ঢাকা ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢেলে সাজানো হচ্ছে রাষ্ট্রের ৩ বিভাগ

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ১৩৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে ঢেলে সাজানো হচ্ছে ঢেলে সাজানো হচ্ছে বিচার বিভাগ পুলিশ এবং প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নবনিযুক্ত ২৫ জন বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। এর দুইদিন আগে গত সোমবার একযোগে বিচার বিভাগের ২৩০ জন বিচারক, বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের ৫২ জন পুলিশ কর্মকর্তা বদলি এবং ৬ জেলায় ৬ জন ডিসিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সাবেক একাধিক আমলা বলেছেন, এ বদলি এবং পদায়ন হচ্ছে, নির্বাচন পুর্বকালিন নির্বাচন সাফল্যের লক্ষে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ প্রক্রিয়াকে বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং পুলিশে সংস্কারের অংশ হিসেবে বলা যেতে পারে। এটি বর্তমান সময়ে সরকারের একটি ভালো পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি। দীর্ঘদিন পর হলেও দেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ একটি র্বিাচন জাতিকে উপহার দেয়া বলে প্রধান উপদেষ্টার লক্ষমাত্রা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ করেই দেশের বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশে গত সোমবার বড় রদবদল হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার ২৩০ বিচারককে বদলি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। একইসাথে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার (এসপি)পদে ৫২ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন এবং ৬টি জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার।আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলা ও দায়রা জজসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার ২৩০ বিচারককে বদলি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তে বদলিকৃতদের মধ্যে ১২ জন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার ৪১ বিচারক, অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ পদমর্যাদার ৫৩ বিচারক, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার ৪০ বিচারক, সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ পদমর্যাদার ৯৬ জন বিচারক বদলি করা হয়েছে। বদলিকৃত বিচারকরা দেশের বিভিন্ন আদালতে কর্মরত ছিলেন। আবার অনেকে প্রেষণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে তাদের বদলি করতে পৃথক পৃথক প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিটিতে (জিএ) প্রেরণ করে। জিএ কমিটির অনুমোদন ক্রমে তা চূড়ান্ত করা হয়। এই অনুমোদনের পরই বদলির ফাইল পুনরায় মন্ত্রণালয়ে যায়। এরপরই প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়।
এছাড়া একই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার (এসপি)পদে ৫২ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করে তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চলতি দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ পুলিশের ১২ জনকে অতিরিক্ত আইজিপি করা হয়েছে। সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ছয়জনকে নিয়মিত ডিআইজি করা হয়েছে। অপর এক প্রজ্ঞাপনে ১২ জন ডিআইজির দপ্তর বদল করা হয়েছে। অপর একটি প্রজ্ঞাপনে পুলিশ সুপার মর্যাদার ১৪ জনকে বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে।
এদিকে পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর, নেত্রকোণা ও খুলনায় নতুন ছয় ডিসিকে নিয়োগ ও বদলি করা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে তিন জেলার ডিসিকে অন্য তিন জেলায় বদলি করা হয়েছে। আর তিন জেলায় তিনজন উপসচিবকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরীকে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এবং পটুয়াখালীর ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক করা হয়েছে। মেহেরপুরের ডিসি সিফাত মেহনাজকে কুড়িগ্রামের, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালামকে মেহেপুরের, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার (উপসচিব) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামানকে নেত্রকোণার এবং কুষ্টিয়ার ডিসি মো. তৌফিকুর রহমানকে খুলনার জেলা প্রশাসক করা হয়েছে।
অপরদিকে খুলনার ডিসিকে বদলি করায় স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, খুলনার ডিসি সাইফুল ইসলামকে হঠাৎ বদলি করে জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। খুলনায় নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে এলাকায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। খুলনা জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, উন্নয়ন কর্মকা-, নিবিড় জনসেবা এবং জনগণের দারগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তার সাফল্য ছিল অভাবনীয়। তা সত্ত্বেও এ বদলিতে হতাশা প্রকাশ করে জেলাবাসীরা বলছেন- কার স্বার্থে ও প্ররোচনায় এ বদলি হলো তা রহস্যজনক। ক্ষুব্ধ খুলনার অধিকাংশ মানুষ। গতকাল খুলনার বিভিন্ন স্থানে তাকে ডিসি পদে বহাল রাখার দাবি জানিয়ে সভা হয়েছে।
আকষ্মিক বদলি, প্রদায়ন ও নিয়োগের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় সেনাবাহিনীর ৬০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৬০ হাজার সেনা সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। একইসঙ্গে তিনি জানান, নির্বাচনকে ঘিরে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক রদবদলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে প্রশাসনের রদবদল হবে। সব জায়গায় নয়, যেখানে প্রয়োজন সেখানে পরিবর্তন আনা হবে। ইতোমধ্যে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে চলমান রয়েছে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাস থেকে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হবে। নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে সমন্বয় জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। এই সিদ্ধান্তগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতিকে একটি কাঠামোবদ্ধ রূপ দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বদলি প্রদায়ন এবং নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ঢেলে সাজানো হচ্ছে রাষ্ট্রের ৩ বিভাগ

আপডেট সময় :

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে ঢেলে সাজানো হচ্ছে ঢেলে সাজানো হচ্ছে বিচার বিভাগ পুলিশ এবং প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নবনিযুক্ত ২৫ জন বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। এর দুইদিন আগে গত সোমবার একযোগে বিচার বিভাগের ২৩০ জন বিচারক, বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের ৫২ জন পুলিশ কর্মকর্তা বদলি এবং ৬ জেলায় ৬ জন ডিসিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সাবেক একাধিক আমলা বলেছেন, এ বদলি এবং পদায়ন হচ্ছে, নির্বাচন পুর্বকালিন নির্বাচন সাফল্যের লক্ষে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ প্রক্রিয়াকে বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং পুলিশে সংস্কারের অংশ হিসেবে বলা যেতে পারে। এটি বর্তমান সময়ে সরকারের একটি ভালো পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি। দীর্ঘদিন পর হলেও দেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ একটি র্বিাচন জাতিকে উপহার দেয়া বলে প্রধান উপদেষ্টার লক্ষমাত্রা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ করেই দেশের বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশে গত সোমবার বড় রদবদল হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার ২৩০ বিচারককে বদলি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। একইসাথে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার (এসপি)পদে ৫২ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন এবং ৬টি জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার।আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলা ও দায়রা জজসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার ২৩০ বিচারককে বদলি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তে বদলিকৃতদের মধ্যে ১২ জন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার ৪১ বিচারক, অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ পদমর্যাদার ৫৩ বিচারক, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার ৪০ বিচারক, সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ পদমর্যাদার ৯৬ জন বিচারক বদলি করা হয়েছে। বদলিকৃত বিচারকরা দেশের বিভিন্ন আদালতে কর্মরত ছিলেন। আবার অনেকে প্রেষণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে তাদের বদলি করতে পৃথক পৃথক প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিটিতে (জিএ) প্রেরণ করে। জিএ কমিটির অনুমোদন ক্রমে তা চূড়ান্ত করা হয়। এই অনুমোদনের পরই বদলির ফাইল পুনরায় মন্ত্রণালয়ে যায়। এরপরই প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়।
এছাড়া একই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার (এসপি)পদে ৫২ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করে তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চলতি দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ পুলিশের ১২ জনকে অতিরিক্ত আইজিপি করা হয়েছে। সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ছয়জনকে নিয়মিত ডিআইজি করা হয়েছে। অপর এক প্রজ্ঞাপনে ১২ জন ডিআইজির দপ্তর বদল করা হয়েছে। অপর একটি প্রজ্ঞাপনে পুলিশ সুপার মর্যাদার ১৪ জনকে বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে।
এদিকে পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর, নেত্রকোণা ও খুলনায় নতুন ছয় ডিসিকে নিয়োগ ও বদলি করা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে তিন জেলার ডিসিকে অন্য তিন জেলায় বদলি করা হয়েছে। আর তিন জেলায় তিনজন উপসচিবকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরীকে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এবং পটুয়াখালীর ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক করা হয়েছে। মেহেরপুরের ডিসি সিফাত মেহনাজকে কুড়িগ্রামের, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালামকে মেহেপুরের, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার (উপসচিব) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামানকে নেত্রকোণার এবং কুষ্টিয়ার ডিসি মো. তৌফিকুর রহমানকে খুলনার জেলা প্রশাসক করা হয়েছে।
অপরদিকে খুলনার ডিসিকে বদলি করায় স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, খুলনার ডিসি সাইফুল ইসলামকে হঠাৎ বদলি করে জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। খুলনায় নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে এলাকায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। খুলনা জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, উন্নয়ন কর্মকা-, নিবিড় জনসেবা এবং জনগণের দারগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তার সাফল্য ছিল অভাবনীয়। তা সত্ত্বেও এ বদলিতে হতাশা প্রকাশ করে জেলাবাসীরা বলছেন- কার স্বার্থে ও প্ররোচনায় এ বদলি হলো তা রহস্যজনক। ক্ষুব্ধ খুলনার অধিকাংশ মানুষ। গতকাল খুলনার বিভিন্ন স্থানে তাকে ডিসি পদে বহাল রাখার দাবি জানিয়ে সভা হয়েছে।
আকষ্মিক বদলি, প্রদায়ন ও নিয়োগের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় সেনাবাহিনীর ৬০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৬০ হাজার সেনা সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। একইসঙ্গে তিনি জানান, নির্বাচনকে ঘিরে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক রদবদলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে প্রশাসনের রদবদল হবে। সব জায়গায় নয়, যেখানে প্রয়োজন সেখানে পরিবর্তন আনা হবে। ইতোমধ্যে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে চলমান রয়েছে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাস থেকে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হবে। নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে সমন্বয় জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। এই সিদ্ধান্তগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতিকে একটি কাঠামোবদ্ধ রূপ দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বদলি প্রদায়ন এবং নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।