ঢাকা ০৬:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo নরসিংদীতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা Logo ‘দুর্গা পূজায় সৌজন্যে ইলিশ ভারতে পাঠানোর অনুমোদন’ Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগার থেকে ভারতীয় নাগরিক রামদেবকে স্বাদেশে প্রত্যাবাসন Logo নিউট্রিশন ইন সিটি ইকোসিস্টেমস প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের চুক্তি স্বাক্ষর Logo বিহারীবস্তিতে দুস্কৃতিকারীর হামলায় শালিসি ব্যক্তিত্ব পূর্ব আহত Logo শিবগঞ্জের দ্বিতীয় দফায় ভাঙ্গনের কবলে পদ্মা পাড়ের মানুষ, ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ Logo কক্সবাজারে ইউনিয়ন হাসপাতালের সাথে ভোরের পাখি সংগঠনের স্বাস্থ্য সেবা চুক্তি Logo জকসু ও সম্পূরক বৃত্তিসহ জবি শাখা বাগছাসের ৫ দাবি Logo ইঞ্জিনিয়ার হারুন উর রশিদ গার্লস কলেজের শিক্ষার্থীদের নবীন বরন Logo জাতীয়তাবাদী তাঁতীদল সিলেট জেলা শাখার প্রচার মিছিল সম্পন্ন

গ্রামে থাকা অবস্থায় ব্যতিক্রম ছিলেন অদম্য জিতু

মোহাম্মদ নান্নু মৃধা, ডামুড্যা (শরীয়তপুর)
  • আপডেট সময় : ৪ বার পড়া হয়েছে

Oplus_16908288

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের ছৈয়ালপাড়া গ্রামে বাস করে সাধারণ এক কৃষক পরিবার। সেই সংসারে আট ভাইবোন। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই সন্তানদের মানুষ করার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা-মা।
মো. আলী আশরাফ ছৈয়াল ও মাজেদা বেগম দম্পতির সেই সংসারের পঞ্চম সন্তান আব্দুর রশিদ জিতু। কিন্তু পরিবারে পঞ্চম হলেও মেধা, যোগ্যতা আর মানবিকতায় তিনি ছিলেন প্রথম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে জয়ী হয়ে জিতু শুধু একটি বিজয় পাননি, বরং পুরো শরীয়তপুরকে গর্বিত করেছেন।
ছোটবেলা থেকেই আলাদা স্বপ্নবাজ জিতুর শৈশব কেটেছে অজপাড়াগাঁয়ে। সেই জীবনেই তিনি ছিলেন ভিন্ন। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় সবার নজর কেড়েছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষায় ব্র্যাক স্কুল থেকে শুরু করে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি, আর এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া ছিল তার মেধার সঠিক পরিচয়। ২০১৪ সালে কোদালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন গোসাইরহাট সরকারি শামসুর রহমান কলেজে। ২০১৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উজ্জ্বল ফলাফল করে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকেই শুরু হয় তার নেতৃত্বের নতুন পথচলা। ছোটবেলা থেকেই জিতুর ঝোঁক ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দিকে। পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক কাজেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। রক্তদাতা সংগঠন “মমতা” গড়ে তুলেছিলেন এলাকার সহপাঠীদের নিয়ে। যখনই কেউ বিপদে পড়েছেন—দুর্ঘটনা, অসুস্থতা কিংবা কোনো দুঃসময়— প্রথমেই পাশে দাঁড়াতেন জিতু।
ফলে এলাকার ছোট-বড়, যুবক-বৃদ্ধ সকলের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন প্রিয়মুখ। শিক্ষক, সহপাঠী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই বলছেন— জিতুর সবচেয়ে বড় শক্তি তার মানবিকতা।
কোদালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন মৃধা বলেন, ছেলেটাকে আমি অনেক আগের থেকেই চিনি। জিতু শুধু বইয়ের ছাত্র ছিল না, মানুষের ছাত্র ছিল। সহপাঠীদের সাহায্য করা, গ্রামের যেকোনো সামাজিক কাজে এগিয়ে আসা—এসব গুণই তাকে আজকের জায়গায় এনে দিয়েছে। আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করি।
গোসাইরহাট সরকারি শামসুর রহমান কলেজের শিক্ষক মো. কামাল হোসেন বলেন, জিতুর যে প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বগুণ আমরা দেখেছিলাম, সেটাই আজ ফল দিয়েছে। সে যেমন পড়াশোনায় ভালো, তেমনি সমাজসেবায়ও অগ্রণী। এই অর্জন তারই প্রাপ্য জিতুর চাচাতো বোন ছাবিহা বলেন, আমাদের ভাই সবসময় অন্যরকম ছিল। নিজের চেয়ে অন্যের কষ্ট নিয়ে বেশি ভাবতো। আজকে সে যখন হাজারো ছাত্রের নেতা, তখন মনে হয় তার ত্যাগ সার্থক হয়েছে।
গ্রাম থেকে ক্যাম্পাস—বিজয়ের আনন্দ আজ শরীয়তপুরের প্রত্যন্ত ছৈয়ালপাড়া গ্রামে শুধু আনন্দই নয়, গর্বও বিরাজ করছে। গ্রামের মানুষজন বলছেন—আমাদের ঘরের ছেলে দেশের নাম করেছে। আমরা চাই এই অঞ্চলের মাটিতে আরও হাজারো জিতু জন্ম নিক।
জিতুর মা মাজেদা বেগম বলেন, আমার ছেলে ছোট থেকেই মানুষের জন্য ছুটে বেড়ায়। আজ সবাই ওর নাম শুনে গর্ব করছে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
জিতুর বোন নিগার সুলতানা জানান, অভাব-অনটনের সংসারে থেকেও সে কখনো হাল ছাড়েনি। সৎ পথে থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেই আজ এ অবস্থানে।
আব্দুর রশিদ জিতুর জয় শুধু একটি পদ জয় নয়, এটি এক সংগ্রামী তরুণের জীবনের অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি। দারিদ্র্য ও সীমাবদ্ধতার দেয়াল ভেঙে মেধা, সততা আর মানুষের জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন—নেতৃত্বের আসন দখল করে যে, সে-ই প্রকৃত নেতা নয়; বরং মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারে যে, সে-ই প্রকৃত নেতা। শরীয়তপুরের মাটিতে জন্ম নেয়া জিতুর এই পথচলা নতুন প্রজন্মের জন্য হবে এক অনন্য প্রেরণা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গ্রামে থাকা অবস্থায় ব্যতিক্রম ছিলেন অদম্য জিতু

আপডেট সময় :

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের ছৈয়ালপাড়া গ্রামে বাস করে সাধারণ এক কৃষক পরিবার। সেই সংসারে আট ভাইবোন। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই সন্তানদের মানুষ করার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা-মা।
মো. আলী আশরাফ ছৈয়াল ও মাজেদা বেগম দম্পতির সেই সংসারের পঞ্চম সন্তান আব্দুর রশিদ জিতু। কিন্তু পরিবারে পঞ্চম হলেও মেধা, যোগ্যতা আর মানবিকতায় তিনি ছিলেন প্রথম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে জয়ী হয়ে জিতু শুধু একটি বিজয় পাননি, বরং পুরো শরীয়তপুরকে গর্বিত করেছেন।
ছোটবেলা থেকেই আলাদা স্বপ্নবাজ জিতুর শৈশব কেটেছে অজপাড়াগাঁয়ে। সেই জীবনেই তিনি ছিলেন ভিন্ন। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় সবার নজর কেড়েছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষায় ব্র্যাক স্কুল থেকে শুরু করে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি, আর এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া ছিল তার মেধার সঠিক পরিচয়। ২০১৪ সালে কোদালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন গোসাইরহাট সরকারি শামসুর রহমান কলেজে। ২০১৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উজ্জ্বল ফলাফল করে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকেই শুরু হয় তার নেতৃত্বের নতুন পথচলা। ছোটবেলা থেকেই জিতুর ঝোঁক ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দিকে। পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক কাজেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। রক্তদাতা সংগঠন “মমতা” গড়ে তুলেছিলেন এলাকার সহপাঠীদের নিয়ে। যখনই কেউ বিপদে পড়েছেন—দুর্ঘটনা, অসুস্থতা কিংবা কোনো দুঃসময়— প্রথমেই পাশে দাঁড়াতেন জিতু।
ফলে এলাকার ছোট-বড়, যুবক-বৃদ্ধ সকলের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন প্রিয়মুখ। শিক্ষক, সহপাঠী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই বলছেন— জিতুর সবচেয়ে বড় শক্তি তার মানবিকতা।
কোদালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন মৃধা বলেন, ছেলেটাকে আমি অনেক আগের থেকেই চিনি। জিতু শুধু বইয়ের ছাত্র ছিল না, মানুষের ছাত্র ছিল। সহপাঠীদের সাহায্য করা, গ্রামের যেকোনো সামাজিক কাজে এগিয়ে আসা—এসব গুণই তাকে আজকের জায়গায় এনে দিয়েছে। আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করি।
গোসাইরহাট সরকারি শামসুর রহমান কলেজের শিক্ষক মো. কামাল হোসেন বলেন, জিতুর যে প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বগুণ আমরা দেখেছিলাম, সেটাই আজ ফল দিয়েছে। সে যেমন পড়াশোনায় ভালো, তেমনি সমাজসেবায়ও অগ্রণী। এই অর্জন তারই প্রাপ্য জিতুর চাচাতো বোন ছাবিহা বলেন, আমাদের ভাই সবসময় অন্যরকম ছিল। নিজের চেয়ে অন্যের কষ্ট নিয়ে বেশি ভাবতো। আজকে সে যখন হাজারো ছাত্রের নেতা, তখন মনে হয় তার ত্যাগ সার্থক হয়েছে।
গ্রাম থেকে ক্যাম্পাস—বিজয়ের আনন্দ আজ শরীয়তপুরের প্রত্যন্ত ছৈয়ালপাড়া গ্রামে শুধু আনন্দই নয়, গর্বও বিরাজ করছে। গ্রামের মানুষজন বলছেন—আমাদের ঘরের ছেলে দেশের নাম করেছে। আমরা চাই এই অঞ্চলের মাটিতে আরও হাজারো জিতু জন্ম নিক।
জিতুর মা মাজেদা বেগম বলেন, আমার ছেলে ছোট থেকেই মানুষের জন্য ছুটে বেড়ায়। আজ সবাই ওর নাম শুনে গর্ব করছে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
জিতুর বোন নিগার সুলতানা জানান, অভাব-অনটনের সংসারে থেকেও সে কখনো হাল ছাড়েনি। সৎ পথে থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেই আজ এ অবস্থানে।
আব্দুর রশিদ জিতুর জয় শুধু একটি পদ জয় নয়, এটি এক সংগ্রামী তরুণের জীবনের অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি। দারিদ্র্য ও সীমাবদ্ধতার দেয়াল ভেঙে মেধা, সততা আর মানুষের জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন—নেতৃত্বের আসন দখল করে যে, সে-ই প্রকৃত নেতা নয়; বরং মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারে যে, সে-ই প্রকৃত নেতা। শরীয়তপুরের মাটিতে জন্ম নেয়া জিতুর এই পথচলা নতুন প্রজন্মের জন্য হবে এক অনন্য প্রেরণা।