বৈশাখ ঘিরে মুক্তাগাছার মৃৎ শিল্পীদের কর্মব্যস্ততা

- আপডেট সময় : ৫৮২ বার পড়া হয়েছে
ঐতিহ্যবাহী লোকজ শিল্পের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। লোক ও কারুশিল্প বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। কায়িক শ্রম ও নান্দনিক কৌশলে ব্যবহারিক বস্তুকে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় নানা ধরণের অলঙ্ককরণ। কারুশিল্প ব্যবহারিক জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। বাংলা নববর্ষ ঘিরে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে মৃৎ শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবারে মুক্তগাছা মৃৎ শিল্পীদের নিয়েই আমাদের এই প্রতিবেদন।
আপন মনে কাজ করে চলেছেন পঁচাশি পেরুনো রিনা রানী পাল। তাঁর হাতের ছোয়ায় রঙিন হয়ে ওঠছে এক একটি শিল্পকর্ম। তার চারিদিকে সাজানো মাটির নানা রকমের শিল্পকর্মগুলো বৈশাখ তথা বাংলানববর্ষকে সামনে রেখে তৈরি করেছেন। এসব শিল্পকর্ম তৈরিতে এই বয়সেও লম্বা সময় কাজ করতে হচ্ছে রিনা রানী পালকে।
শুধু রিনা রানী পালই নয়, রৌয়ারচর পালপাড়া গ্রামের রিও চন্দ্র পাল ও আরতি রানী পাল সকাল সন্ধ্যা কাজ করে চলেছেন। এই পল পাড়ায় দেঢ়শতাধিক পরিবারের একমাত্র পেশা মাটির জিনিষপত্র তৈরি করা। মৃ শিল্পের সঙ্গে পাল পাড়ার বাসিন্দাদের সম্পর্ক শৈশব থেকেই।

মুক্তাগাছায় একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। মুক্তাগাছায় অনেকে বেড়াতে এলে পাল পাড়া ঘুরে কেউ কেউ পছন্দের জিনিষ কিনে নেন।
রিও চন্দ্র পাল বলেন, তিনি শৈশবকাল থেকেই মাটির জিনিসপত্র তৈরির কাজ করছেন। পাশাপাশি কৃষি কাজও করেন। বৈশাখ এলেই মাটির পণ্যের চাহিদা বাড়ে। তাই মাটির খেলনা বানাচ্ছি।
বংশগত ভাবেই মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে থাকেন আরতি রানী পাল। বৈশাখ মাস এলে এসব জিনিষের বেচাকেনা বেশি হয়। মাটির হরিণ, গরু, ঘোড়া, হাতি, ফুল, ফুলের টপ বানাচ্ছেন আরতি রানী। এসবের আয় দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা ও সংসারের খরচ চালান। বছরের বাকি দিনগুলো অনেক কষ্টে কাটে তাদের।
তিনি বলেন, আগে মাটি কিনতে হতো না। এখন অনেক দাম দিয়ে মাটি কিনে আনতে হয়। বৈশাখ মাস এলেই বেঁচাকেনা বেশি হয়। আবার লাভও কম হয়। সব মিলিয়ে কোন রকমে দিন কাটছে তাদের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মৃৎ শিল্পীদের কেউ মাটি দিয়ে হাঁড়ি-পাতিল, কেউবা পশুপাখি ও খেলনার আকৃতি তৈরিতে ব্যস্ত। কেউবা পণ্যগুলোকে রোদে শুকাচ্ছেন। আবার কেউবা রং তুলির শেষ আচর দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন পণ্যগুলোর বাহারী রূপ। দ্রুত কাজ মৃৎ শেষ করতে ছেলে-মেয়েরাও সহযোগিতা করছে। উপজেলার রঘুনাথপুর, রৌয়ারচর, মন্ডলসেন ও গাড়াইকুটি গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার এই মৃৎ শিল্পকে আঁকড়ে আছেন।
এ বিষয়ে লেখক ও গবেষক এম. ইদ্রিস আলী মতে, সরকারিভাবে মুক্তাগাছায় বাংলা নববর্ষ বরণের নানা আয়োজন করা হচ্ছে। পান্তা উৎসব ও বিশেষ করে পহেলা বৈশাখে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ও গ্রামীন ঐতিহ্যের নানা উপকরণ লাঙ্গল, কাস্তেসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে হাজারো মানুষ অংশ নেবেন মঙ্গল শোভা যাত্রায়। বসবে লোকজ ও মৃৎ শিল্প সমগ্রীর মেলা।
মৃৎ শিল্প আমাদের আদী সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সে প্রকল্পের অধীনে সারা বাংলাদেশে জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। অনেক উপজেলায় মৃৎ শিল্পীদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন করা ”চ্ছ। মুক্তাগাছা উপজেলাতে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে মৃৎ শিল্পীদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম।