ঢাকা ০৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

অপরিকল্পিত কীটনাশকে ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

আমিনুল হক ভূইয়া
  • আপডেট সময় : ১২:০৯:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ৪৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশের শাক-সব্জি, ফলমূল থেকে শুরু করে প্রায় সকল কৃষিপণ্যেই অপরিকল্পিত কীটনাশকসহ নানা রকমের ক্ষতিকর রাসায়নিকদ্রব্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এতে করে মানব স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে রয়েছে

কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ভোক্তা থেকে কৃষক পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। বিএমসি পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৪ শতাংশ কৃষক প্রতি বছর কীটনাশক বিষক্রিয়ার সম্মুখীন হয়। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী কীটনাশক বিষক্রিয়ায় পরিমাণ ৩৮৫ মিলিয়ন, যার মধ্যে ১১ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। স্বাস্থ্যের ওপর রাসায়নিক কীটনাশকের প্রভাব আশঙ্কাজনক। বাংলাদেশের শাক-সব্জি, ফলমূল থেকে শুরু করে প্রায় সকল কৃষিপণ্যেই অপরিকল্পিত কীটনাশকসহ নানা রকমের ক্ষতিকর রাসায়নিকদ্রব্য ব্যবহার হয়ে থাকে। তাতে করে মানব স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে রয়েছে। কৃষিপণ্যে নিরাপদ কীটনাশকের ব্যবহার, তামাকের ক্ষতিকর দিক এবং রোডসেফটি এই তিনটি বিষয় নিয়ে ঢাকায় আলোচনায় বসেন বিশেষজ্ঞরা।
হার্ম রিডাকশন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ড. শরীফুল ইসলাম নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন, জনস্বাস্থ্য, কৃষি ও সড়ক পরিবহণ খাতের শীর্ষ স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা। তারা সংশ্লিষ্ট খাতের সমস্যা ও সমাধানে প্রকত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হার্ম রিডাকশন বিষয়ক চিকিৎসক ডা. ডেলন হিউম্যান, কীটনাশক ব্যবহারের অন্যতম প্রবক্তা দেবাশীষ চাটটাজি ও রোড সেফটি পরিবহন বিশেষজ্ঞ সালাহ উদ্দিন আহমেদ। জাতীয় ও আন্তার্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে মঙ্গলবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মিট দ্য প্রেসে যুক্ত হয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশবান্ধব নয় এমন কীটনাশকের ব্যবহার কমানো, তামাককের ক্ষতিহ্রাস এবং সড়ক নিরাপত্তা এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এখন চ্যালেঞ্জ এর মুখে। বাংলাদেশ হার্ম বিডাকশন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ও মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, রিডাকশন কোনো বিলাসিতা নয়, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমাদের লক্ষ্য হলো সমাজ নীতি নির্ধারক ও বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে কার্যকর সমাধান তৈরি করা, যা আমাদের দেশের জন্য উপযোগী হবে।
কৃষিখাতে নিরাপদ কীটনাশক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার এবং কীটনাশক ব্যবহারের অন্যতম প্রবক্তা দেবাশীষ চাটটার্জি। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার এখনও কৃষক-পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে হলে প্রশিক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরী। রোড সেফটি ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সালাহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে জানান, সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে এখনও একটি বড় জনস্বাস্থ্য সংকট। তার ভাষ্যমতে, আমাদের শুধু যানবাহনের কথা ভাবলেই চলবে না, নিরাপদ সড়ক, দক্ষ চালক এবং কার্যকর ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নের বিষয়েও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। একটি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল।
আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হার্ম বিডাকশন বিষয়ক দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসক ডা. ডেলন হিউম্যান তামাকের ক্ষতিহ্রাস প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি তামাকজনিত রোগ কমাতে বিকল্প পন্থার ওপর আলোকপাত করেন, শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞার ওপর নির্ভর না করেও কার্যকর হতে পারে। তার মতে বাংলাদেশকে তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রথাগত পদ্ধতিত্বের সঙ্গে নিকোটিনের নিরাপদ বিকল্প বিবেচনায় নিতে যবে। সঠিকভাবে এই পদ্ধতিগুলো যদি জনস্বাস্থ্য নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তাহলে ক্ষতি কমানো সম্ভব। এসময় উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি, সরকারী সংস্থা, বেসরকারি সংগঠন এবং স্বাস্থ্য খাতের প্রতিনিধিরা জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উন্নয়নে বাংলাদেশ হার্ম রিডাকশন ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) সময়োপযোগী পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অপরিকল্পিত কীটনাশকে ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

আপডেট সময় : ১২:০৯:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের শাক-সব্জি, ফলমূল থেকে শুরু করে প্রায় সকল কৃষিপণ্যেই অপরিকল্পিত কীটনাশকসহ নানা রকমের ক্ষতিকর রাসায়নিকদ্রব্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এতে করে মানব স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে রয়েছে

কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ভোক্তা থেকে কৃষক পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। বিএমসি পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৪ শতাংশ কৃষক প্রতি বছর কীটনাশক বিষক্রিয়ার সম্মুখীন হয়। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী কীটনাশক বিষক্রিয়ায় পরিমাণ ৩৮৫ মিলিয়ন, যার মধ্যে ১১ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। স্বাস্থ্যের ওপর রাসায়নিক কীটনাশকের প্রভাব আশঙ্কাজনক। বাংলাদেশের শাক-সব্জি, ফলমূল থেকে শুরু করে প্রায় সকল কৃষিপণ্যেই অপরিকল্পিত কীটনাশকসহ নানা রকমের ক্ষতিকর রাসায়নিকদ্রব্য ব্যবহার হয়ে থাকে। তাতে করে মানব স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে রয়েছে। কৃষিপণ্যে নিরাপদ কীটনাশকের ব্যবহার, তামাকের ক্ষতিকর দিক এবং রোডসেফটি এই তিনটি বিষয় নিয়ে ঢাকায় আলোচনায় বসেন বিশেষজ্ঞরা।
হার্ম রিডাকশন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ড. শরীফুল ইসলাম নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন, জনস্বাস্থ্য, কৃষি ও সড়ক পরিবহণ খাতের শীর্ষ স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা। তারা সংশ্লিষ্ট খাতের সমস্যা ও সমাধানে প্রকত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হার্ম রিডাকশন বিষয়ক চিকিৎসক ডা. ডেলন হিউম্যান, কীটনাশক ব্যবহারের অন্যতম প্রবক্তা দেবাশীষ চাটটাজি ও রোড সেফটি পরিবহন বিশেষজ্ঞ সালাহ উদ্দিন আহমেদ। জাতীয় ও আন্তার্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে মঙ্গলবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মিট দ্য প্রেসে যুক্ত হয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশবান্ধব নয় এমন কীটনাশকের ব্যবহার কমানো, তামাককের ক্ষতিহ্রাস এবং সড়ক নিরাপত্তা এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এখন চ্যালেঞ্জ এর মুখে। বাংলাদেশ হার্ম বিডাকশন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ও মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, রিডাকশন কোনো বিলাসিতা নয়, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমাদের লক্ষ্য হলো সমাজ নীতি নির্ধারক ও বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে কার্যকর সমাধান তৈরি করা, যা আমাদের দেশের জন্য উপযোগী হবে।
কৃষিখাতে নিরাপদ কীটনাশক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার এবং কীটনাশক ব্যবহারের অন্যতম প্রবক্তা দেবাশীষ চাটটার্জি। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার এখনও কৃষক-পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে হলে প্রশিক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরী। রোড সেফটি ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সালাহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে জানান, সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে এখনও একটি বড় জনস্বাস্থ্য সংকট। তার ভাষ্যমতে, আমাদের শুধু যানবাহনের কথা ভাবলেই চলবে না, নিরাপদ সড়ক, দক্ষ চালক এবং কার্যকর ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নের বিষয়েও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। একটি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল।
আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হার্ম বিডাকশন বিষয়ক দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসক ডা. ডেলন হিউম্যান তামাকের ক্ষতিহ্রাস প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি তামাকজনিত রোগ কমাতে বিকল্প পন্থার ওপর আলোকপাত করেন, শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞার ওপর নির্ভর না করেও কার্যকর হতে পারে। তার মতে বাংলাদেশকে তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রথাগত পদ্ধতিত্বের সঙ্গে নিকোটিনের নিরাপদ বিকল্প বিবেচনায় নিতে যবে। সঠিকভাবে এই পদ্ধতিগুলো যদি জনস্বাস্থ্য নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তাহলে ক্ষতি কমানো সম্ভব। এসময় উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি, সরকারী সংস্থা, বেসরকারি সংগঠন এবং স্বাস্থ্য খাতের প্রতিনিধিরা জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উন্নয়নে বাংলাদেশ হার্ম রিডাকশন ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) সময়োপযোগী পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।