পদ্মায় গিলে খেলো বিদ্যালয় ভবনটি

- আপডেট সময় : ২৪ বার পড়া হয়েছে
রক্ষা করা গেলো না সেই বিদ্যালয় ভবনটিকে। পদ্মায় বিলিন হয়ে গেলো ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নং উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনসহ বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঃ ছোবাহান মুন্সী জানান, উপজেলার কাঁচিকাটা ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। যার উত্তরে মুন্সিগঞ্জ ও পূর্বে চাঁদপুর জেলা ও মেঘনা নদী। ওই এলাকাটির ৩দিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবার্নিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবার বসবাস করতেন। ওই গ্রামের জনগণের মূল পেশা হচ্ছে নদীতে মাছ ধরা ও কৃষি কাজ। ২০১৭ সালে পিডিপিই-৪ প্রকল্পের আওতায় ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল হতে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। এক তলা একটি পাকা ভবনের ৪টি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। সোমবার পদ্মা নদীতে বিলিন হয়ে গেছে বিদ্যালয় ভবনটি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মকবুল খালাশি ও শিক্ষক জাহানার জানান, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পরে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এবছর জুন মাসে সেই বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ভাঙনের কবল হতে বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার কোন উদ্যোগ নেয়নি।
বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পরলে গত ৪ সেপ্টেম্বরের হতে ওই বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। রোববার বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র সরিয়ে নেয়া হয়।
কাচিকাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম এ হামিদ বলেন, আমাদের এলাকার যাতায়াত দুর্গম। নৌপথ ছাড়া আমরা যাতায়াত করতে পারিনা। এলাকায় কোন বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার শিশুরা পড়ালেখা করতে পারেনা। নতুন এ বিদ্যায়লটিতে ৬ বছর ধরে পড়ালেখা করানো হচ্ছিল। আমাদের সন্তানরা পড়ালেখা করছিল। এখন সেটিও পদ্মায় ভেঙে গেছে। এখন আমাদের সন্তানরা কোথায় পড়ালেখা করবে জানিনা।
কাঁচিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জসিম উদ্দিন খান বলেন, উত্তর মাথাভাঙা মৌজায় একটি স্কুলই ছিল। তাও পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। কিছু দিন হয়তো পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ওই বিদ্যালয়ের জন্য যারা জমি দিয়েছিলেন তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি তারা অন্যত্র জমি দিতে রাজি হলে সেখানে স্কুলের কার্যক্রম চালু করা হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, বিদ্যালয়ের সকল জমি ও ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভবন ভাঙনের আগে বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছিলাম। এখন কোথায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা হবে তা বলতে পারছি না। শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা যে নিদের্শনা দেবেন সে অনুযায়ী পরবর্তি পদক্ষেপ নেব। আপাতত পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আল মুজাহিদ বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের কবলে পরার কারণে আপাতত পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যিনি বিদ্যালয়ের জমি দাতা তিনি অন্য একটি স্থানে জমি দিতে রাজি হয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যে সেখানেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানো হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, বিদ্যালয় ভাঙনের কবলে পরার কারণে উপজেলা পরিষদের একটি সভা হয়েছিল। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এখন বিদ্যায়লটি বিলনি হয়ে গেছে। আমরা শিঘ্রই এর কার্যক্রম অন্যত্র শুরু করার উদ্যোগ নেব।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, কাঁচিকাটা এলাকায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। সেটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। যার কারণে ওই বিদ্যালয়টির জন্য আলাদা কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।