চালবাজিতে পিষ্ঠ মানুষ
- আপডেট সময় : ০৩:০৭:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫ ১১ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। গত দু’মাসে কয়েক দফায় দাম বেড়ে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। ১০ টাকা বেড়ে বিআর-২৮ চালের দাম উঠেছে ৬২ টাকায়। নাজিরশাইল ও মোটা চালে বেড়েছে ৪ থেকে ৮ টাকা। খুরচা পর্যায়ের বিক্রেতারা এমন পরিস্থিতিতে দুষছেন সিন্ডিকেটকে। আর মিল মালিকরা বলছেন বড়বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম
প্রবাদ আছে- মাছে ভাতে বাঙ্গালী। সেই ভাতের চালের দাম এখন সবচেয়ে বেশী। পবিত্র রমজানে নিত্য পণ্যের দাম বিগত সময়ের চেয়ে কমেছে, কিন্তু শক্তিশালী সিন্ডিকেটের স্যাটানিক কর্মকৌশলে চালের দামে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব্বোচ মূল্যের এক ঘৃণিত নজির সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতি দেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্মবিত্ত মানুষের ওপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা। চালের এই চালবাজির যাঁতাকলে পিষ্ঠ মানুষ আবারও দেখলো দুর্ভোগ সৃষ্টির এই ডেভিলরা কতটা শক্তিশালী।
সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। গত দু’মাসে কয়েক দফায় দাম বেড়ে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। ১০ টাকা বেড়ে বিআর-২৮ চালের দাম উঠেছে ৬২ টাকায়। নাজিরশাইল ও মোটা চালে বেড়েছে ৪ থেকে ৮ টাকা। খুরচা পর্যায়ের বিক্রেতারা এমন পরিস্থিতিতে দুষছেন সিন্ডিকেটকে। আর মিল মালিকরা বলছেন বড়বড় কর্পোরেট কোম্পানি গুলোর কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম।
চালের এমন দাম বৃদ্ধিতে দামের যাতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছে নিম্মবিত্তরা। এ অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে চাল কিনতে এসেছেন আবুল হোসেন। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরি করেন। তিনি বলেন, আমি যে কামাই করি সেটা তো আর বাড়ছে না। কামাই বাড়ছে না চালের দাম কিন্তু ঠিকই বাড়ছে। চালের দাম বাড়ার কারণে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো খুব কষ্টে আছে।
খুচরার পর্যায়ের বিক্রেতারাও হতবাক চালের এমন চালবাজিতে। একই বাজারের চাল বিক্রেতা কবির হোসেন বলছেন, এবার দাম বেড়েছে মাত্রা ছাড়া। মিলারদের একটাই কথা ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ধান যা পাওয়া যাচ্ছে তার অতিরিক্ত দাম। তাদের উৎপাদন খরচের পর তারা একটা রেট দেয় সে দামে আমরা কিনি। তবে এবার দাম বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। যে মিনিকেট চাউল ছিলো ৬৮ থেকে ৭০ টাকা সেই মিনিকেট এখন হয়ে গেছে ৮৫ টাকা। নাজিরশাইল ৭৫ থেকে হয়ে গেছে ৮৫ টাকা। আটাশ হয়ে গেছে ৬২ টাকা, গুটি স্বর্ণা ছিলো ৪৮ টাকা এখন হয়ে গেছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা।
এদিকে দেশের সব থেকে বড় চালে মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে। সেখানের হাজী এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাজু আহম্মেদ চালের এমন দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন বড় কর্পোরেট কোম্পানি গুলোকে। তিনি বলছেন, হঠাৎ ধানের দাম ২০০ টাকা প্রতি মনে বাড়ছে এ কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো এসে প্রথম পর্যয়ে চাষীদের কাছ থেকে সব ধান তারা কিনে নেয়। আমরা ছোট খাটো যে মিলার আছি তাদের সঙ্গে পুঁজি খাটিয়ে তো আমরা পারছি না। এখন আমাদের কোন মিলারের কাছে কোন ধান মজুদ পাবেন না। এখন আমরা তাদের কাছ থেকে ধান কিনে এনে চাল বানিয়ে বিক্রি করছি। যদিও আমদানিকারকরা বলছে: বন্দরে প্রচুর চাল পড়ে থাকলেও তারা বিক্রি করার জন্য ক্রেতা পাচ্ছেন না।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, আমদানি, মজুত ও বিপণন পরিস্থিতি পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। আমদানি করা চাল কীভাবে বিক্রি হচ্ছে, সেটিও নজরদারি করতে হবে। চালের উৎপাদন ও চাহিদার নির্ভুল তথ্যভান্ডার করতে হবে। তথ্যের সুরক্ষা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বাজার ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল করা দরকার।
তবে প্রতিবছর রোজায় শাকসবিজ, মাছ-মাংসসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও। এবার এসব পণ্যের দর অনেকটা ক্রেতার নাগালে এবং সহনীয় পর্যায়ে। কোনো কোনো পণ্যের দাম এতটাই কম, কৃষকের উৎপাদন খরচও উঠছে না। শুধু উল্টো পথে চালের বাজার। আর কিছুটা সরবরাহ সঙ্কট রয়েছে ভোজ্য তেলের বাজারে।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ইমদাদ ইসলাম জানান, গতকাল মঙ্গলবার ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল নিয়ে দুই জাহাজ বন্দরে ভিড়েছে। এ চাল বন্দর থেকে থালাস হয়ে বাজারে গেলেই চালের দাম অনেকটা কমে আসতে পারে। তিনি সংবাদ কর্মীদের জানান, ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল নিয়ে দুইটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। এরমধ্যে রয়েছে ভারতের ২২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল এবং ভিয়েতনামের ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আতপ চাল।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার বলেন, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ২২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল নিয়ে এমভি তানাইস ড্রিম এবং গত ৩ ফেব্রুয়ারি সম্পাদিত জি টু জি চুক্তির আওতায় (২য় চালান) ভিয়েতনাম থেকে ১২ হাজার ৫০ মেট্রিক টন আতপ চাল নিয়ে এমভি হং লিনহ-১ জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা জানায়, ভিয়েতনাম থেকে জি টু জি ভিত্তিতে মোট ১ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চালানের ১৭ হাজার ৮শ টন চাল এরইমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। জাহাজে রাখা চালের নমুনা পরীক্ষা শেষে চাল খালাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।