ঢাকা ১০:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার সাংবাদিক ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ সাত জনের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা Logo শরিয়তপুরে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর বসতভিটা আত্নসাতের চেস্টা! Logo ফ্যাসিস্ট দোসর কিবরিয়া দম্পতি বহাল তবিয়তে Logo জজের ড্রাইভারের দাপটে অসহায় পরিবারের সংবাদ সম্মেলন Logo ঝিনাইদহে মেধা মূল্যায়ন ২০২৪ এর বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ Logo মায়ানমারে অবৈধভাবে পাচারকালে সিমেন্টসহ ৫ পাচারকারী আটক Logo শহীদ পরিবারদের সম্মানে নওগাঁয় ৮০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র হস্তান্তর Logo নীলফামারীতে তিনদিন ব্যাপী ভূমি মেলা ২০২৫ উদ্বোধন  Logo তালের শাঁসে ঠান্ডা প্রশান্তি, মুক্তাগাছায় গরমে স্বস্তির উৎস Logo ফুলপুরে শ্রমিকদলের নয়া কমিটি গঠন

তালের শাঁসে ঠান্ডা প্রশান্তি, মুক্তাগাছায় গরমে স্বস্তির উৎস

রিপন সারওয়ার, মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ)প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০২:৫৩:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
 রোদ যেন জ্বলে পড়ছে আগুন হয়ে। প্রকৃতির রোষ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এমন সময় মুক্তাগাছার পথে-ঘাটে চোখে পড়ে স্বস্তির দৃশ্য—ঠান্ডা, রসালো তালের শাঁস সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। শহর থেকে গ্রাম—প্রতিটি কোণে যেন তাল এখন গ্রীষ্মের প্রতীক।
 মুক্তাগাছা থানার সামনের মোড়, খামারবাজার, রসুলপুর, সানেবান্ধা কিংবা ত্রিমোহনী নতুন বাজার —প্রতিটি বাজারেই বসেছে তাল বিক্রির আসর। গরমের ভাপ গায়ে মেখে শত শত মানুষ খুঁজে নিচ্ছেন তাল শাঁসের ঠান্ডা আরাম। তালের শাঁসের এই জনপ্রিয়তা নতুন কিছু নয়, তবে প্রচণ্ড গরমে এবার যেন বেড়েছে কয়েকগুণ। পথচারীরা দাঁড়িয়ে শাঁস খাচ্ছেন ঠান্ডা পানির সঙ্গে, আবার অনেকে পলিথিনে ভরে নিচ্ছেন বাড়ির সদস্যদের জন্য। শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ—সব বয়সীর কাছেই এখন তাল মানে সুস্বাদু স্বস্তি।
ক্রেতা মোল্লা কাফি খান বলেন, “এখন বাজারে কেমিক্যাল ছাড়া কোনো ফল পাওয়া দুষ্কর। অথচ তাল প্রাকৃতিকভাবে এমনিতেই ঠান্ডা। এতে ভেজাল নেই, রাসায়নিক নেই। তাই দাম একটু বেশি হলেও আপত্তি নেই—স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলেই নিচ্ছি।”
শুধু স্বাদ নয়, তালের শাঁস পুষ্টিগুণেও অনন্য। ভিটামিন বি, সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ এই ফল শরীর ঠান্ডা রাখে, দ্রুত পানিশূন্যতা দূর করে এবং হজম ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। মো. মাহমুদুল হাসান নামের এক স্বাস্থ্যসচেতন ক্রেতা বলেন, “ইউটিউব ও পত্রিকায় জেনেছি, তালের শাঁস ত্বক, চুল ও পেটের জন্য খুব উপকারী। তাই আজ নিজেও খেলাম, সঙ্গে পরিবারের জন্যও কিনে নিচ্ছি।” ব্যতিক্রম এক বিক্রেতা মো. হারুন শেখ। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান ও মোবাইল মেকানিক হলেও টানা আট বছর ধরে গরম এলে তাল বিক্রি করেন তিনি। আগে গ্রামের হাটে হাটে ঘুরে বিক্রি করলেও এখন মুক্তাগাছা থানার সামনে স্থায়ীভাবে বসেছেন।
“গরম যত বাড়ে, বিক্রিও তত বাড়ে,” জানালেন হারুন। “প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। কর্মচারীর মজুরি বাদ দিয়ে দৈনিক হাজার-বারোশো টাকার লাভ থাকে। মুক্তাগাছা  উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নের হাটবাজার এখন তালের শাঁস বিক্রিতে সরগরম। তাল সহজলভ্য হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যেও এর কদর বেড়েছে। অনেকেই জানান, গরমে ফ্রিজের ঠান্ডা পানির চেয়ে তালের শাঁস বেশি স্বস্তি দেয়।
তালের শাঁস এখন শুধু একটি মৌসুমি ফল নয়, এটি হয়ে উঠেছে মুক্তাগাছার মানুষের জন্য বিকল্প জীবিকার সুযোগ, আর গরমে পরিপূর্ণ আরামের উৎস। যখন চারপাশে ভেজাল ও কৃত্রিমতার ভিড়, তখন তাল যেন প্রকৃতির এক নির্ভরযোগ্য উপহার—রসনা, শরীর আর হৃদয়কে শীতল করে দেওয়া এক স্বাভাবিক প্রশান্তি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

তালের শাঁসে ঠান্ডা প্রশান্তি, মুক্তাগাছায় গরমে স্বস্তির উৎস

আপডেট সময় : ০২:৫৩:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
 রোদ যেন জ্বলে পড়ছে আগুন হয়ে। প্রকৃতির রোষ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এমন সময় মুক্তাগাছার পথে-ঘাটে চোখে পড়ে স্বস্তির দৃশ্য—ঠান্ডা, রসালো তালের শাঁস সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। শহর থেকে গ্রাম—প্রতিটি কোণে যেন তাল এখন গ্রীষ্মের প্রতীক।
 মুক্তাগাছা থানার সামনের মোড়, খামারবাজার, রসুলপুর, সানেবান্ধা কিংবা ত্রিমোহনী নতুন বাজার —প্রতিটি বাজারেই বসেছে তাল বিক্রির আসর। গরমের ভাপ গায়ে মেখে শত শত মানুষ খুঁজে নিচ্ছেন তাল শাঁসের ঠান্ডা আরাম। তালের শাঁসের এই জনপ্রিয়তা নতুন কিছু নয়, তবে প্রচণ্ড গরমে এবার যেন বেড়েছে কয়েকগুণ। পথচারীরা দাঁড়িয়ে শাঁস খাচ্ছেন ঠান্ডা পানির সঙ্গে, আবার অনেকে পলিথিনে ভরে নিচ্ছেন বাড়ির সদস্যদের জন্য। শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ—সব বয়সীর কাছেই এখন তাল মানে সুস্বাদু স্বস্তি।
ক্রেতা মোল্লা কাফি খান বলেন, “এখন বাজারে কেমিক্যাল ছাড়া কোনো ফল পাওয়া দুষ্কর। অথচ তাল প্রাকৃতিকভাবে এমনিতেই ঠান্ডা। এতে ভেজাল নেই, রাসায়নিক নেই। তাই দাম একটু বেশি হলেও আপত্তি নেই—স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলেই নিচ্ছি।”
শুধু স্বাদ নয়, তালের শাঁস পুষ্টিগুণেও অনন্য। ভিটামিন বি, সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ এই ফল শরীর ঠান্ডা রাখে, দ্রুত পানিশূন্যতা দূর করে এবং হজম ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। মো. মাহমুদুল হাসান নামের এক স্বাস্থ্যসচেতন ক্রেতা বলেন, “ইউটিউব ও পত্রিকায় জেনেছি, তালের শাঁস ত্বক, চুল ও পেটের জন্য খুব উপকারী। তাই আজ নিজেও খেলাম, সঙ্গে পরিবারের জন্যও কিনে নিচ্ছি।” ব্যতিক্রম এক বিক্রেতা মো. হারুন শেখ। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান ও মোবাইল মেকানিক হলেও টানা আট বছর ধরে গরম এলে তাল বিক্রি করেন তিনি। আগে গ্রামের হাটে হাটে ঘুরে বিক্রি করলেও এখন মুক্তাগাছা থানার সামনে স্থায়ীভাবে বসেছেন।
“গরম যত বাড়ে, বিক্রিও তত বাড়ে,” জানালেন হারুন। “প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। কর্মচারীর মজুরি বাদ দিয়ে দৈনিক হাজার-বারোশো টাকার লাভ থাকে। মুক্তাগাছা  উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নের হাটবাজার এখন তালের শাঁস বিক্রিতে সরগরম। তাল সহজলভ্য হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যেও এর কদর বেড়েছে। অনেকেই জানান, গরমে ফ্রিজের ঠান্ডা পানির চেয়ে তালের শাঁস বেশি স্বস্তি দেয়।
তালের শাঁস এখন শুধু একটি মৌসুমি ফল নয়, এটি হয়ে উঠেছে মুক্তাগাছার মানুষের জন্য বিকল্প জীবিকার সুযোগ, আর গরমে পরিপূর্ণ আরামের উৎস। যখন চারপাশে ভেজাল ও কৃত্রিমতার ভিড়, তখন তাল যেন প্রকৃতির এক নির্ভরযোগ্য উপহার—রসনা, শরীর আর হৃদয়কে শীতল করে দেওয়া এক স্বাভাবিক প্রশান্তি।