জনতার বিক্ষোভে পুলিশ অবরুদ্ধ

- আপডেট সময় : ০৩:৩৪:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫ ৪০ বার পড়া হয়েছে
-
দেওভোগ চুনকা কুটিরে অভিযান
-
দিনের আলোয়ে থানায় যাব-আইভি
মধ্যরাতে নারায়নগঞ্জ চুনকা কুটিরের বাসায় পুলিশের অভিযান নিয়ে আইভী বললেন, দিনের আলোয় ছাড়া যাব না। আপনারা দিনে আসেন। এসময় আইভির নেতাকর্মী এলাকাবাসী এবং স্বজনরা পুরো দেওভোগ এলাকা অবচরুদ্ধ করে ফেলে। মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে দেওভোগ চুনকা কুটিরের সামনে আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ফলে অভিযানে থাকা সকল পুলিশ সদস্য বাসার ভিতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। রাত তিনটায় এরির্পোট লেখা পর্যন্ত আইভি বাসার ভেতরে দোতালায় এবং পুলিশ বাসার নীতলায় অবস্থান করছেন। লোকজন ওই বাড়িসহ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারে তার বাসভবনে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত আইভীর বাসভবন ‘চুনকা কুটির’-এ এই অভিযান চালানো হয়। তবে গ্রেপ্তার না হয়ে বাসার ভেতরে অবস্থান নেওয়া আইভী সাফ জানিয়ে দেন— ‘দিনের বেলা ছাড়া আমি যাব না, নিতে হলে দিনেই নিতে হবে।’
ঘটনার পরপরই স্থানীয় এলাকাবাসী ও আইভীর সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে এসে চুনকা কুটির ঘিরে ফেলেন। বাসার প্রবেশপথের দুই পাশের রাস্তায় বাঁশ, ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানগাড়ি ফেলে পথ অবরুদ্ধ করে দেন তারা। আশপাশের মসজিদের মাইকে প্রচার করে স্থানীয়দের রাস্তায় নামার আহ্বান জানানো হয়। ফলে পুলিশের দল ওই বাড়ির ভেতরেই এক পর্যায়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে জানান, আইভীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় একাধিক হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিযোগ রয়েছে। এসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে এই অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, বিস্তারিত পরে জানানো হবে। পুলিশি অভিযানের খবরে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের প্রতিবাদে এলাকাটি কয়েক ঘণ্টার জন্য কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
এদিকে নাগরিক সমাজ নামের মানবিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। নাগরিক সমাজের কর্মকর্তা হাসান ফেরদৗস বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, নারায়ণগঞ্জে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলেই একটি জনবিচ্ছিন্ন শ্রেণি এই পরিবারটিকে টার্গেট করে মাঠে নামে এবং বিভিন্ন আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করা শুরু করে। সংবিধানের বাহক সেজে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরের সাথে আঁতাত করা ক্ষমতার জন্য লালায়িত কিছু বড় বড় ডক্টর সাহেবদের প্রেসক্রিপশনে ঘন ঘন রাজধানী থেকে তথাকিথত কিছু সুশীল নারায়ণগঞ্জে আসছেন। তারা একই সাথে আপনার ও বর্তমান সরকারের কুৎসা রটনার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার ও নারায়ণগঞ্জের ভাবমূর্তি ক্ষুন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। এদের পেছনে সিটি মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী রয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধী আলবদর প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ঘনিষ্ঠ সহচর, কেন্দ্রীয় মজলিসে সুরার সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জামায়াতে ইসলামের আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন গত বছরের ২০ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে একটি জবানবন্দি দিয়েছিলেন।এই জবানবন্দির বিবরণ ওই সময় বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায় বলে হাসান বলেন।
হাসান বলেন, বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে বর্তমান সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যন্ত মেয়র আইভীকে জামায়াত সমর্থন দিয়েছে। এর মূল কারণ পারিবারিকভাবে জামায়াতে ইসলামের সাথে মেয়র আইভীর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও আইভীর সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে মঈনুদ্দিন জবানবন্দিতে বলেছেন বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়। যে সময় পুরো দেশ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল, সেসময় মেয়র আইভী যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের পরিবারকে ‘অতি গোপনে’ জন্মনিবন্ধন করে দিয়েছেন, বলেন হাসান। হাসান ফেরদৌস জামায়াত নেতা মঈনুদ্দিনের বরাত দিয়ে বলেন, মুজাহিদের স্ত্রী আইভীর ক্লাসমেট ছিলেন এবং মুজাহিদ যখন জেলে তখন তার ছেলেদের জন্মনিবন্ধনও এখানেই হয়েছে। অনেক ঘুরাঘুরি করে যখন পাচ্ছিল না, তখন মুজাহিদের ওয়াইফ আইভীকে বলার পরই আধঘণ্টার মধ্যে এই জন্মনিবন্ধন হয়ে গেল। এসব ঘটনা ও আইভীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জে আবারও অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি এবং ২০০১ এর ১৬ই জুনের বোমা হামলা ।