টাঙ্গাইলে সরু নদীতে বাল্কহেডের দাপাদাপিতে ভাঙছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি

- আপডেট সময় : ২৬ বার পড়া হয়েছে
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নিউ ধলেশ্বরী নদীতে বালুবাহী ভারী বাল্কহেডের চলাচলের কারণে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ১০টি গ্রামের অন্তত শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। কোন এক অদৃশ্য কারণে ভূক্তভোগীদের আর্তনাদ পৌঁছায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষের কর্ণকুহরে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে টাঙ্গাইলের একটি প্রভাবশালী মহল স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন শতাধিক বালুবাহী বাল্কহেড দিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে নিউ ধলেশ্বরী নদী দিয়ে চলাচল করে। ফলে কালিহাতী উপজেলার বালিয়া চরা, চর ভাবলা, ধলা টেঙ্গর, শল্লা, জোকারচর, হাতিয়া, দশকিয়া, বালিয়াচড়া, আনালিয়াবাড়ী, বেনুকুর্শা, বেরিপটল, কদিম হামজানি, চর হামজানীসহ নদীর দুই পাড়ের অন্তত ২০-২৫টি গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও শত শত বিঘা ফসলী জমি ভাঙনের শিকার পড়ে।
তারা আরো জানান, এসব ভারী নৌযানের চলাচলের কারণে তীব্র ঢেউয়ে নদীর দুই পাড়ে ব্যাপক ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা। বার বার বাঁধা দিলেও ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বালু ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। উল্টো ওই এলাকার বাসিন্দাদের এলেঙ্গ বাসস্ট্যান্ডস্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় বালু ব্যবসায়ীরা।
চলতি বছরে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামের জুব্বার মুন্সি, আনোয়ার হোসেন, আলী, আষান আলী, শাহাদৎ, সাহেব আলী, বারেক, ফিরোজা, ছাত্তার, আবু বকর, গাজী, মিনহাজ, শাহ আলম, মাজেদ আলী, কোরবান আলীসহ বহু পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একইভাবে হাতিয়া গ্রামের মুজাম, মোকাদ্দেছ, আজাহার, নয়ান আলী, রাজ্জাক, শহিদ, রফিকুল, তুলা মিয়া প্রমুখসহ অগণিত মানুষ আজ নিঃস্ব। ক্ষতিগ্রস্তরা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বালিয়া চরা গ্রামের বাসিন্দারা।
নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা ধলাটেংগর, পাথাইলকান্দি, এলেঙ্গা ও পৌলি এলাকার প্রায় ২০টি বালুঘাটে বালু পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, তাদের প্রভাবেই হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামের যেসব ব্যবসায়ীর এলেঙ্গাতে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, সেগুলো জোরপূর্বক ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। কিন্তু বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এখনও এসব গ্রামের বাসিন্দাদের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে বালু ব্যবসায়ীরা। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভাঙন কবলিত মানুষেরা। আর এই ঘটনায় নিরাপত্তার অভাবে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারছেন না বলে জানান ওই গ্রামগুলোর বাসিন্দারা।
এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম সরকার দোকান বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি অবশ্যই অন্যায় করেছে তারা। পরবর্তীতে আমি ঘটনাটি জানতে পেরে বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দোকানগুলো খুলে দেই। আর কোন সমস্যা হয় নাই।
সরু নদীতে বাল্কহেড চলাচলা নিয়ে কোন বিধিনিষেধ আছে কিনা, থাকলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে? প্রশ্নের উত্তরে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে অনেক কাজ করেছি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হয়েছে, যৌথ বাহিনীর অভিযানও করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যখন অভিযান করি, তখন বন্ধ থাকে। আবার চালু হয়। এটা এ অবস্থাতেই আছে। আমরা চেষ্টায় আছি এটাকে নির্মূল করা জন্য।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত নই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”