ঢাকা ১২:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

জয়পুরহাটে ওসি শূন্য তিন থানা, সেবা বঞ্চিত জনসাধারণ!

এম.এ.জলিল রানা, জয়পুরহাট
  • আপডেট সময় : ১৪৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জয়পুরহাটে বদলি-প্রত্যাহার ও রদবদলের চাপে ওসি শূন্য তিন থানা,অসস্তি ও সেবা বঞ্চিত জনসাধারণ! জেলায় ঘনঘন বদলি ও প্রত্যাহারের ফলে প্রায় ১ মাস যাবৎ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেই ৩ থানায়। সদর, আক্কেলপুর ও ক্ষেতলাল থানায় পরিদর্শক (তদন্ত) পদে কর্মরত কর্মকর্তারাই এখন পালন করছেন ওসির দায়িত্ব । এতে করে একদিকে যেমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে সার্বিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলায় আইনশৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও জনসাধারণকে দ্রুত সেবা দিতে পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হলো থানার ওসি। অথচ আজ এই জেলার ৩ থানাতেই দীর্ঘদিন ধরে সেই পদটিই শূন্য । বিষয়টি অত্যান্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ। এসব থানায় দ্রুত ওসির শূন্য পদ পুরুনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
গেল বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার করনে ২৯ সেপ্টেম্বর একযোগে এ জেলার ৫ থানাতেই ওসি বদলি করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর দু’দিন পর ১ অক্টোবর পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাবের স্বাক্ষরিত এক আদেশে সদর, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল এবং আক্কেলপুর থানায় নতুন ওসি যোগদান করে। সেক্ষেত্রে চিঠিতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি শাহেদ আল মামুনকে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পরিদর্শক কাওসার আলীকে পাঁচবিবি থানার ওসি, জেলা ওআর হেডকোয়াটার্সের পরিদর্শক মশিউর রহমানকে ক্ষেতলাল থানার ওসি, সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে কালাই থানার ওসি এবং সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল ইসলামকে আক্কেলপুর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
যোগদানের মাত্র ৩ মাস ১২ দিনের মাথায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি আক্কেলপুর থানার ওসি মইনুল ইসলাম ও ক্ষেতলাল থানার ওসি মশিউর রহমানের বদলি হয়। এরপর আরিফুল ইসলাম নামে একজন পরিদর্শক ক্ষেতলাল থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেন। এক মাসের মধ্যে আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার করে মাহবুবুর রহমান সরকার নামে আরও একজন পরিদর্শক ওসির দায়িত্ব পান।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির প্রেক্ষিতে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি শাহেদ আল মামুন ও পাঁচবিবি থানার ওসি কাওসার আলীকে বদলি করা হয়। আক্কেলপুর থানার সাবেক ওসি মইনুল ইসলাম আবার পাঁচবিবি থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেন । অক্টোবরে যোগদানের পর থেকে একটানা শুধু মাত্র কালাই থানায় জাহিদ হোসেন এখনও ওসির দায়িত্বে রয়েছেন।
ওসি শাহেদ আল মামুন বদলির পর সদর থানার দায়িত্ব পান নূর আলম সিদ্দিক। তাকেও বদলি করা হয়। চলতি বছরের ৫ মে ক্ষেতলাল থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করা খন্দকার ফরিদ হোসেনকে আবার এক মাস না যেতেই তাকে বদলি করা হয় সদর থানায় । কিন্তু ২২ দিন পর তাকেও প্রত্যাহার করে সংযুক্ত করা হয় পুলিশ লাইন্সে। তার কক্ষে ‘জুতা পায়ে প্রবেশ নিষেধ’ লেখা টানানো নিয়ে সমালোচিত হন। তবে তার প্রত্যাহার নিয়ে একটি সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার ফরিদ হোসেন ৩ দিনের ছুটি শেষে এ বছরের গত ৪ জুলাই থানায় যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেদিন যোগদান করেননি। এদিকে ৫ জুলাই জয়পুরহাট জেলায় আসেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ওইদিন দুপুরের দিকে খন্দকার ফরিদ হোসেন কর্মস্থলে হাজির হন। তিনি তার দায়িত্বে অবহেলা করেন। এরপর ওই দিনই প্রশাসনিক কারণের কথা উল্লেখ করে এসপি অফিস আদেশ জারি করে তাকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করেন ।
একইভাবে, আক্কেলপুর থানার সাবেক ওসি মইনুলের পর দায়িত্ব পাওয়া আনিসুর রহমানও প্রত্যাহার হন। এরপরে দায়িত্ব পান তদন্ত পরিদর্শক মাসুদ রানা। কিন্তু বিভাগীয় মামলায় তাকে পদাবনতি দিয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) করে থানার দায়িত্ব থেকে তাকে গত ২৩ জুন সরিয়ে নেওয়া হয়।
গত ১৩ জুন ওসি হিসেবে হাসমত আলী ক্ষেতলাল থানার যোগদান করেন। কিন্তু তিনি ২০১২ সালে জয়পুরহাট থানার এসআই থাকাকালীন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের মিছিল লাঠিচার্জ করেন। এসময় গুলিতে শিবিরের এক কর্মী নিহত হন। পুরাতন ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ২৬ জুন সকালে ওসি হাসমত আলী থানার পরির্দশক (তদন্ত) কামাল হোসেনকে দায়িত্ব বুঝে দিয়ে গোপনে পলায়ন করেন । অবশ্য থানা পরে তাকে প্রত্যাহার দেখায়।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর ,আক্কেলপুর ও ক্ষেতলাল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদায়ন করা হয়নি। জয়পুরহাট সদর থানার পরির্দশক (তদন্ত) নাজমুল কাদের, আক্কেলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম ও ক্ষেতলাল থানার পরির্দশক (তদন্ত) কামাল হোসেন এখন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশের কোন একটি সূত্র বলছেন, ঘনঘন ওসি বদলি ও প্রত্যাহারের ঘটনায় বাইরে থেকে এ জেলায় অভিজ্ঞ কোনো ওসি আসার আগ্রহ প্রকাশ করছেনা না। আর এ কারণেই একমাস হলেও ৩ থানায় ওসি পদায়ন করা যায়নি।
নাম না বলার শর্তে ওসিবিহীন এক থানার পরির্দশক (তদন্ত) বলেন, ওসি না থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়েছে। সবদিক দেখতে হচ্ছে। সুযোগ মিলছে না একটু বিশ্রাম নেবার ।
ক্ষেতলাল থানার বাসিন্দা আজিজার রহমান ও বেলাল হোসেন বলেন, গত ১০ মাসে ৫ জন ওসি বদলি ও প্রত্যাহার হয়েছেন। এখন থানায় কোন ওসি নেই। একটি থানায় ওসি না থাকলে অন্যদের চাপের মুখে তো পড়তেই হয়। এই থানায় যাদের ওসি হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে বেশিভাগ ওসি হিসেবে অনভিজ্ঞ ও বির্তকিত ছিলেন। তাই ঘনঘন ওসি বদলি ও প্রত্যহারের কারনেই এলাকার দুর্নাম হচ্ছে। এই থানায় একজন অভিজ্ঞ ওসি দ্রুত আসা প্রয়োজন।
জয়পুরহাট শহরের বাসিন্দা বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ আলী আহসান মুক্তা বলেন, জেলার গুরুত্বপূর্ণ সদর থানা। এখানে প্রায় ১ মাস ধরে ওসি নেই, এটি দুঃখজনক। একজন নিয়মিত কর্মকর্তা না থাকলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এছাড়া অনেক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত থাকে, সেগুলোও নেওয়া যায় না। আবার মামলা-মকর্দ্দমা করতে গেলেও প্রয়োজন। জনগণকে নিয়ে কাজ করতে হয়। এজন্য বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। দ্রুত সৎ, অভিজ্ঞ এবং জুলাই ধারণ করেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এখানে আসা উচিত বলে মনে করেন
তিনি।
নাম না বলার শর্তে জেলার ইমাম,শিক্ষক,সমাজ সেবক ও সুধীজন সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, জুলাই-আগষ্ট এর পর দেশের আইনশৃঙ্খলার যথেষ্ট অবনতি হয়েছে,যা এখনো স্বাভাবিক হয়নি।এছাড়াও জয়পুরহাট জেলা সীমান্তের কোল ঘেষা হওয়ায় এ জেলায় অপরাধ প্রবনতা এমনিতেই একটু বেশি,এর পর জেলার পাঁচ থানার তিনটিতেই নেই ওসি।বিষয়টি অত্যান্ত অসস্তিকর ও উদ্বেগের, আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত এর সমাধান আশা করছি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানিয়েছেন, জেলায় এখন এমন অভিজ্ঞ কেউ নেই। আর তাছাড়া ওসি পদের জন্য শর্ত থাকে। শর্ত পূরণ হলে থানায় ওসিদের দেওয়া হবে। আর ঢাকা (পুলিশ হেডকোয়াটার্স) থেকে (অভিজ্ঞ পরিদর্শক) এ জেলায় এখনও কাউকে দেওয়া হয়নি। আমি আশা করছি খুব দ্রুতই তিন থানায় শূণ্য পদে অভিজ্ঞ ওসি পদায়ন করা সম্ভব হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জয়পুরহাটে ওসি শূন্য তিন থানা, সেবা বঞ্চিত জনসাধারণ!

আপডেট সময় :

জয়পুরহাটে বদলি-প্রত্যাহার ও রদবদলের চাপে ওসি শূন্য তিন থানা,অসস্তি ও সেবা বঞ্চিত জনসাধারণ! জেলায় ঘনঘন বদলি ও প্রত্যাহারের ফলে প্রায় ১ মাস যাবৎ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেই ৩ থানায়। সদর, আক্কেলপুর ও ক্ষেতলাল থানায় পরিদর্শক (তদন্ত) পদে কর্মরত কর্মকর্তারাই এখন পালন করছেন ওসির দায়িত্ব । এতে করে একদিকে যেমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে সার্বিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলায় আইনশৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও জনসাধারণকে দ্রুত সেবা দিতে পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হলো থানার ওসি। অথচ আজ এই জেলার ৩ থানাতেই দীর্ঘদিন ধরে সেই পদটিই শূন্য । বিষয়টি অত্যান্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ। এসব থানায় দ্রুত ওসির শূন্য পদ পুরুনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
গেল বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার করনে ২৯ সেপ্টেম্বর একযোগে এ জেলার ৫ থানাতেই ওসি বদলি করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর দু’দিন পর ১ অক্টোবর পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাবের স্বাক্ষরিত এক আদেশে সদর, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল এবং আক্কেলপুর থানায় নতুন ওসি যোগদান করে। সেক্ষেত্রে চিঠিতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি শাহেদ আল মামুনকে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পরিদর্শক কাওসার আলীকে পাঁচবিবি থানার ওসি, জেলা ওআর হেডকোয়াটার্সের পরিদর্শক মশিউর রহমানকে ক্ষেতলাল থানার ওসি, সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে কালাই থানার ওসি এবং সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল ইসলামকে আক্কেলপুর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
যোগদানের মাত্র ৩ মাস ১২ দিনের মাথায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি আক্কেলপুর থানার ওসি মইনুল ইসলাম ও ক্ষেতলাল থানার ওসি মশিউর রহমানের বদলি হয়। এরপর আরিফুল ইসলাম নামে একজন পরিদর্শক ক্ষেতলাল থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেন। এক মাসের মধ্যে আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার করে মাহবুবুর রহমান সরকার নামে আরও একজন পরিদর্শক ওসির দায়িত্ব পান।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির প্রেক্ষিতে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি শাহেদ আল মামুন ও পাঁচবিবি থানার ওসি কাওসার আলীকে বদলি করা হয়। আক্কেলপুর থানার সাবেক ওসি মইনুল ইসলাম আবার পাঁচবিবি থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেন । অক্টোবরে যোগদানের পর থেকে একটানা শুধু মাত্র কালাই থানায় জাহিদ হোসেন এখনও ওসির দায়িত্বে রয়েছেন।
ওসি শাহেদ আল মামুন বদলির পর সদর থানার দায়িত্ব পান নূর আলম সিদ্দিক। তাকেও বদলি করা হয়। চলতি বছরের ৫ মে ক্ষেতলাল থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করা খন্দকার ফরিদ হোসেনকে আবার এক মাস না যেতেই তাকে বদলি করা হয় সদর থানায় । কিন্তু ২২ দিন পর তাকেও প্রত্যাহার করে সংযুক্ত করা হয় পুলিশ লাইন্সে। তার কক্ষে ‘জুতা পায়ে প্রবেশ নিষেধ’ লেখা টানানো নিয়ে সমালোচিত হন। তবে তার প্রত্যাহার নিয়ে একটি সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার ফরিদ হোসেন ৩ দিনের ছুটি শেষে এ বছরের গত ৪ জুলাই থানায় যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেদিন যোগদান করেননি। এদিকে ৫ জুলাই জয়পুরহাট জেলায় আসেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ওইদিন দুপুরের দিকে খন্দকার ফরিদ হোসেন কর্মস্থলে হাজির হন। তিনি তার দায়িত্বে অবহেলা করেন। এরপর ওই দিনই প্রশাসনিক কারণের কথা উল্লেখ করে এসপি অফিস আদেশ জারি করে তাকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করেন ।
একইভাবে, আক্কেলপুর থানার সাবেক ওসি মইনুলের পর দায়িত্ব পাওয়া আনিসুর রহমানও প্রত্যাহার হন। এরপরে দায়িত্ব পান তদন্ত পরিদর্শক মাসুদ রানা। কিন্তু বিভাগীয় মামলায় তাকে পদাবনতি দিয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) করে থানার দায়িত্ব থেকে তাকে গত ২৩ জুন সরিয়ে নেওয়া হয়।
গত ১৩ জুন ওসি হিসেবে হাসমত আলী ক্ষেতলাল থানার যোগদান করেন। কিন্তু তিনি ২০১২ সালে জয়পুরহাট থানার এসআই থাকাকালীন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের মিছিল লাঠিচার্জ করেন। এসময় গুলিতে শিবিরের এক কর্মী নিহত হন। পুরাতন ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ২৬ জুন সকালে ওসি হাসমত আলী থানার পরির্দশক (তদন্ত) কামাল হোসেনকে দায়িত্ব বুঝে দিয়ে গোপনে পলায়ন করেন । অবশ্য থানা পরে তাকে প্রত্যাহার দেখায়।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর ,আক্কেলপুর ও ক্ষেতলাল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদায়ন করা হয়নি। জয়পুরহাট সদর থানার পরির্দশক (তদন্ত) নাজমুল কাদের, আক্কেলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম ও ক্ষেতলাল থানার পরির্দশক (তদন্ত) কামাল হোসেন এখন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশের কোন একটি সূত্র বলছেন, ঘনঘন ওসি বদলি ও প্রত্যাহারের ঘটনায় বাইরে থেকে এ জেলায় অভিজ্ঞ কোনো ওসি আসার আগ্রহ প্রকাশ করছেনা না। আর এ কারণেই একমাস হলেও ৩ থানায় ওসি পদায়ন করা যায়নি।
নাম না বলার শর্তে ওসিবিহীন এক থানার পরির্দশক (তদন্ত) বলেন, ওসি না থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়েছে। সবদিক দেখতে হচ্ছে। সুযোগ মিলছে না একটু বিশ্রাম নেবার ।
ক্ষেতলাল থানার বাসিন্দা আজিজার রহমান ও বেলাল হোসেন বলেন, গত ১০ মাসে ৫ জন ওসি বদলি ও প্রত্যাহার হয়েছেন। এখন থানায় কোন ওসি নেই। একটি থানায় ওসি না থাকলে অন্যদের চাপের মুখে তো পড়তেই হয়। এই থানায় যাদের ওসি হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে বেশিভাগ ওসি হিসেবে অনভিজ্ঞ ও বির্তকিত ছিলেন। তাই ঘনঘন ওসি বদলি ও প্রত্যহারের কারনেই এলাকার দুর্নাম হচ্ছে। এই থানায় একজন অভিজ্ঞ ওসি দ্রুত আসা প্রয়োজন।
জয়পুরহাট শহরের বাসিন্দা বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ আলী আহসান মুক্তা বলেন, জেলার গুরুত্বপূর্ণ সদর থানা। এখানে প্রায় ১ মাস ধরে ওসি নেই, এটি দুঃখজনক। একজন নিয়মিত কর্মকর্তা না থাকলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এছাড়া অনেক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত থাকে, সেগুলোও নেওয়া যায় না। আবার মামলা-মকর্দ্দমা করতে গেলেও প্রয়োজন। জনগণকে নিয়ে কাজ করতে হয়। এজন্য বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। দ্রুত সৎ, অভিজ্ঞ এবং জুলাই ধারণ করেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এখানে আসা উচিত বলে মনে করেন
তিনি।
নাম না বলার শর্তে জেলার ইমাম,শিক্ষক,সমাজ সেবক ও সুধীজন সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, জুলাই-আগষ্ট এর পর দেশের আইনশৃঙ্খলার যথেষ্ট অবনতি হয়েছে,যা এখনো স্বাভাবিক হয়নি।এছাড়াও জয়পুরহাট জেলা সীমান্তের কোল ঘেষা হওয়ায় এ জেলায় অপরাধ প্রবনতা এমনিতেই একটু বেশি,এর পর জেলার পাঁচ থানার তিনটিতেই নেই ওসি।বিষয়টি অত্যান্ত অসস্তিকর ও উদ্বেগের, আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত এর সমাধান আশা করছি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানিয়েছেন, জেলায় এখন এমন অভিজ্ঞ কেউ নেই। আর তাছাড়া ওসি পদের জন্য শর্ত থাকে। শর্ত পূরণ হলে থানায় ওসিদের দেওয়া হবে। আর ঢাকা (পুলিশ হেডকোয়াটার্স) থেকে (অভিজ্ঞ পরিদর্শক) এ জেলায় এখনও কাউকে দেওয়া হয়নি। আমি আশা করছি খুব দ্রুতই তিন থানায় শূণ্য পদে অভিজ্ঞ ওসি পদায়ন করা সম্ভব হবে।