জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা সমন্বিত রাখতে আপোষহীন থাকবে জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান

- আপডেট সময় : ০৩:৩৬:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১০৬ বার পড়া হয়েছে
বৈষম্যহীন- ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম, মানবিক ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত গড়ে তুলতে আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি শুক্রবার বিকেলে নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে নরসিংদী জেলা জামায়াত আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নরসিংদী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মোঃ মোছলেহুদ্দীন এর সভাপতিত্বে ও নরসিংদী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা আমজাদ হোসেন এর সঞ্চালনায় আয়োজিত এ জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আ.ফ.ম আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আবদুল জব্বার, মাওলানা আব্দুল মান্নান, এড. মশিউল আলম, মুফতি রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মকবুল হোসেন, আজম রুহুল কুদ্দুস, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, মাওলানা মমিনুল হক, হাফেজ আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে মাইনউদ্দিন-ফখরুউদ্দিনের দুশাসনের দুই বছর পরবর্তী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সাড়ে ১৫ বছর, এই সাড়ে ১৭ বছর ভীষণ কষ্টের মধ্যে ছিল এ দেশের মানুষ। এই সময়ের ভিতরে অসংখ্য মানুষ খুন, গুম, অপহরণ ও আয়না ঘরের বাসিন্দা হয়েছেন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অযথা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পুরে রেখেছে। অনেকে চাকুরী, ব্যবসা হারিয়েছেন, অনেকের বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের উপর বাড়তি জুলুম করা হয়েছে। এক এক করে জামায়াতের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। বিচারের নামে তামশা করে কাউকে দেয়া হয়েছে ফাঁসি, কাউকে ঠেলে দেয়া হয়েছে মৃত্যুর দিকে।
এদেশে অবশ্যই নির্বাচন হবে, কিন্তু যেন তেনভাবে নির্বাচন হতে দেয়া যাবে না। নির্বাচনের মত নির্বাচন চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তবে নির্বাচনের পূর্বে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। ভুয়া ভোটার বাদ দিতে হবে। মৃত্যুবরণকরী ভোটারের নাম বাদ দিতে হবে। ভোটারের যোগ্য হয়েছে এমন সকলকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভক্ত করতে হবে। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, পরে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা তথা ইউনিয়ন কার্যালয়গুলো পর্যন্ত তালা বদ্ধ করে রেখেছে। জামায়াত একমাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয়- ফ্যাসিবাদ আপাতত বিদায় নিয়েছে, নিবন্ধনটি আমরা এখনো ফিরে পাইনি। এখনো সেই নিবন্ধন ফিরে পেতে আইনী লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়। আমাদের দেশ প্রেম ও ফ্যাসিবাদের কাছে মাথানত না করার কারণে আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছিল। আমাদের নিবন্ধনটি ফ্যাসিবাদের পরিবর্তনের সাথে সাথে দিয়ে দেয়া উচিৎ ছিল।
মিথ্যা মামলায় যত নেতৃবৃন্দকে আটক করা হয়েছিল, একে একে সকলেই মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়- বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী এটিএম আজহারুল ইসলামকে এখনো মুক্তি পাননি। জনতার দাবি তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে। যারা জনগণের সম্পদ লুটে গত সাড়ে ১৫ বছর আমাদের দেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এদেশকে তারা তাদের দেশ মনে করে না। তারা রাজনীতি করে বাংলাদেশে, বউ-বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বিদেশে। কানাডায় তারা বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ তারা চুরি করে নিয়ে গেছে, অথচ তারা অন্যদেরকে চোর বলতো। শেখ হাসিনা সকল চোরদের মা, এবার মাও পালিয়েছে, চোরেরাও পালিয়েছে।
হাসিনার সময়ে বিচারকরা আদালতে বসে বিচারের নামে একেক জনের বিরুদ্ধে হত্যা রায় দিয়ে, রাতে গিয়ে টেলিভিশনের টকশোতে বসে গর্ব করে বলতো ‘আজকে নিজামীকে, কালকে গোলাম আজমকে, পরশুদিন সাঈদিকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে এসেছি। এদের মধ্যে কেউ কেউ বলতো, আমরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। বিচারকের চেয়ারে বসে যারা রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে জাতির কলংক। সে বিচারক হতে পারেনা। তিনি নরসিংদীর জনগণের দাবির সাথে একাত্ততা পোষণ করে নরসিংদীতে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহবান জানান।