ফরিদপুরে টিআইবির গণশুনানি, জনগণের নানা অভিযোগ
- আপডেট সময় : ৩০ বার পড়া হয়েছে
জেলার সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও হয়রানির নানা চিত্র উঠে এসেছে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে। স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জন অফিস, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), ইয়েস, এসিজি এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যৌথভাবে এই গণশুনানির আয়োজন করে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় চত্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দুই শতাধিক ভুক্তভোগী ও নাগরিক অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সনাকের সহ-সভাপতি পান্না বালা বলেন—
“স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে জনগণের ভোগান্তি, দুর্নীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খোঁজাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য।”
ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায়ের প্রায় ৩০ জন অংশগ্রহণকারী স্বাস্থ্যব্যবস্থার নানা অসঙ্গতির অভিযোগ তুলেন। উল্লেখযোগ্য অভিযোগসমূহ— ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগে সেবার ব্যাপক ঘাটতি, হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অব্যবস্থা, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বকশিশ আদায়, খুচরা টাকার অজুহাতে অতিরিক্ত টিকিট মূল্য আদায়, সরকারি ওষুধ সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে কেনার বাধ্যবাধকতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাহিরের প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে কমিশন বাণিজ্য, স্বজনদের সঙ্গে অসহযোগিতা ও হয়রানি, ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্র সময়মতো না খোলা, অপেক্ষা স্থানের ঘাটতি ও অবকাঠামোর ব্যর্থতা, ওয়াশরুম অপ্রতুলতা, বেসরকারি ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনা, সার্টিফিকেটবিহীন টেকনোলজিস্টদের মাধ্যমে পরীক্ষার রিপোর্ট প্রস্তুত, অনেক প্রতিষ্ঠানে প্যাথলজিস্টদের আগেভাগে সই করে রাখা রিপোর্ট ব্যবহার।
অভিযোগ উপস্থাপনকালে বেশ কয়েকজন বলেন, “সরকারি সেবা পেতে গিয়ে রোগীর পরিবারকেই ভুগতে হয় সবচেয়ে বেশি।” জেলার সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান অভিযোগগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং বলেন—“প্রতিটি অভিযোগই গুরুত্বসহকারে যাচাই করে সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি জানান, বেশিরভাগ পরিচ্ছন্নতা কর্মী আউটসোর্সিং হওয়ায় শ্রমিক সংকট আছে, পদ শূন্যতা পূরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাফল্য পুরো জেলায় বিস্তারে কাজ চলছে।
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আঞ্চলিক কনসালটেন্ট ডা. শরীফুল ইসলাম বলেন, “পরিবার পরিকল্পনা এর কর্ম পরিধি জনগণের সামনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন ।”
বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিক সমিতির আহ্বায়ক আওলাদ হোসেন বাবর বলেন, “প্রাইভেট হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যাপারে হয়রানি বা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গণশুনানিতে নাগরিক ও আয়োজকদের পক্ষ থেকে সনাক সদস্য জনাব মো. মাহবুবুর রহমান স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে বেশ কিছু গঠনমূলক পরামর্শ তুলে ধরেন। সরকারি ওষুধ সরবরাহে নিয়মিত অডিট ও দৃশ্যমান তালিকা প্রকাশ, রোগী ও স্বজনদের জন্য সহায়ক ডেস্ক, অভিযোগ বক্স ও হটলাইন সক্রিয়করণ, সার্টিফিকেটবিহীন টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ বন্ধ ও সরাসরি মনিটরিং, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত লাইসেন্স যাচাই ও ভিজিল্যান্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পূর্বঘোষিত সময়সূচি কঠোরভাবে অনুসরণ, ওয়াশরুম, বিশ্রাম ও অপেক্ষা স্থানের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে দৈনিক পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্টিং ব্যবস্থা।
সভাপতির বক্তব্যে সনাক সভাপতি অধ্যাপক শিপ্রা রায় বলেন, “সব সমস্যার রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়, তবে সিভিল সার্জনের আন্তরিকতা আশার আলো দেখায়। গণশুনানি সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতাদের আরও কাছে আনবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাস্থ্যসেবার মান দ্রুত পরিবর্তন হবে।”
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সনাক সদস্য মো. রেজাউল করিম।
গণশুনানির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কণ্ঠ পৌঁছে যাবে নীতি-নির্ধারকদের নিকটে। অভিযোগগুলো সমাধান হলে ফরিদপুরে স্বাস্থ্যসেবার মানে দৃশ্যমান অগ্রগতি আসবে—এমনটাই আশা অংশগ্রহণকারী নাগরিকদের।



















