ঢাকা ০৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:০২:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪ ৮৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়। বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তার পেছনে মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।

শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম(ইআরএফ কার্যালয়ে) পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায় বিষয়ে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে। গ্রিনওয়াচ ঢাকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসা—এই ত্রিমুখী আঁতাত মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। সব প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘ সময় ধরে দলীয়করণের চর্চা হয়েছে; গত ১৫-১৬ বছরে যার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি। এতে আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি আর তা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন এজেন্সিকে। ফলে এসব জায়গায় কতটুকু পরিবর্তন আনা যাবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। যে পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি, তা যেন টেকসই হয়।

 

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি দৃষ্টান্ত আছে। সেটি হলো, সিঙ্গাপুর থেকে। দেশটি থেকে ২০০৭ সালে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তার মাধ্যমে ২০১৩ সালে ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৯৩০ কোটি ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব, যদিও তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, ওই সব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, অর্থ পাচার বন্ধে সাপ্লাই (যে দেশ থেকে পাচার হয়) ও ডিমান্ড (যে দেশে পাচার হয়)—উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ থাকতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন দেশে বিশেষজ্ঞদের সিন্ডিকেট আছে। সে কারণে আমরা একজন সাবেক মন্ত্রীর কয়েকটি দেশে কয়েক শ অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়ে জানতে পারছি। কিন্তু এই ঘটনা বরফখণ্ডের চূড়ামাত্র, এমন পাচারকারী আরও অনেকে আছেন।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, অর্থ পাচার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, বিএফআইইউ—এসব প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পথনকশা আছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে, শুধু মুখের কথায় কাজ হবে না। অর্থ পাচার রোধে বেশ কিছু আইনেরও প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া দুর্নীতি বন্ধে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েস্ট সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া এবং আর্থিক অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করায় এখন গুরুত্ব দিতে হবে। এসব উদ্যোগ নিলে পাচার হওয়া টাকার পুরোটা না হলেও কিছু অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এতে ভবিষ্যতে পাচার করার বেলায় সবাই সাবধান হয়ে যাবেন।

আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ স্থানান্তর ও অর্থ পাচার—উভয় পদ্ধতিতেই দেশ থেকে অর্থ সরানো হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়। অনুমান করা হয়, এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে।

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আইএমএফসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার দেওয়া ঋণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা ছিল না, ঋণ দিলে সে অর্থ জনগণের কাজে আসবে না—এসব জানা সত্ত্বেও আইএমএফ সরকারকে কেন ঋণ দিয়েছিল, সে প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন। এসব ঋণের টাকা শুধু অপব্যবহারই হয়নি, তা দিয়ে সরকার গুলি কিনেছে, বারুদ কিনেছে ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করেছে। গত সরকারের সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকে যত ঋণ নেওয়া হয়েছে ও ব্যয় করা হয়েছে, সব ক্ষেত্রে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন তদন্ত করার দাবি জানান তিনি।

অর্থনীতিবিদ নাঈম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হাইজ্যাক (ছিনতাই) হয়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যাবে কীভাবে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সবার আগে মানসিকতা ঠিক করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রভাবশালীরা পাচার করা অর্থ হজম করে ফেললে তা ভবিষ্যতের জন্য ভালো উদাহরণ হবে না। সে জন্য পাচারকারীদের স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাচারের বিষয়টি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে।

বক্তারা বলেন, দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, সে জন্য মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও সেগুলোকে ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে

আপডেট সময় : ১০:০২:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

 

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়। বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তার পেছনে মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।

শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম(ইআরএফ কার্যালয়ে) পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায় বিষয়ে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে। গ্রিনওয়াচ ঢাকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসা—এই ত্রিমুখী আঁতাত মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। সব প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘ সময় ধরে দলীয়করণের চর্চা হয়েছে; গত ১৫-১৬ বছরে যার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি। এতে আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি আর তা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন এজেন্সিকে। ফলে এসব জায়গায় কতটুকু পরিবর্তন আনা যাবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। যে পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি, তা যেন টেকসই হয়।

 

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি দৃষ্টান্ত আছে। সেটি হলো, সিঙ্গাপুর থেকে। দেশটি থেকে ২০০৭ সালে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তার মাধ্যমে ২০১৩ সালে ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৯৩০ কোটি ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব, যদিও তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, ওই সব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, অর্থ পাচার বন্ধে সাপ্লাই (যে দেশ থেকে পাচার হয়) ও ডিমান্ড (যে দেশে পাচার হয়)—উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ থাকতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন দেশে বিশেষজ্ঞদের সিন্ডিকেট আছে। সে কারণে আমরা একজন সাবেক মন্ত্রীর কয়েকটি দেশে কয়েক শ অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়ে জানতে পারছি। কিন্তু এই ঘটনা বরফখণ্ডের চূড়ামাত্র, এমন পাচারকারী আরও অনেকে আছেন।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, অর্থ পাচার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, বিএফআইইউ—এসব প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পথনকশা আছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে, শুধু মুখের কথায় কাজ হবে না। অর্থ পাচার রোধে বেশ কিছু আইনেরও প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া দুর্নীতি বন্ধে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েস্ট সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া এবং আর্থিক অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করায় এখন গুরুত্ব দিতে হবে। এসব উদ্যোগ নিলে পাচার হওয়া টাকার পুরোটা না হলেও কিছু অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এতে ভবিষ্যতে পাচার করার বেলায় সবাই সাবধান হয়ে যাবেন।

আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ স্থানান্তর ও অর্থ পাচার—উভয় পদ্ধতিতেই দেশ থেকে অর্থ সরানো হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়। অনুমান করা হয়, এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে।

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আইএমএফসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার দেওয়া ঋণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা ছিল না, ঋণ দিলে সে অর্থ জনগণের কাজে আসবে না—এসব জানা সত্ত্বেও আইএমএফ সরকারকে কেন ঋণ দিয়েছিল, সে প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন। এসব ঋণের টাকা শুধু অপব্যবহারই হয়নি, তা দিয়ে সরকার গুলি কিনেছে, বারুদ কিনেছে ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করেছে। গত সরকারের সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকে যত ঋণ নেওয়া হয়েছে ও ব্যয় করা হয়েছে, সব ক্ষেত্রে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন তদন্ত করার দাবি জানান তিনি।

অর্থনীতিবিদ নাঈম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হাইজ্যাক (ছিনতাই) হয়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যাবে কীভাবে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সবার আগে মানসিকতা ঠিক করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রভাবশালীরা পাচার করা অর্থ হজম করে ফেললে তা ভবিষ্যতের জন্য ভালো উদাহরণ হবে না। সে জন্য পাচারকারীদের স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাচারের বিষয়টি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে।

বক্তারা বলেন, দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, সে জন্য মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও সেগুলোকে ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।