ঢাকা ১১:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

বন্ধ করা যাচ্ছে না নৌপথে মানবপাচার

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১০:০৩:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নানামুখী অভিযানেও বন্ধ করা যাচ্ছে না নৌপথে মানব পাচার। বরং ফের কক্সবাজার উপকূলের মানব পাচারকারী চক্র ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ওই মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের যোগসাজশে অপহরণ, মুক্তিপণ ও মানব পাচারের সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেছে। তারা পাচারের জন্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শিশু, নারী ও পুরুষ।

নানা কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে সুযোগ বুঝে তাদের ট্রলারে তুলে দেয়া হয়। আর তাদের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, দালালরা তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে। পুলিশ, র?্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী অভিযানেও বন্ধ করা যাচ্ছে না মানব পাচার। বরং ঘাট পরিবর্তনসহ নানা কৌশলে ওসব অপরাধ চলছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে মানব পাচার আইনে ৭৪১টি মামলা হয়েছে। কিন্তু একটিরও বিচার শেষ হয়নি। মূলত বিচারকসংকট ও সাক্ষীর অনুপস্থিতির কারণে মানব পাচারের ওসব মামলা আটকে আছে। আর মামলার দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষতিগ্রস্ত ও বিচার বঞ্চিত হচ্ছে মানব পাচারের শিকার লোকজন। আর মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সূত্র জানায়, মানব পাচারে কক্সবাজারের আট থানায় বিগত ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আট বছরে ৬৩৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৯৭টি, রামু থানায় ২৪টি, উখিয়া থানায় ৬৮টি, টেকনাফ মডেল থানায় ২১৮টি, চকরিয়া থানায় ১৯টি, কুতুবদিয়া থানায় একটি, মহেশখালী থানায় ৩৬টি এবং পেকুয়া থানায় ৮টি মামলা। ওসব মামলা ছাড়া ট্রাইব্যুনালেও রয়েছে অনেক মামলা। তাছাড়া ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজারে মানব পাচার আইনে ১০৪টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৩৬, চকরিয়া থানায় ২, মহেশখালী থানায় ৮, রামু থানায় ৬, উখিয়া থানায় ১৮, টেকনাফ মডেল থানায় ৩১, পেকুয়া থানায় ১ ও ঈদগাঁও থানায় ২টি মামলা হয়েছে। কিন্তু মানব পাচারের ৭৪১টি মামলার একটিও নিষ্পত্তি হয়নি। সাক্ষীর অভাবে মামলায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। থমকে আছে মামলাগুলো। আর অধিকাংশ মামলায় আসামিদের সম্পদ ক্রোকের জন্য আদালত আদেশ দিলেও এ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি একটিও। সূত্র আরো জানায়, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডির ঘাট, উখিয়া ও টেকনাফের ছয়টি নৌঘাট মানব পাচারের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। ওসব নৌঘাট দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় লোক পাচার করা হচ্ছে। তাছাড়া ওই সিন্ডিকেট সদস্যরা পাহাড়ের ভেতর অবস্থান নিয়ে মানব পাচার ও অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করে। অনেক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় চক্রটি উপকূলকে পাচার রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। উখিয়া ও টেকনাফের সাগর তীরবর্তী কয়েকটি এলাকার পাশাপাশি কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে পাচারকারীরা সক্রিয়। এর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা, ফিশারিঘাট, নাজিরার টেক, সমিতিপাড়া; মহেশখালীর সোনাদিয়া, গোরকঘাটা, কুতুবজোম, ধলঘাটা; উখিয়ার সোনারপাড়া, রেজুর খাল, ইনানী, ছেপটখালী, মনখালী; টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, নোয়াখালীপাড়া, মহেশখালীয়া পাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, কাটাবনিয়া, খুরেরমুখ, হাদুরছড়া, জাহাজপুরা, কচ্ছপিয়া, শামলাপুর, সদরের ঈদগাঁও ও খুরুশকুল। তাছাড় চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপকূলেও মানব পাচারকারী চক্রের তৎপরতা রয়েছে।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত আড়াই মাসে নারী-শিশুসহ ৯৯ জনকে পাচারকালে উদ্ধার করেছে। ওই সময় দুই পাচারকারী আটক হয়েছে। বিগত ১৭ নভেম্বর রাতে র?্যাব পাচারকারী চক্রের আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য আটকে রাখা রোহিঙ্গাসহ ৩১ জনকে উদ্ধার করে। ওই সময় পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়। তাছাড়া ১৪ ডিসেম্বর রাতে টেকনাফ সদর ইউপির দক্ষিণ লম্বরীর এক বসতবাড়ি থেকে মালয়েশিয়া যেতে জড়ো করা ৩০ রোহিঙ্গাকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।

তাদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যেতে আটকে রেখে দাবি করা হচ্ছিল মুক্তিপণ। ৪ নভেম্বর ভোরে টেকনাফের সদর ইউনিয়নের লম্বরী এলাকার পর্যটন বাজার থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে ১২ রোহিঙ্গা উদ্ধার ও চার দালালকে আটক করা হয়। ১৪ অক্টোবর সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উখিয়ার ইনানী সৈকত থেকে ২৬ রোহিঙ্গাকে আটক করে। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন জানান, মানব পাচারে জড়িতদের মামলাগুলো পর্যবেক্ষণ করে অভিযান চালানো হবে। বিভিন্ন সময় মানব পাচারের শিকার নারী-পুরুষ উদ্ধার হয়েছে। একই সঙ্গে একাধিক দালাল ও পাচারকারী চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ চিহ্নিত ঘাটগুলোতে ইতোমধ্যে তৎপরতা বাড়িয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বন্ধ করা যাচ্ছে না নৌপথে মানবপাচার

আপডেট সময় : ১০:০৩:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

নানামুখী অভিযানেও বন্ধ করা যাচ্ছে না নৌপথে মানব পাচার। বরং ফের কক্সবাজার উপকূলের মানব পাচারকারী চক্র ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ওই মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের যোগসাজশে অপহরণ, মুক্তিপণ ও মানব পাচারের সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেছে। তারা পাচারের জন্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শিশু, নারী ও পুরুষ।

নানা কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে সুযোগ বুঝে তাদের ট্রলারে তুলে দেয়া হয়। আর তাদের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, দালালরা তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে। পুলিশ, র?্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী অভিযানেও বন্ধ করা যাচ্ছে না মানব পাচার। বরং ঘাট পরিবর্তনসহ নানা কৌশলে ওসব অপরাধ চলছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে মানব পাচার আইনে ৭৪১টি মামলা হয়েছে। কিন্তু একটিরও বিচার শেষ হয়নি। মূলত বিচারকসংকট ও সাক্ষীর অনুপস্থিতির কারণে মানব পাচারের ওসব মামলা আটকে আছে। আর মামলার দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষতিগ্রস্ত ও বিচার বঞ্চিত হচ্ছে মানব পাচারের শিকার লোকজন। আর মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সূত্র জানায়, মানব পাচারে কক্সবাজারের আট থানায় বিগত ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আট বছরে ৬৩৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৯৭টি, রামু থানায় ২৪টি, উখিয়া থানায় ৬৮টি, টেকনাফ মডেল থানায় ২১৮টি, চকরিয়া থানায় ১৯টি, কুতুবদিয়া থানায় একটি, মহেশখালী থানায় ৩৬টি এবং পেকুয়া থানায় ৮টি মামলা। ওসব মামলা ছাড়া ট্রাইব্যুনালেও রয়েছে অনেক মামলা। তাছাড়া ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজারে মানব পাচার আইনে ১০৪টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৩৬, চকরিয়া থানায় ২, মহেশখালী থানায় ৮, রামু থানায় ৬, উখিয়া থানায় ১৮, টেকনাফ মডেল থানায় ৩১, পেকুয়া থানায় ১ ও ঈদগাঁও থানায় ২টি মামলা হয়েছে। কিন্তু মানব পাচারের ৭৪১টি মামলার একটিও নিষ্পত্তি হয়নি। সাক্ষীর অভাবে মামলায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। থমকে আছে মামলাগুলো। আর অধিকাংশ মামলায় আসামিদের সম্পদ ক্রোকের জন্য আদালত আদেশ দিলেও এ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি একটিও। সূত্র আরো জানায়, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডির ঘাট, উখিয়া ও টেকনাফের ছয়টি নৌঘাট মানব পাচারের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। ওসব নৌঘাট দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় লোক পাচার করা হচ্ছে। তাছাড়া ওই সিন্ডিকেট সদস্যরা পাহাড়ের ভেতর অবস্থান নিয়ে মানব পাচার ও অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করে। অনেক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় চক্রটি উপকূলকে পাচার রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। উখিয়া ও টেকনাফের সাগর তীরবর্তী কয়েকটি এলাকার পাশাপাশি কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে পাচারকারীরা সক্রিয়। এর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা, ফিশারিঘাট, নাজিরার টেক, সমিতিপাড়া; মহেশখালীর সোনাদিয়া, গোরকঘাটা, কুতুবজোম, ধলঘাটা; উখিয়ার সোনারপাড়া, রেজুর খাল, ইনানী, ছেপটখালী, মনখালী; টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, নোয়াখালীপাড়া, মহেশখালীয়া পাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, কাটাবনিয়া, খুরেরমুখ, হাদুরছড়া, জাহাজপুরা, কচ্ছপিয়া, শামলাপুর, সদরের ঈদগাঁও ও খুরুশকুল। তাছাড় চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপকূলেও মানব পাচারকারী চক্রের তৎপরতা রয়েছে।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত আড়াই মাসে নারী-শিশুসহ ৯৯ জনকে পাচারকালে উদ্ধার করেছে। ওই সময় দুই পাচারকারী আটক হয়েছে। বিগত ১৭ নভেম্বর রাতে র?্যাব পাচারকারী চক্রের আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য আটকে রাখা রোহিঙ্গাসহ ৩১ জনকে উদ্ধার করে। ওই সময় পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়। তাছাড়া ১৪ ডিসেম্বর রাতে টেকনাফ সদর ইউপির দক্ষিণ লম্বরীর এক বসতবাড়ি থেকে মালয়েশিয়া যেতে জড়ো করা ৩০ রোহিঙ্গাকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।

তাদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যেতে আটকে রেখে দাবি করা হচ্ছিল মুক্তিপণ। ৪ নভেম্বর ভোরে টেকনাফের সদর ইউনিয়নের লম্বরী এলাকার পর্যটন বাজার থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে ১২ রোহিঙ্গা উদ্ধার ও চার দালালকে আটক করা হয়। ১৪ অক্টোবর সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উখিয়ার ইনানী সৈকত থেকে ২৬ রোহিঙ্গাকে আটক করে। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন জানান, মানব পাচারে জড়িতদের মামলাগুলো পর্যবেক্ষণ করে অভিযান চালানো হবে। বিভিন্ন সময় মানব পাচারের শিকার নারী-পুরুষ উদ্ধার হয়েছে। একই সঙ্গে একাধিক দালাল ও পাচারকারী চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ চিহ্নিত ঘাটগুলোতে ইতোমধ্যে তৎপরতা বাড়িয়েছে।