কাঁচামাল আমদানি কমে ৫২৭ কোটি ডলারে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ
- আপডেট সময় : ১২:১৮:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ৩০ বার পড়া হয়েছে
২০২৪ সালের নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে
গেল নভেম্বর মাসে কাঁচামাল আমদানি কমে গিয়ে ৫২৭ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৬০ কোটি ডলার। আমদানি কমে যাওয়ায় দেশের ব্যবসাবাণিজ্য অনেক স্থবির হয়ে পড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি কম হওয়ায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পায়। এমন একটি প্রতিকূল অর্থনৈতিক চক্র বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং ভোক্তাদের একইভাবে উদ্বিগ্ন করে। যেমন আমদানি কমার প্রভাবে বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি, যার প্রভাব পড়ে ভোক্তার ওপর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরের জুলাই-নভেম্বর (পাঁচ মাস) সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ২৯ শতাংশ কমে ৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।
একই সময়ে মধ্যবর্তী (উৎপাদনের জন্য শিল্প পর্যায় বিক্রি হওয়া পণ্য) পণ্য আমদানিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ১২ শতাংশের বেশি কমে ১৬৯ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। একইভাবে ভোগ্যপণ্য আমদানি ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশের বেশি কমে ২৬০ কোটি ডলার হয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ঋণপত্র খোলার (এলসি) মাধ্যমে আমদানি লেনদেনের মূল্য ৬ শতাংশ কমে ৫২৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৫৬০ কোটি ডলার। চলতি বছরের পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর) আমদানি বাণিজ্যের জন্য খোলা ঋণপত্রের মোট মূল্যও ১ শতাংশের মতো কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, একই সময়ে ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তির পরিমাণও ১ শতাংশ কমে ২ হাজার ৭৮৮ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনায় ব্যবসায়ীরা একটি সাময়িক বিরতি দিয়েছেন। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি নেমে এসেছে। এর প্রভাবে কমেছে আমদানিও।
তারা আরও বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট সারা দেশে বিপুলসংখ্যক কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর হয়, যা ব্যবসা কার্যক্রমকে আরও স্থবির করেছে।
তবে সংশ্লিষ্টদের আশা, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ব্যবসাবাণিজ্য শিগগিরই আগের মতো পুরোদমে শুরু হবে। কারণ সরকার বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ওপর কর প্রত্যাহার করেছে এবং ভোক্তার সবচেয়ে বেশি খরচের মাস রমজানও ঘনিয়ে আসছে। তাই আগামী মাসগুলোতে আমদানির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যাংকার এবং বিশেষজ্ঞরা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, বিদেশি মুদ্রার (ডলার) বিনিময় হার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হওয়ায় আমদানি বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। বাংলাদেশ অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করে। তাই আমদানি বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যদিকে, শিল্প উৎপাদন কার্যক্রম কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মেলে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায়। চলতি বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৯৮০ কোটি ডলারের শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে আমদানি কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।