খাগড়াছড়িতে বৈসাবী রেলি অনুষ্ঠিত

- আপডেট সময় : ০৩:০১:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু—যে নামেই বলা হোক না কেন, এই উৎসব যেন পাহাড়িদের প্রেরণা, পাহাড়ের সংস্কৃতির জাগরণ। আগামী ১২ এপ্রিল চাকমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী, কিশোরী-ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা হল্লা করে ফুল তুলে নদী-খালে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল নিবেদনের মাধ্যমে পুরাতন বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরের শুভ কামনায় নিজেদের পবিত্রতা কামনা করবে। এছাড়া ফুল দিয়ে ঘরের প্রতিটি দরজার মাঝখানে মালা গেঁথে সাজানো হয়।
১৩ এপ্রিল চাকমা সম্প্রদায়ের মূল বিজু এবং পরের দিন ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপজ্জা পালন করা হবে। একই দিন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হারিবৈসু, বিঝুমা, বিচিকাতাল পালিত হবে। ফুল বিজু, মূল বিজু ও বিচিকাতাল নামে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে এ উৎসব উদযাপিত হয়।
১৪ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই উৎসবে ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা পানিখেলা এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ষবরণের র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসবে আনন্দের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।
এই প্রাণের উৎসব বৈসাবিকে আনন্দমুখর করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। চাকমাদের বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই, ত্রিপুরাদের বৈসু ও তঞ্চঙ্গ্যাদের বিহু নিয়ে গঠিত বৈসাবি। উৎসবের আরও কয়েকটি দিন বাকি থাকলেও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে চলছে বৈসাবি মেলা, খেলাধুলা ও র্যালিসহ নানা আয়োজন।
১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে আসছে। সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় নিজ নিজ ভাষায়—ত্রিপুরা ভাষায় বৈসুক, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিজু নামে এ উৎসব পালন করে থাকে। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের পাশাপাশি পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ঐতিহ্যবাহী দিনটি পালন করে থাকে।
এদিকে বৈসাবি উৎসব শুরু হতে আরও কয়েকদিন বাকি থাকলেও ইতিমধ্যে শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় চলছে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। ঘরে ঘরে চলছে পুরাতন বছর বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি।
পাহাড়ে বাংলা নববর্ষ ও বৈসাবি উদযাপন উপলক্ষে পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের প্রথম দিন চাকমারা বিজু পালন করে থাকেন—প্রথম দিন ফুল বিজু, দ্বিতীয় দিন মূল বিজু এবং নববর্ষের প্রথম দিন গজ্জাপজ্জা বলা হয়। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে খাগড়াছি শহরের প্রাণকেন্দ্র নিউজিল্যান্ড এলাকায় চলছে বৈসাবি মেলা।
জেলা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রুমেল মারমা বলেন, বৈসাবি উৎসবকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির প্রাণকেন্দ্র নিউজিল্যান্ড এলাকায় চলছে বৈসাবি মেলা। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, বৈসাবি উৎসব বিগত বছরগুলোর চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপন হবে। উৎসবে রং ছড়াবে অন্যধরনের। উৎসব উপভোগ করতে আসবে বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক। আমরা অতিথিদের স্বাগত জানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, খাগড়াছড়িতে বৈসাবি উৎসব যাতে নির্বিঘ্নে পালন করা যায়, সে জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, খাগড়াছড়ি জেলাবাসী এবার অতীতের যেকোনো বছরের চেয়ে আরও আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে বৈসাবি উৎসব পালন করবে। তিনি বলেন, বৈসাবি উৎসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর হলেও বাঙালিসহ সব জাতি-গোষ্ঠী এ উৎসব উপভোগ করেন।