জয়পুরহাটে হারিয়ে যেতে বসেছে মুঘল আমলের লকমা জমিদারবাড়ি
- আপডেট সময় : ৭২ বার পড়া হয়েছে
জয়পুরহাটে হারিয়ে যেতে বসেছে মুঘল আমলের লকমা জমিদারবাড়ি লকমা জমিদারবাড়ি। জেলার পাঁচবিবি উপজেলার লকমা জমিদার বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের অভাবে আজ ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই জমিদার বাড়িটি এখন শুধুই স্মৃতি।
জানা গেছে, পাঁচবিবি থেকে প্রায় ৭ কি:মি: পশ্চিমে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পিলার ঘেঁষে মাত্র ৪ গজ দূরে উপজেলার সীমান্তবর্তী কড়িয়া গ্রামে এ জমিদার বাড়িটি অবস্থিত।
জনশ্রুতি আছে, ধ্বংস প্রায় লকমা জমিদার বাড়িটি জয়পুর গভর্নমেন্ট ক্রাউন স্টেটের অধীনস্থ ছিল এবং জমিদার বাড়িটি কে কবে নির্মাণ করেছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও অনেকের ধারণা প্রায় ৪-৫শ বছর আগে জমিদার হাদী মামুন চৌধুরী এটি নির্মাণ করেছিল।
জমিদার বাড়ির দেয়াল সংলগ্ন উত্তর পশ্চিম কোণে একটি ক্ষুদ্র খিড়কি পুকুর আছে। পুকুরের পানি কালো। প্রায় ৩ একর জমির উপর দু’ভাগে নির্মিত এ জমিদার বাড়ি। লোহার রড ছাড়াই শুধু ইট, চুন সুড়কি দিয়ে নির্মিত ৩তলা এ ভবনটি। এ জমিদার বাড়ির একতলা ইতোমধ্যেই মাটির নিচে দেবে গেছে । বাড়িটিতে প্রায় ২৫/৩০টি কক্ষর য়েছে। যার ভিতরে রয়েছে আরো ছোট ছোট কুঠুরি। হাতিশাল, ঘোড়াশাল, একটি কাচারিবাড়ি সবই ছিল এখানে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ শুধু কালের সাক্ষী হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় নীরবে দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্ত বর্তমানে এলাকার কিছু উদ্যমী যুবক এটি পরিষ্কার করে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত সীমান্ত ঘেঁষা, নয়নাভিরাম প্রাচীন জমিদার এ বাড়িটি দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি সহায়তার মাধমে এটি সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
কড়িয়া মাদরাসার ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাদ্দেস আলী বলেন, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহাসিক এই স্মৃতিটি আজ ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। খুব শিগগিরই এর সংরক্ষণ দরকার।
২০১৫ সালে তৎকালিন পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরউদ্দিন আল ফারুক জানিয়েছিলেন, জমিদার বাড়িটি ব্যক্তি মালিকাধীন হওয়ায় আইনী জটিলতায় তা সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
জমিদার বাড়িটি দেখতে আসা দর্শনার্থী, দিনাজপুর সদরের মিজানুর রহমান, সৈয়দপুরের সেনা সদস্য আলঙ্গীর হোসেন ,নওগাঁর বদলগাছীর শিক্ষক আলাউদ্দীন সহ অনেকেই জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়ি বা এই স্মৃতি চিহ্নটি আমার অনেক দূর থেকে দেখতে এসেছি,আমাদের মতো আরও অনেকেই এখানে আসে।স্থাপনাটি সংরক্ষণ করা জরুরী, আর এখানে কোন বসার পরিবেশও নেই ,খাবারের কোন হোটেল-রেষ্টুরেন্টও নেই আর নেই কোন প্রসাব-পায়খার ব্যবস্থা। এখন আধুনিক সময়,দর্শনার্থীর কথা মাথায় রেখে এই ব্যবস্থাগুলো করা সময়ের দাবি বলে আমরা মনে করি।
এবিষয়ে সরকারের কোন পরিকল্পনা আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বর্তমান পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এসিল্যাণ্ড মো: বেলায়েত হোসেন বলেন,এবিষয়ে সরকারে কোন পরিকল্পনা আছে কি না তা আমার জানা নেই,আমি ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে আছি,যে স্যার ছিল তিনি চলে গেছেন,বিষয়টি দেখতে হবে। আর এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানাতে হবে বলেও জানান তিনি।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কড়িয়া গ্রামে লকমা জমিদার বাড়িটি অবস্থিত, যা স্থানীয়ভাবে চৌধুরী বাড়ি নামে পরিচিত। এটি একটি ঐতিহাসিক ভবন যা বর্তমানে জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে, তবে এখনো এর কিছু অংশ উত্তরাধিকারীদের দখলে রয়েছে এবং কিছু শরীক সেখানে বসবাস করেন।
অবস্থান: পাঁচবিবি উপজেলা সদরের প্রায় ৮-৯ কিলোমিটার পশ্চিমে, ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে লকমা নামক গ্রামে অবস্থিত।
বর্তমান অবস্থা: বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
কর্তৃত্ব: বাড়িটি বর্তমানে এর উত্তরাধিকারীদের দখলে রয়েছে এবং ১২ থেকে ১৩ জন শরীক সেখানে বসবাস করেন।
অন্যান্য: জমিদার বাড়ির কাছেই একটা কাচারী বাড়ি রয়েছে যা জঙ্গলে ঘেরা।


















