বরগুনায় সাবেক এমপি মতিয়ার রহমানের প্রভাবে ভূয়া রেজুলেশনে প্রধান শিক্ষিকার চাকুরী

- আপডেট সময় : ৩৮ বার পড়া হয়েছে
বেগম নুর জাহান নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহনুর জাহান ২০০৪ সালের জানুয়ারী মাসের ২৯ তারিখ নিয়োগ ও ৯ই ফেব্রুয়ারিতে যোগদান দেখায়। অথচ ২০১৬ সালের পূর্বে তাকে কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা দেখেনি। ২০১৪ সালের বিপিএড সনদ দ্বারা নিয়মবহির্ভূত রেজুলেশনের মাধ্যমে ২০০৪ সালে নিয়োগ দেখিয়ে চাকুরীতে যোগদান করে। ২০০৪ সালের যে নিয়োগের দাবি করেন প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ সেটাও নীতিমালা বহির্ভূত। নীতিমালানুযায়ী যোগদানের ৫ বছরের মধ্যে কাম্য যোগ্যতা অর্জন করার কথা থাকলেও সাবেক অতিরিক্ত সচিব আবু জাফরের অসাধু প্রচেষ্টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট দ্বারা শাহনুর জাহানকে এমপিওভুক্ত হয়েছে।
শাহানুর জাহানের সকল অনিয়ম-দূর্নীতি ও জালিয়াতিতে সহযোগিতা করে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা বরগুনা ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার এবং তার ভাই সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং প্রতিষ্ঠানের বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি আবু জাফর তালুকদার। ভূয়া কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বেগম নূর জাহান নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার সকল অনিয়ম দূর্নীতি ধামাচাপা দিয়ে তদবির বানিজ্যের মাধ্যমে তাকে এমপিওভুক্ত করা হয়।
বরগুনার তালতলী উপজেলার বেগম নূর জাহান নিম্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহনুর জাহান অত্র বিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে এসে যোগদান করে ভূয়া বিপিএড সনদ দেখিয়ে ২০০৪ সালের ভূয়া রেজুলেশন তৈরি করে যোগদান দেখায়। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। জাল সনদ দ্বারা এমপিওভুক্তির আবেদন করায় তিনি ব্যতীত অন্যরা এমপিওভুক্ত হয়। একাধিক আবেদনের পরে সাবেক অতিরিক্ত সচিব আবু জাফর তালুকদারের কালো ক্ষমতা বলে ২০২৪ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহনুর জাহান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই নামের অন্য এক ব্যক্তির সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত হন। তিনি যে সার্টিফিকেট দ্বারা এমপিওভক্ত হয়েছে সেটি তার নিজের নয় এবং যেটি তার নিজের বলে ইতিপূর্বে দাবি করেছেন সেটিও নিয়মকহির্ভূত।
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হলেও কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী দেখানো হচ্ছে প্রতিবরছই। কাগজে কলমে পরিপূর্ণ শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে হাতেগোনা নামমাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০১৯ সালে তালতলী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে এনে ইত্তেফাক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তর জন্য তোরজোর চালায়। স্থানীয় অভিভাবকদের দাবি, সরকারি রীতি-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা এবং নিম্নমানের পাঠদানের কারণে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থী শূন্য। সনদ দ্বারী এবং অযোগ্য শিক্ষকদের তাবেদারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব বিলুপ্ত প্রায়। এ সময়ে স্থানীয়রা ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক, বড়বগী ইউপির সাবেক সভাপতি পদপ্রার্থী যুবলীগ নেতা মোঃ সিরাজুল ইসলাম শাহিনের সনদ নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
২০০৪ সাল থেকে ১৪ সাল পর্যন্ত উত্তীর্ণ হওয়া একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শাহনুর জাহান নামে কোন শিক্ষক তাদের চোখে পড়েনি। এখন কি আশ্চর্যের বিষয় কোন শিক্ষার্থী তার নাম কখনো শোনেনি।
প্রতিষ্ঠানের প্রবীণ শিক্ষকদের দাবি, কাগজে কলমে নিয়োগ, যোগদান পত্র একই হলেও ১৬ সালের পূর্বে কখনো তাদের সাথে দেখা হয়নি।
অভিযুক্ত শাহনুর জাহান ২০১৬ সালে স্কুলে এসে ভূয়া সনদ দিয়ে ২০০৪ সালে কিভাবে নিয়োগ দেখিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি কোন বক্তব্য দিতে বাধ্য না।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান আনিসুর রহমান শানুর কাছে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এবিষয়ে কোনো কথা বলতে চাইনা। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, বিকেলে আসেন একত্রে চা খাব।
এডহক কমিটির সভাপতি এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব আবু জাফর তালুকদার বলেন, খোঁচাখুঁচি করে স্কুলটাকে শেষ করে দিয়েন না। এখন এসব ঝামেলা করলে স্কুলটা বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ দেওয়ার পরে কাগজপত্র বাছাই করে বাদ দেওয়া হবে।
তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অঃদাঃ) মোঃ জিয়াদ হাসান বলেন, এবিষয়ে আমি অবগত না। জেলা শিক্ষা অফিসার স্যার আছে আপনি চাইলে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।