কৃষি ও খাদ্র নিরাপত্তায় আগামীর চ্যালেঞ্জ

- আপডেট সময় : ২৫৩ বার পড়া হয়েছে
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিজমি হ্রাস ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য সব মিলিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। এ পরিসিস্থিতে টেকসই কৃষিই হতে পারে আগামীর সমাধান, যা শুধু উৎপাদন নয় বরং পরিবেশ রক্ষা ও কৃষকের জীবিকা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ১০০ কোটির বেশি বাড়বে। বাংলাদেশেও প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ যুক্ত হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা বহুগুণে বাড়ছে। অথচ শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। এই চাপ সামলাতে হলে কৃষি খাতকে আরও উৎপাদনশীল ও টেকসই করতে হবে।
প্রতিবছরই দেখা যায় বাংলাদেশের কৃষি জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি আঘাতের শিকার হয়। বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড় ফলস উৎপাদনকে বিপর্যস্ত করছে। যার কারণে কৃষকরা ভিশনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশের কৃষি জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সরাসরি আঘাতের শিকার হয়। বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড় ফসল উৎপাদনকে বিপর্যস্ত করছে। দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা ধান ও সবজি উৎপানে বড় বাধা। আর উত্তরে খরার কৃষকরা সেচ সংকটে পড়ছেন। এর ফলে শুধু উৎপাদনই কমছে না, কৃষকের জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
এই খাতের অভিজ্ঞরা বলছেন, টেকসই কৃষি হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং কৃষকের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। জৈব সার ও জৈব কীটনাশকের ব্যবহার মাটির উর্বরতা বজায় রাখে। পানির অপচয় রোধে আধুনিক সেচ ব্যবস্থা প্রয়োজন। জলবায়ু সহনশীল ও উচ্চফলনশীল জাতের ফসল চাষে উৎসাহ দেওয়া দরকার। প্রযুক্তির ব্যবহার ড্রোন, ডিজিটাল কৃষি পরামর্শ, তথ্যভিত্তিক চাষাবাদ কৃষিকে আরও কার্যকর করতে পারে।
তারা বলছেন, খাদ্য নিরাপত্তা শুধু উৎপাদনের বিষয় নয়, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গেও জড়িত। বাংলাদেশের অনেক কৃষক নিজেরাই দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন। উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজারে ন্যায্যমূল্য পান না। তাই কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ ও বাজারব্যবস্থার উন্নতি জরুরি।
নীতি ও ব্যস্তবায়ন: সরকার কৃষি ভর্তুকি, কৃষিঋণ, বীজ উন্নয়ন, কৃষি গবেষণা ও উপকরণ বিতরণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এসব উদ্যোগকে আরও সমন্বিত ও সময়োপযোগী করতে হবে। স্থানীয় কৃষকের অভিজ্ঞতার সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাতে হবে।
আগামীর চ্যালেঞ্জ: পুষ্টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শুধু চাল বা গম নয়, শাকসবজি, ফল, ডাল, মাছ ও দুধ উৎপাদনের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষিজমি রক্ষায় পরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের মাধ্যমে আবাদি জমি সংরক্ষণ করতে হবে। কৃষকের হাতে প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে হবে। খরা, বন্যা ও লবণাক্ততা সহনশীল ফলস চাষ করতে হবে। কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তায় কৃষি বিমা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
খাদ্য নিরাপত্তা শুধু জাতীয় উন্নয়নের প্রশ্ন নয়, এটি মানুষের মৌলিক অধিকার। টেকসই কৃষি ছাড়া ভবিষ্যতের খাদ্য সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। সরকার, গবেষক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের সমন্বিত উদ্যোগেই আগামীর চ্যালেঞ্চ জয় করা সম্ভব।