ঢাকা ১০:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ১৫ বছরে অন্যায় কাজের জন্য পুলিশ দুঃখিত ও লজ্জিত: আইজিপি Logo রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনের Logo সমমনা দলের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের বৈঠক Logo জাতীয় ইমাম পরিষদের পৌর শাখার সভাপতি আশরাফুল-সেক্রেটারি কাদির Logo শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ভারতীয় মদ সহ গ্রেফতার-১ Logo আওয়ামী স্বৈরশাসনের সময় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে :  ড্যাব মহাসচিব Logo বিনিয়োগকারী নয়, পুঁজিবাজারে অস্থিরতার নেপথ্যে প্লেয়ার ও রেগুলেটররা : অর্থ উপদেষ্টা Logo ঢাকায় বসে কোনো পরিকল্পনা করবে না: ফাওজুল কবির Logo মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলন, বাল্কহেডসহ আটক ৯ Logo বান্দরবানে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কর্মশালা

দু’বাহু বাড়িয়ে আছে সুন্দরবন, পর্যটকের আনাগোনা কম

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির
  • আপডেট সময় : ০৫:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি

মৎস্য ও বণ্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ জুন-৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন টানান তিন মাস বন্ধ থাকে। এসময়ে পর্যটক, বাওয়ালী, মৎস্যজীবী সবার যাতায়ত ছিলো নিষিদ্ধ। মাসের খনি সন্দরবন এলাকা হাজারো মৎস্যজীবীর আয়ের উৎস্য। ফলে সুন্দরবনের নদী খালে মাছ ধরা ও পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বনবিভাগ।

তিন মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবন উন্মুক্ত হলেও পর্যটকের দেখা মিলছে না। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক সপ্তাহে সুন্দরবন ভ্রমণে তেমন পর্যটক আসেনি। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এখন পর্যটক মৌসুম নয়, তাই পর্যটক আসছেন না।

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, তিন মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও তেমন পর্যটক আসছে না। এখন নদী উত্তাল এবং বর্ষা মৌসুম। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পাঁচ মাস হচ্ছে পর্যটক মৌসুম। তখন পর্যটকদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন উন্মুক্ত করা হলেও প্রথম দুই দিনে ২০০ পর্যটক এসেছেন। এ সময়ে জনপ্রতি ৪৬ টাকা হারে ৯ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণ করে পর্যটকরা খুশি।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার থেকে আসা কামরুজ্জামান নামে আরেক পর্যটক বলেন, অনেকদিন পর পরিবার নিয়ে সুন্দরবন দেখতে এলাম। সুন্দরবন যে এত সুন্দর বাস্তবে না আসছে বোঝা যেতো না। অনেক উপভোগ করেছি। রাজশাহী বিভাগ থেকে আসা আবুল কালাম নামে এক পর্যটক বলেন, তিন মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবনে ঘুরতে আসলাম। অনেক পশু-পাখি এবং নানারকম গাছপালা দেখলাম। সুন্দরবন ঘুরে মুগ্ধ সবাই।

১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট এই তিন মাস মূলত বনের গাছপালা, বন্যপ্রাণী-পশুপাখি ও মাছের প্রজনন মৌসুম। একারণে প্রতি এসময়টাতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন হওয়ায় এক নতুন রূপে এখন সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি। বৈরী আবহাওয়া এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সুন্দরবনে দেখা মিলছে না পর্যটকদের। এমন অবস্থায় ট্রলার ঘাটগুলোতে অলস সময় পার করছেন ট্যুর অপারেটর, ট্রলার শ্রমিকসহ পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।

ট্যুর অপারেটররা বলছেন আবহাওয়া ভালো হলে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের তুলনায় এই বছর পর্যটকদের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত কম। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনকে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত ব্রিজ, তথ্যকেন্দ্র, ফুট ট্রেইলার, ওয়াচ টাওয়ার ও প্রশস্ত রাস্তাসহ নান্দনিক সব স্থাপনা।

ঢেলে সাজানো হয়েছে সুন্দরবনের অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোও। নতুন রূপে সাজানো করমজলসহ সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতে স্থানীয় কিছু লোকজন ও পর্যটকরা ঘুরছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা প্রস্তুত আছি। বন বিভাগের দাবি, নতুন নতুন সব স্থাপনা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে। সেসঙ্গে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সুন্দরবনে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ।

সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এছাড়া প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী রয়েছে। বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের ৩১৯ প্রজাতির মাছ, ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা এবং ১০৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী-পশুপাখির বেশির ভাগেরই প্রজননকাল ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট। এই সময়ে বনের গাছপালার বীজ থেকে চারা গজায়, এতে গাছের সংখ্যা বেড়ে থাকে। আর প্রজননের ফলে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় প্রাণিজ ও জলজ সম্পদ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দু’বাহু বাড়িয়ে আছে সুন্দরবন, পর্যটকের আনাগোনা কম

আপডেট সময় : ০৫:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি

মৎস্য ও বণ্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ জুন-৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন টানান তিন মাস বন্ধ থাকে। এসময়ে পর্যটক, বাওয়ালী, মৎস্যজীবী সবার যাতায়ত ছিলো নিষিদ্ধ। মাসের খনি সন্দরবন এলাকা হাজারো মৎস্যজীবীর আয়ের উৎস্য। ফলে সুন্দরবনের নদী খালে মাছ ধরা ও পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বনবিভাগ।

তিন মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবন উন্মুক্ত হলেও পর্যটকের দেখা মিলছে না। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক সপ্তাহে সুন্দরবন ভ্রমণে তেমন পর্যটক আসেনি। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এখন পর্যটক মৌসুম নয়, তাই পর্যটক আসছেন না।

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, তিন মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও তেমন পর্যটক আসছে না। এখন নদী উত্তাল এবং বর্ষা মৌসুম। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পাঁচ মাস হচ্ছে পর্যটক মৌসুম। তখন পর্যটকদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন উন্মুক্ত করা হলেও প্রথম দুই দিনে ২০০ পর্যটক এসেছেন। এ সময়ে জনপ্রতি ৪৬ টাকা হারে ৯ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণ করে পর্যটকরা খুশি।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার থেকে আসা কামরুজ্জামান নামে আরেক পর্যটক বলেন, অনেকদিন পর পরিবার নিয়ে সুন্দরবন দেখতে এলাম। সুন্দরবন যে এত সুন্দর বাস্তবে না আসছে বোঝা যেতো না। অনেক উপভোগ করেছি। রাজশাহী বিভাগ থেকে আসা আবুল কালাম নামে এক পর্যটক বলেন, তিন মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবনে ঘুরতে আসলাম। অনেক পশু-পাখি এবং নানারকম গাছপালা দেখলাম। সুন্দরবন ঘুরে মুগ্ধ সবাই।

১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট এই তিন মাস মূলত বনের গাছপালা, বন্যপ্রাণী-পশুপাখি ও মাছের প্রজনন মৌসুম। একারণে প্রতি এসময়টাতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন হওয়ায় এক নতুন রূপে এখন সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি। বৈরী আবহাওয়া এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সুন্দরবনে দেখা মিলছে না পর্যটকদের। এমন অবস্থায় ট্রলার ঘাটগুলোতে অলস সময় পার করছেন ট্যুর অপারেটর, ট্রলার শ্রমিকসহ পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।

ট্যুর অপারেটররা বলছেন আবহাওয়া ভালো হলে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের তুলনায় এই বছর পর্যটকদের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত কম। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনকে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত ব্রিজ, তথ্যকেন্দ্র, ফুট ট্রেইলার, ওয়াচ টাওয়ার ও প্রশস্ত রাস্তাসহ নান্দনিক সব স্থাপনা।

ঢেলে সাজানো হয়েছে সুন্দরবনের অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোও। নতুন রূপে সাজানো করমজলসহ সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতে স্থানীয় কিছু লোকজন ও পর্যটকরা ঘুরছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা প্রস্তুত আছি। বন বিভাগের দাবি, নতুন নতুন সব স্থাপনা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে। সেসঙ্গে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সুন্দরবনে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ।

সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এছাড়া প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী রয়েছে। বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের ৩১৯ প্রজাতির মাছ, ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা এবং ১০৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী-পশুপাখির বেশির ভাগেরই প্রজননকাল ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট। এই সময়ে বনের গাছপালার বীজ থেকে চারা গজায়, এতে গাছের সংখ্যা বেড়ে থাকে। আর প্রজননের ফলে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় প্রাণিজ ও জলজ সম্পদ।