এবারে ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ
- আপডেট সময় : ১১:৫৬:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ৫৫ বার পড়া হয়েছে
৪৭ বছরের কলকাতা বইমেলা নানাভাবে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ
এবারে ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ। যা নিয়ে অনেকটাই হতাশ পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড।
ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ বইমেলার নাম ‘আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা’। সেই বইমেলার ইতিহাসে এবারই প্রথম অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ।
যদিও উদ্যোক্তাদের অভিমত, এখনও সময় আছে। তারা এখনও আশাবাদী। তারা চাইছেন, বিশাল আকারেও না হলেও অংশ নিক বাংলাদেশ। সে দেশ থেকে সবুজ সংকেত পেলে ভিসাসহ বাদবাকি বিষয় সহযোগিতা করবে বইমেলা কর্তৃপক্ষ।
যদিও তথ্য বলছে, আসন্ন কলকাতা বইমেলার অংশ নেবে না বাংলাদেশ। কারণ, এ বিষয়ে কোনো সবুজ সংকেত দেয়নি দুই দেশ। যেমন দেয়নি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। তেমন ভারত সরকারও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে মুখ খুলছে না। এমনটাই জানিয়েছেন গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ৪৮তম কলকাতা বইমেলায় সংবাদ সম্মেলন হয়ে গেল কলকাতার পার্ক হোটেলে। বইমেলায় থিম কান্ট্রি হিসেবে অংশগ্রহণ করছে জার্মানি। থিম কান্ট্রি হিসেবে অংশগ্রহণ নিয়ে বক্তব্য রাখেন কলকাতার জার্মান ভাইস কনসাল সিমন ক্লাইমপাস এবং কলকাতার গ্যোয়েট ইনস্টিটিউট ডিরেক্টর ম্যাডাম অ্যাস্ট্রিড ভেগে।
কিন্তু এত শত বক্তব্যের মাঝেও সাংবাদিকদের উৎসাহ ছিল বাংলাদেশ বিষয়। আর তা বোঝা গেল সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে।
থিম কান্ট্রির মোড়ক উন্মোচনের পরই ছিল প্রশ্ন উত্তর পর্ব। সেখানে সাংবাদিকরা নানাভাবে বাংলাদেশ বিষয় প্রশ্ন করতে থাকেন সংশ্লিষ্টদের।
টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রশ্ন করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কি অংশগ্রহণ করছে? এমন প্রশ্ন সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখনও কিছু বলতে পারব না। শুধু এইটুকু বলতে পারি বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যথাযথ সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি আমরা।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রশ্নে সভাপতি বলেছেন, বর্তমান যে পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ এবং ভারত রয়েছে। সরকারি কোনো নির্দেশনা ছাড়া আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। ফলে এখনই বলা সম্ভব নয় বাংলাদেশ অংশ নেবে কি না।
গত বছর কলকাতা বই বেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন সেজে উঠেছিল ইউনেস্কো স্বীকৃত ঢাকার রিকশা ও রিকশা চিত্রে। সে বছর সব মিলিয়ে মেলায় এসেছিলেন ২৭ লাখ বইপ্রেমী মানুষ। গোটা বইমেলায় বেচাকেনা হয়েছিল ২৩ কোটি রুপি।
মূলত বইমেলায় বিভিন্ন দেশ অংশ নিলেও আলাদা গুরুত্ব পেয়ে থাকে বাংলাদেশে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ অংশ না নিলে অনেকটাই শক্তি হারাবে কলকাতা বইমেলা। কারণ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পাঠকের একটা বড় অংশ নজর রাখে বাংলাদেশের কবি সাহিত্যিকদের সৃষ্টির ওপর।
কিন্তু এ বছর অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ। কতটা হতাশ বইমেলা কর্তৃপক্ষ? এমন প্রশ্ন গিল্ডের সম্পাদক সুধাংশু দে বলেছেন, অবশ্যই বাংলাদেশের অভাব বোধ আমরা করছি। শুধু আমরা নয়; পশ্চিমবঙ্গের পাঠককুলও হতাশ হবেন। তারা অংশ না নিলে আমাদেরও খারাপ লাগবে। কারণ দীর্ঘ ৪৭ বছরে কলকাতার বইমেলার ইতিহাস বাংলাদেশ নামটা জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের অংশগ্রহণ পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের মনে বিশাল জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি যে জায়গায়। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারছি।
তিনি আরও বলেছেন, যদিও বাংলাদেশের পরিষদ থেকে জানিয়েছিল তারা অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো সরকারি নির্দেশ আসেনি। ফলে অনেকটাই হতাশ আমরা।
১৯৭৬ সাল থেকে কলকাতা বইমেলার যে আয়োজন হয়ে থাকে তার প্রথম চিন্তা ভাবনা এসেছিল জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট বইমেলা থেকে। ১৯৮৪ এবং ২০০৬ সাল – এই দুই সাল ফ্রাঙ্কফুট বইমেলায় থিম কান্ট্রি ছিল ভারত। আর এবার কলকাতা বইমেলায় থিম কান্ট্রি জার্মানি।
আসন্ন ৪৮ তম বইমেলায় অংশগ্রহণ করবে গ্রেট ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইটালির, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ। এছাড়াও প্রতি বছরের মত থাকছে ভারতের অন্যান্য রাজ্য যেমন দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, বিহার আসাম, ঝাড়খন্ড সহ প্রায় সবকটি রাজ্য।
এবারের বইমেলায় অংশ নিচ্ছে দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ১ হাজার ৫০ জনের বেশি প্রকাশনা সংস্থা। এছাড়া থাকছে ২০০টির বেশি লিটল ম্যাগাজিনসহ অন্যান্য আকর্ষণ। এবারে কলকাতা বইমেলা শুরু হবে ২৮ জানুয়ারি থেকে। মেলা চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বরাবরের মতো বইমেলার শুভ সূচনা করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।