হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রুল জারি
ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ
- আপডেট সময় : ০৩:০৯:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪ ৪২৫ বার পড়া হয়েছে
ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন নেদারল্যান্ডের হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। গতকাল শুক্রবারের এই রায়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে তার বাহিনী গাজায় আর গণহত্যা চালাবে না ও ‘কথিত’ গণহত্যার প্রমাণ সংরক্ষণ নিশ্চিত করবে। ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধে ইসরাইলকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। গতকাল শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহর থেকে আইসিজে এই আদেশ দেয়। গাজায় ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ দায়ের করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এই অভিযোগের শুনানির পর শুক্রবার আইসিজে থেকে এই সিদ্ধান্ত আসে।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ওই মামলা দায়ের করা হয়। হেগে অবস্থিত আইসিজে দুই পক্ষেরই বক্তব্য শুনেছে। এতে ইসরাইল গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত দেশটিকে গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিলো আইসিজে। যদিও আন্তর্জাতিক এই আদালতের কোনো দেশকে তার রায় মানতে বাধ্য করার কোনো সুযোগ নেই। তবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই রায় ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে।
আদালত বলেছে, এই মামলায় রায় দেয়ার এখতিয়ার তার রয়েছে। আদালত ইসরাইলকে গাজা উপত্যকায় গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
পাশাপাশি এক মাসের মধ্যে এ নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে আইসিজে। আদালতটি বলেছে যে, ইসরাইলকে অবশ্যই গাজায় গণহত্যার সঙ্গে যুক্তদের প্রতিরোধ করতে হবে এবং দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। ইসরাইলকে সেখানে মানবিক সাহায্যের অনুমতি দিতে হবে। ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষার জন্য আরও ব্যবস্থা নিতে ইসরাইলকে নির্দেশ দিয়েছে আইসিজে। তবে গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান বন্ধ করার কোনো নির্দেশ দেয়নি আদালতটি।
এই রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিন। এর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রতিক্রিয়ায় বলে, আমরা আইসিজে’র রায়কে স্বাগত জানাই। এই রায় প্রমাণ করে যে, কোনো রাষ্ট্রই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি আদালতের সিদ্ধান্তকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই রায় ইসরাইলকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং গাজায় তাদের অপরাধ প্রকাশ্যে আনতে ভূমিকা রাখবে। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমরা ইসরাইলকে বাধ্য করার আহ্বান জানাই। শুক্রবার গাজা উপত্যকায় গণহত্যা নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার রুল জারি করেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। এতে গাজায় গণহত্যা বন্ধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিহতের সংখ্যা ২৬ হাজার ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ হামলায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১৮৩ জন। গতকাল শুক্রবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এই খবর জানিয়েছে।
গাজাবাসীদের ওপর ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা প্রায় চার মাসে গড়ালো। তবে এখনও যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর শেষ কবে তা অনুমান করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরাও। যতই দিন গড়াচ্ছে হামলার তীব্রত বাড়াচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে হতাহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা।
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের করা হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল সেনাবাহিনীর এ হামলায় এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন আরও ৬৪ হাজার ৪৮৭ জন।
তাদের মধে সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৮৩ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও ৩৭৭ জন।