপচার) করার অভিযোগ উঠেছে এক ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। এতে জীবিত অবস্থায় জন্ম নেওয়ার পর নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, গর্ভের শিশু বেঁচে নেই বলে দ্রুত অপারেশন করায় নিয়ামতপুর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিশুটিকে দাফন করতে গিয়ে জানা যায় সে বেঁচে আছে। কিন্তু পরে মারা যায়।

জানা গেছে, শুক্রবার ৯ মে বিকেলে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের গোপাল চক এলাকার ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগমের (২৫) রক্তক্ষরণ হলে যন্ত্রণা নিয়ে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকের মালিক শরিফুল ইসলাম অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটের বাচ্চা মারা গেছে বলে রোগীর স্বজনদের জানান এবং দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দেন। তা না করলে প্রসূতিকে বাঁচানো যাবে না বলে তাড়াহুড়ো শুরু করেন। তাঁদের তাড়াহুড়োয় অপারেশন করার জন্য সম্মতি দেন প্রসূতির মা-বাবা।

এ বিষয়ে ক্লিনিকের মালিক শরিফুল ইসলামের স্ত্রী পারমিতা বলেন অন্তঃসত্ত্বার সন্তানকে নষ্ট করার জন্য বাচ্চার বয়স যখন ৩ মাস তখন এমএম কিট ঔষুধ খাওয়ায়। ঔষুধ খাওয়ার পরেও যখন বাচ্চা নষ্ট হয় নাই তখন পুনরায় বাচ্চা নষ্ট করার জন্য ঐ এমএম কিট খাওয়ায়। তারপরেও বাচ্চা নষ্ট না হয়ে অন্তঃসত্ত্বার পেট ব্যথা ও অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি হয়। প্রায় ১০/১৫ দিন থেকে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। তখন তারা ৮ মে বৃহস্পতিবার আমাদের এখানে এসে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে রির্পোট দিয়ে বলে বাচ্চার এখনও হার্ডবিট আছে। কিন্তু পানি স্বল্পতা রয়েছে। এখন উপায় হয় বাচ্চা নষ্ট করতে হবে তা না হলে অন্তঃসত্ত্বাকে বাঁচাতে পারবো না। সাথে অন্তঃসত্ত্বার বাবা, ভাবী, মাও ছিলো। তখন তারা বাড়ীতে ফিরে যায়। বাসায় যাওয়ার পর রোগীর মা আমাকে ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা কি করবো। তখন তারা ৯ মে শুক্রবার আবার আমাদের ক্লিনিকে আসে। ক্লিনিকে তখন ডাঃ রুহুল আমীন অবস্থান করছিল। ডাঃ রুহুল আমীন দেখে তাদের রাজশাহীতে নিয়ে যেতে বলে। কিন্ত রোগীর আত্মীয়দের জোরাজুরিতে আমাদের ক্লিনিকেই অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশনের আগে রোগীর বাবা ও ভাবী একটি অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করে। সবকিছু দায় দায়িত্ব তাদের। অপারেশনের পর প্রায় দেড় ঘন্টা নবজাতক বাচ্চা কোন প্রকার নড়াচড়া করে নাই। তখন তারা বাচ্চাটিকে মৃত ভেবে বাড়ী নিয়ে চলে যায়। দাফনের ব্যবস্থা করে তখন বাচ্চা কান্না দিয়ে উঠে।

এদিকে তারা শিশুটির প্রাণ আছে বুঝতে পেরে দ্রুতই উপজেলা সদরে আসেন। থানায় বিষয়টি অবহিত করলে তারা উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেয়। প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কায়সার রহমান শিশুটি জীবিত রয়েছে বলে জানান। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। তবে রামেকে নেওয়া হলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই অন্তঃসত্ত্বার মা নাজমা বলেন, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ থাকায় দ্রুত অপারেশন করা হয়েছে। শিশুটি মারা গেছে বলে আমাদের কাছে তুলে দেয়। দাফন করার উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলে শিশুটি নড়ে ওঠে। ডাঃ রুহুল আমীন বলেন, আমি রির্পোট দেখে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের বলি রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। এখানে অপারেশন করলে বাচ্চাকে বাঁচানো কোন ভাবেই সম্ভব নয়। রোগীরও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। পারলে আপনারা রাজশাহীতে নিয়ে যান। কিন্তু রোগীর আত্মীয় স্বজন অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে আমাকে অনুরোধ করে অপারেশন করতে। আমি যথা নিয়মে অপারেশন করি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. কায়সার রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘শিশুটিকে আমি জীবিত অবস্থায় পেয়েছিলাম।’
নিয়ামতপুর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, নবজাতককে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা বা কোন অভিযোগ হয়নি।

মোঃ মিলন হোসেন
নিয়ামতপুর প্রতিনিধি, নওগাঁ
০১৩০৩-৫৭৯০৫০
তাং-১১/০৫/২০২৫ইং