নওগাঁয় ধামুইরহাটে কালভার্ট ভেঙে জনদুর্ভোগ

- আপডেট সময় : ৯০ বার পড়া হয়েছে
নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট উপজেলার আড়ানগর ইউনিয়নের মাতাজি-টু-ফতেপুর সড়কের চক ভবানী মোড়ে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। কয়েকদিন ধরে কালভার্টটির বেশ কিছু অংশ ধসে পড়ায় বড় ধরনের যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, এ সড়কটি ধামুইরহাট উপজেলার অন্যতম ব্যস্ততম যোগাযোগপথ। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ কর্মস্থল, ব্যবসায়িক কাজ এবং শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যাতায়াতের জন্য এ পথ ব্যবহার করে থাকেন। কালভার্টের যে অংশ ভেঙে গেছে তার একপাশে তুলনামূলক ভালো জায়গা থাকায় ছোট যানবাহন যেমন ভ্যান, রিকশা, সাইকেল ও মোটরসাইকেল কষ্ট করে চলাচল করতে পারছে। তবে বড় যানবাহন—যেমন ট্রাক, বাস, পিকআপসহ ভারী পরিবহন একেবারেই চলাচল করতে পারছে না। এতে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অভিভাবকরা বলেন, স্কুল-কলেজগামী ছেলে-মেয়েদের প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে, যা যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ইতিমধ্যে কালভার্টটির ভাঙা অংশে কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এ কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। দশম শ্রেণির ছাত্র সোহেল জানায়, “প্রতিদিন আমাদের স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। হেঁটে যেতে হয়, আবার অনেক সময় ভয়ে কালভার্টের কাছ দিয়েই যাই না। পরীক্ষার সময় হলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়।”
অন্যদিকে কলেজছাত্রী রিমা আক্তার বলেন, “আমাদের প্রতিদিন কলেজে যেতে হয়। কিন্তু এই ভাঙা কালভার্ট পার হতে গিয়ে অনেক সময় পিছলে পড়ার উপক্রম হয়। অভিভাবকেরাও আমাদের নিয়ে চিন্তায় থাকেন। দ্রুত এটা সংস্কার না করলে আরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
এদিকে ভ্যানচালকরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় ভ্যানচালক আব্দুল করিম অভিযোগ করে বলেন, “এই কালভার্টের ওপর দিয়েই আমরা প্রতিদিন যাত্রী বহন করি। কিন্তু ভেঙে যাওয়ার পর এখন যাত্রী তুলতে ভয় হয়। মাঝপথে আটকে গেলে গাড়ি উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় যাত্রীরা রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে অন্য পথে হেঁটে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।”
অন্য এক ভ্যানচালক নজরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের আয় কমে গেছে। আগে দিনে তিন-চারটা ট্রিপ দেওয়া যেতো, এখন ঝুঁকির কারণে অনেকেই ভ্যান ব্যবহার করতে চায় না। আমরা পরিবার চালাবো কিভাবে?”
স্থানীয়রা আরও জানান, রাতের বেলায় চলাচল আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। কালভার্টের ভাঙা স্থানে কোনো লাইটের ব্যবস্থা না থাকায় অন্ধকারে পথচারী ও যানবাহন চালকরা সঠিকভাবে পথ চিনতে পারেন না। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে এবং মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কালভার্টটির সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার জানানো হলেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে আড়ানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তাই এলাকাবাসী দ্রুত ভাঙা কালভার্টটি সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ধামুইরহাটের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে এবং এতে স্থানীয় অর্থনীতি, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।