ঢাকা ০৫:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

ফুলপুর ব্রিজ আছে, সংযোগ রাস্তা নাই

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ৯৭ বার পড়া হয়েছে

Oplus_19005440

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ময়মনসিংহের ফুলপুরে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজের সংযোগ রাস্তার অভাবে এক বছর ধরে বেকার পড়ে আছে। উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়নের সুতারকান্দি ও ছোট চিলাগাই গ্রামের মধ্যবর্তী খড়িয়া নদীর উপর ৯ কোটি ৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মিত হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় জনগণের কোনো কাজেই আসছে না। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমন একটি ব্রিজটি নির্মিত হওয়ার মাধ্যমে জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটলেও সংযোগ সড়কের অভাবে ব্রিজটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুর‌্যাল ব্রীজেস প্রকল্পের আওতায় ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটির নির্মাণকাজ ২০২৩ সনের মে মাসে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের অক্টোবরে শেষ হয়। সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও এ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় কোনো যাহবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও জনসাধারণের চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। সমতল ভূমি হতে ব্রিজের পাটাতন প্রায় ১০ ফুট উপরে থাকায় স্থানীয় লোকজন কিছু মাটির বস্তা ফেলে কোনো রকমে ব্রিজটি দিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। কোনো বৃদ্ধ বা অসুস্থ মানুষের পক্ষে এই ব্রিজ দিয়ে পারাপার করা সম্ভব নয়। সংযোগ সড়কের অভাবে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় জনসাধারণকে দ্বারাকপুর ও ভাইটকান্দি হয়ে ৫ কিলোমিটার ঘুরে মালামাল পরিবহণ করতে হয়। উল্লেখ্য যে, বিগত এক মাস আগে ব্রিজটিতে উঠতে ব্যর্থ হয়ে নিচের পানি দিয়ে নদী পার হওয়ার সময় উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের বৃদ্ধা আছিয়া খাতুনের মৃত্যু হয়। ভাইটকান্দি ইউনিয়নের ছোট চিলা গাই গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, এই ব্রিজে উঠতে গিয়ে আমার মায়ের পা ভেঙে গেছে। এ কারণে তিনি ৪ মাস যাবত বিছানায় পড়ে আছেন।
সুতারকান্দি গ্রামের শামসুল হক বলেন, এই জায়গায় এক সময় ফেরিঘাট ছিল। তখন জনসাধারণ মালামালসহ খেয়া নৌকার মাধ্যমে পারাপার করতো। কিন্তু ব্রীজ নির্মাণের পর খেয়া নৌকা বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। এখনো এ জায়গাটি নীলগঞ্জ ঘাট নামেই পরিচিত।
ব্রিজ সংলগ্ন সুলতান হামিদ জানান, ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য অনেক রাস্তা ঘুরে বাজারজাত করতে বাড়তি টাকা খরচ হয়ে যায়। ব্রিজ দিয়ে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় দুইপারের বাজারে কাঁচা পণ্যের মূল্যে মণ প্রতি ২ থেকে ৩শ’ টাকার ব্যবধান থাকে।
নীলগঞ্জঘাট জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুতারকান্দি থেকে নদীর ওপারে বাহাদুরপুরে ভাইটকান্দি ইউনিয়ন পরিষদে যেতেও ৪ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। এছাড়া নদীর উভয় পারে স্কুল-মাদ্রাসাসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ব্রিজটির বিষয়ে ফুলপুর উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসাইনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সংযোগ সড়কে ব্যক্তিমালিকানা জায়গা থাকায় মালিকের আপত্তির কারণে সড়কে মাটি ভরাট করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ফুলপুর ব্রিজ আছে, সংযোগ রাস্তা নাই

আপডেট সময় :

ময়মনসিংহের ফুলপুরে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজের সংযোগ রাস্তার অভাবে এক বছর ধরে বেকার পড়ে আছে। উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়নের সুতারকান্দি ও ছোট চিলাগাই গ্রামের মধ্যবর্তী খড়িয়া নদীর উপর ৯ কোটি ৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মিত হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় জনগণের কোনো কাজেই আসছে না। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমন একটি ব্রিজটি নির্মিত হওয়ার মাধ্যমে জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটলেও সংযোগ সড়কের অভাবে ব্রিজটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুর‌্যাল ব্রীজেস প্রকল্পের আওতায় ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটির নির্মাণকাজ ২০২৩ সনের মে মাসে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের অক্টোবরে শেষ হয়। সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও এ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় কোনো যাহবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও জনসাধারণের চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। সমতল ভূমি হতে ব্রিজের পাটাতন প্রায় ১০ ফুট উপরে থাকায় স্থানীয় লোকজন কিছু মাটির বস্তা ফেলে কোনো রকমে ব্রিজটি দিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। কোনো বৃদ্ধ বা অসুস্থ মানুষের পক্ষে এই ব্রিজ দিয়ে পারাপার করা সম্ভব নয়। সংযোগ সড়কের অভাবে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় জনসাধারণকে দ্বারাকপুর ও ভাইটকান্দি হয়ে ৫ কিলোমিটার ঘুরে মালামাল পরিবহণ করতে হয়। উল্লেখ্য যে, বিগত এক মাস আগে ব্রিজটিতে উঠতে ব্যর্থ হয়ে নিচের পানি দিয়ে নদী পার হওয়ার সময় উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের বৃদ্ধা আছিয়া খাতুনের মৃত্যু হয়। ভাইটকান্দি ইউনিয়নের ছোট চিলা গাই গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, এই ব্রিজে উঠতে গিয়ে আমার মায়ের পা ভেঙে গেছে। এ কারণে তিনি ৪ মাস যাবত বিছানায় পড়ে আছেন।
সুতারকান্দি গ্রামের শামসুল হক বলেন, এই জায়গায় এক সময় ফেরিঘাট ছিল। তখন জনসাধারণ মালামালসহ খেয়া নৌকার মাধ্যমে পারাপার করতো। কিন্তু ব্রীজ নির্মাণের পর খেয়া নৌকা বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। এখনো এ জায়গাটি নীলগঞ্জ ঘাট নামেই পরিচিত।
ব্রিজ সংলগ্ন সুলতান হামিদ জানান, ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য অনেক রাস্তা ঘুরে বাজারজাত করতে বাড়তি টাকা খরচ হয়ে যায়। ব্রিজ দিয়ে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় দুইপারের বাজারে কাঁচা পণ্যের মূল্যে মণ প্রতি ২ থেকে ৩শ’ টাকার ব্যবধান থাকে।
নীলগঞ্জঘাট জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুতারকান্দি থেকে নদীর ওপারে বাহাদুরপুরে ভাইটকান্দি ইউনিয়ন পরিষদে যেতেও ৪ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। এছাড়া নদীর উভয় পারে স্কুল-মাদ্রাসাসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ব্রিজটির বিষয়ে ফুলপুর উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসাইনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সংযোগ সড়কে ব্যক্তিমালিকানা জায়গা থাকায় মালিকের আপত্তির কারণে সড়কে মাটি ভরাট করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।