ঢাকা ১০:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাড়ছে অপরাধ Logo নবীনগর বাজার ও শহর রক্ষার্থে নদীর পাড় দিয়ে রাস্তা নির্মানের দাবীতে মানববন্ধন Logo দিনাজপুরে মৃত্যু দাবীর পাঁচ লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর Logo কোম্পানীগঞ্জে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ Logo নাটোরে শিশুকে যৌন নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা ১০ বছর করে কারাদণ্ড Logo মাদারীপুরে আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১৫, উড়ে গেছে যুবকের পা Logo রামুতে তারুণ্যের উৎসব আন্তঃ স্কুল ও কলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা Logo কেশবপুর রাফিজা হত্যার ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে দৌড়ঝাপ Logo ডামুড্যায় তারুণ্যের উৎসব উদযাপনে ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন Logo কিশোরগঞ্জ নিকলীতে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার

কেশবপুর রাফিজা হত্যার ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে দৌড়ঝাপ

খায়রুল আনাম, কেশবপুর (যশোর)
  • আপডেট সময় : ০২:২৮:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যশোরের কেশবপুরে প্রতাবপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের কন্যা রাফিজা আক্তার নদী (২০) হত্যার ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে তার স্বামীসহ শুরুর বাড়ির লোকজন থানা পুলিশসহ বিভিন্ন মহলে দোড়ঝাপ শুরু করেছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর (২০২৪) সকালে রাফিজাকে তার স্বামীসহ শুরুর বাড়ির লোকজন নির্যাতনসহ পিটিয়ে হত্যা করার পর তার মরদেহ ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে সে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়। থানা পুলিশের প্রাথমিক সুরোতহাল রিপোর্টে নিহতের বাম পাশের থুতনী ও কানের নীচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে রাফিজার পরিবারের দাবী রাফিজা হত্যা কান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করেছে।

থানা পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, কেশবপুর উপজেলার প্রতাবপুর গ্রামের নির্মান শ্রমিক রফিকুল ইসলামের কন্যা রাফিজা আক্তার নদীর, গত দেড় বছর পূর্বে পারিবারিক ভাবে পার্শ্ববর্তি মনিরামপুর উপজেলার আটঘরা গ্রামের আতিয়ার সানার ছেলে শিবলী রোমানের সাথে বিবাহ হয়। এসময় মেয়ের সুখের কথা ভেবে তার পিতা ১ভরি স্বার্ণালংকার, পালঙ্গ, ড্রেসিং টেবিল ও সোকেসসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার বরারব সাহায্য দেন। বিয়ের পর ২/৩ মাস রাফিজার সাথে ভাল ব্যবহার করা হয়। এরপর নেশায় আশক্ত স্বামী রোমান ২লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে, তার উপর অমানুষিক ও দৈহিক নির্যাতন শুরু করে। এরই মধ্যে রাফিজার গর্ভে দু’দফা সন্তান সম্ভাবা দেখা দিলে তার স্বামী শিবলী ও তার পিতা মাতা তার গভের সন্তান, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক গর্ভপাত ঘটানো হয়।

এক পর্যায়ে দাবী কৃত ২ লাখ টাকা না পেয়ে তার স্বামী শিবলী, তার পিতা আতিয়ার রহমান সানা ও তার মা শেফালী বেগম প্রায় তাকে মারপিটসহ মানুষিক ও শারিরিক ভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। এক পর্যায়ে নির্যাতনের ফলে গত ১৭/১২/২০২৪ তারিখে তার মৃত্যু হলে, তার লাশ তাদের শয়ন কক্ষে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে রাফিজার পিতা সাংবাদিকদের জানান। সকাল ৮টার দিকে তার মৃত্যু হলেও বেলা ১১টার দিকে তার পিতা-মাতাকে মোবাইলের মাধ্যমে জানানো হয়। খবর পেয়ে রাফিজার পরিবারের সদস্যরা আটঘরা গ্রামে যেয়ে দেখতে পান, রাফিজার মরদেহ বারান্দায় পড়ে আছে এবং তার স্বামী, শশুর ও শাশুড়িসহ বাড়ির লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাফিজার ভাই মাহমুদ হাসান সাগর মনিরামপুর থানা পুলিশকে হত্যার ঘটনাটি জানানোর পর, থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তার লাশের সুরতহাল শেষে মর্গে প্রেরন করে। পুলিশের প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে তার মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তিতে রাফিজার ভাই, থানা পুলিশকে জানান, যৌতুকের কারনে তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু থানা পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে। সূত্র জানায়, রোমান নেশায় আশক্ত হওয়ার কারনে সে যৌতুকের টাকার দাবীতে প্রায়ই তার স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালাত। রাফিজার মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে রোমানসহ তার পবিবারকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করতে এলাকার ইউপি মেম্বার রবিউল ইসলাম ও মহিলা আ’লীগের নেত্রী আমেনা খাতুন দৌড়ঝাপ দিচ্ছেন বলে রাফিজার পরিবারের সদস্যরা জানান।

অভিযোগের বাদী রাফিজার বড়ভাই মোঃ মাহামুদ হাসান সাগর বলেন, যৌতুকের দাবীতে তার বোন রাফিজাকে তার স্বামী রোমান, শশুর ও শাশুড়ি মানুষিক এবং শারিরিক ভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে হত্যা করেছে। এব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা দিলেও থানা পুলিশ হত্যা মামলা গ্রহন না করে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তারা মিয়া বলেন, ঘটনার দিন রাফিজার ভাইয়ের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে যশোর মর্গে প্রেরন করা হয়। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে দেখা যায় নিহতের মুখের ডান পাশে ছেলা ও ফোলা আঘাতের চিহ্ন হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। পরবর্তিতে তার পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কেশবপুর রাফিজা হত্যার ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে দৌড়ঝাপ

আপডেট সময় : ০২:২৮:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

যশোরের কেশবপুরে প্রতাবপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের কন্যা রাফিজা আক্তার নদী (২০) হত্যার ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে তার স্বামীসহ শুরুর বাড়ির লোকজন থানা পুলিশসহ বিভিন্ন মহলে দোড়ঝাপ শুরু করেছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর (২০২৪) সকালে রাফিজাকে তার স্বামীসহ শুরুর বাড়ির লোকজন নির্যাতনসহ পিটিয়ে হত্যা করার পর তার মরদেহ ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে সে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়। থানা পুলিশের প্রাথমিক সুরোতহাল রিপোর্টে নিহতের বাম পাশের থুতনী ও কানের নীচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে রাফিজার পরিবারের দাবী রাফিজা হত্যা কান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করেছে।

থানা পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, কেশবপুর উপজেলার প্রতাবপুর গ্রামের নির্মান শ্রমিক রফিকুল ইসলামের কন্যা রাফিজা আক্তার নদীর, গত দেড় বছর পূর্বে পারিবারিক ভাবে পার্শ্ববর্তি মনিরামপুর উপজেলার আটঘরা গ্রামের আতিয়ার সানার ছেলে শিবলী রোমানের সাথে বিবাহ হয়। এসময় মেয়ের সুখের কথা ভেবে তার পিতা ১ভরি স্বার্ণালংকার, পালঙ্গ, ড্রেসিং টেবিল ও সোকেসসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার বরারব সাহায্য দেন। বিয়ের পর ২/৩ মাস রাফিজার সাথে ভাল ব্যবহার করা হয়। এরপর নেশায় আশক্ত স্বামী রোমান ২লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে, তার উপর অমানুষিক ও দৈহিক নির্যাতন শুরু করে। এরই মধ্যে রাফিজার গর্ভে দু’দফা সন্তান সম্ভাবা দেখা দিলে তার স্বামী শিবলী ও তার পিতা মাতা তার গভের সন্তান, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক গর্ভপাত ঘটানো হয়।

এক পর্যায়ে দাবী কৃত ২ লাখ টাকা না পেয়ে তার স্বামী শিবলী, তার পিতা আতিয়ার রহমান সানা ও তার মা শেফালী বেগম প্রায় তাকে মারপিটসহ মানুষিক ও শারিরিক ভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। এক পর্যায়ে নির্যাতনের ফলে গত ১৭/১২/২০২৪ তারিখে তার মৃত্যু হলে, তার লাশ তাদের শয়ন কক্ষে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে রাফিজার পিতা সাংবাদিকদের জানান। সকাল ৮টার দিকে তার মৃত্যু হলেও বেলা ১১টার দিকে তার পিতা-মাতাকে মোবাইলের মাধ্যমে জানানো হয়। খবর পেয়ে রাফিজার পরিবারের সদস্যরা আটঘরা গ্রামে যেয়ে দেখতে পান, রাফিজার মরদেহ বারান্দায় পড়ে আছে এবং তার স্বামী, শশুর ও শাশুড়িসহ বাড়ির লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাফিজার ভাই মাহমুদ হাসান সাগর মনিরামপুর থানা পুলিশকে হত্যার ঘটনাটি জানানোর পর, থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তার লাশের সুরতহাল শেষে মর্গে প্রেরন করে। পুলিশের প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে তার মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তিতে রাফিজার ভাই, থানা পুলিশকে জানান, যৌতুকের কারনে তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু থানা পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে। সূত্র জানায়, রোমান নেশায় আশক্ত হওয়ার কারনে সে যৌতুকের টাকার দাবীতে প্রায়ই তার স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালাত। রাফিজার মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে রোমানসহ তার পবিবারকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করতে এলাকার ইউপি মেম্বার রবিউল ইসলাম ও মহিলা আ’লীগের নেত্রী আমেনা খাতুন দৌড়ঝাপ দিচ্ছেন বলে রাফিজার পরিবারের সদস্যরা জানান।

অভিযোগের বাদী রাফিজার বড়ভাই মোঃ মাহামুদ হাসান সাগর বলেন, যৌতুকের দাবীতে তার বোন রাফিজাকে তার স্বামী রোমান, শশুর ও শাশুড়ি মানুষিক এবং শারিরিক ভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে হত্যা করেছে। এব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা দিলেও থানা পুলিশ হত্যা মামলা গ্রহন না করে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তারা মিয়া বলেন, ঘটনার দিন রাফিজার ভাইয়ের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে যশোর মর্গে প্রেরন করা হয়। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে দেখা যায় নিহতের মুখের ডান পাশে ছেলা ও ফোলা আঘাতের চিহ্ন হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। পরবর্তিতে তার পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।