ঈদে ঢাকা ছাড়তে গুনতে হবে ৯৮৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া
- আপডেট সময় : ০৫:০২:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪ ২৫২ বার পড়া হয়েছে
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ
ঘরমুখো মানুষদের ঢাকা ছাড়তেই ৯৮৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য ওঠে এসেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমমিতি থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়,
এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা ও আশেপাশের অঞ্চল থেকে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রী সাধারণের যাতায়াত নিরাপদ, নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী তৎপরতা রয়েছে।
এরমধ্যেও ঈদযাত্রায় কেবল ঢাকা ছাড়তে ৯৮৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে এসব যাত্রীদের। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে এই তথ্য উঠে এসেছে। সংগঠনের গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির সদস্যরা গত প্রায় ৩ এপ্রিল থেকে ০৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা থেকে দেশের সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথে ঈদযাত্রা পরিস্থিতি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী সেবার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে আজ ৭ এপ্রিল দেশের গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করে সংগঠনটি।
সংগঠনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বাস ভাড়া নির্ধারণের শর্তে বাসের চালক, সহকারি ও ভাড়া আদায়কারির ২ ঈদে দুটি ঈদ বোনাস প্রতিদিনের আদায়কৃত ভাড়ায় ধার্য্য থাকলেও তা কার্যকর করা হচ্ছে না। কিছু অসাধু বাসের মালিক-চালকেরা এসবের তোয়াক্কা না করে এবারের ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য মেতে উঠেছে।
দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি, ঈদ কেন্দ্রিক পরিবহনে চাঁদাবাজি বৃদ্ধি, পরিবহন কোম্পানীগুলোর বাড়তি খরচের যোগান দেওয়া, চালক-সহকারি ও অন্যান্য সহায়ক কর্মচারিদের ঈদ বোনাস তুলে নেওয়া, পরিবহন মালিকেরা বাড়তি মুনাফা লুফে নেওয়াসহ নানাকারণে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানী ও ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট পরিবহনগুলো একে অন্যের সাথে পাল্লা দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
সড়ক ও নৌ-পথের বিভিন্ন টার্মিনালে ভিজিল্যান্স টিমের অস্থায়ী অফিসে সদস্যরা বসে থাকলেও তারা এসব দেখার বা প্রতিকার করার প্রয়োজন মনে করছে না। ভিজিল্যান্স টিমের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোন যাত্রী অভিযোগ দিলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। যাত্রীরা জানাচ্ছেন, ভিজিল্যান্স টিমের সদস্যদের সামনে এহেন ভাড়া নৈরাজ্য চললেও তারা দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। তাদেরকে জানিয়ে আর কি লাভ হবে?
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি যাত্রী নৌ-পথে পরিবহন হবে। ঢাকার সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরসহ বিভিন্ন ঘাট দিয়ে প্রায় ৬০ লাখ যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। যাত্রী প্রতি গড়ে ৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত শ্রেনীভেদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গড়ে যাত্রী প্রতি ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া আদায় হলে ঈদের আগে এসব যাত্রীদের কাছ থেকে ১২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে।
ঢাকায় চলাচলকারি সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য মেতে উঠেছে। ঈদে কেনাকাটা, বিভিন্ন টার্মিনালে যাতায়াতের পাশাপাশি দৈনন্দিন নানা কাজে এসব অটো ব্যবহার করতে গিয়ে প্রত্যক যাত্রীকে গড়ে প্রতি ট্রিপে ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ঈদে আগে রাজধানীতে চলাচলকারি ২৫ হাজার সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় প্রায় ৭০ লাখ ট্রিপ যাত্রীকে ১৪০ কোটি টাকার বেশি বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।
ইজিবাইক, মোটররিক্সা, প্যাডেল চালিত রিক্সা ঈদ বকশিসের নামে যাত্রী প্রতি গড়ে ২০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, ঢাকায় চলাচলকারি প্রায় ১০ লাখ ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, প্যাডেল চালিত রিক্সায় ১৪ কোটি ট্রিপ হতে পারে। এসব যানবাহনের যাত্রীদের ২৮০ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।
পারাপারের যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে ঈদ উপলক্ষে ২ টাকার মাসুল ঘাট ইজারাদারের লোকজন ১০/২০ টাকা হারে আদায় করে থাকে। এসময়ে পণ্য নিয়ে খেয়া পারাপার বা লঞ্চে আরোহণে ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত কুলি মজুরি চার্জ দাবি করা হয়। খেয়া পারাপারে ঈদবাজারের পেকেট প্রতি মাসুল দাবি করা হয়। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেব বলছে, এবারের ঈদে সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের আশেপাশে খেয়া পারাপারে ১৪ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হবে। এসব যাত্রীর মাথাপিছু ১০ টাকা হারে বাড়তি হিসেবে ১৪০ কোটি টাকা বাড়তি মাসুল ঘাট ইজারাদারের লোকজন বিআইডাব্লিউটিএর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লুটে নেবে।
এতে দেখা যায়, এবারের ঈদের আগে কেবল ঢাকা শহরে আভ্যন্তরিন যাতায়াতকারি ও ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদযাত্রায় কেবল ৯৮৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকার বেশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় গুনতে হবে যাত্রীদের। সারাদেশের হিসাব করলে এই হিসাবের তিন থেকে চারগুন বাড়তে পারে। এহেন অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্যর কারণে দ্রব্যমুল্য, চাঁদাবাজি, সামাজিক অস্থিরতা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।
নিম্ন আয়ের লোকজন ভোগান্তিতে পড়ছে। এখান থেকে উত্তোরণে জন্য গণপরিবহনে স্মার্ট ভাড়া আদায় পদ্ধতি চালু করা। নগদ টাকার লেনদেন বন্ধ করা। সড়ক-মহাসড়কে সিসিক্যামরা পদ্ধতি প্রসিকিউশন পদ্ধতি চালু করা। আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরী বলে মনে করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।