ভয়ঙ্কর মাদক ব্যবসায়ী স্বপন, বিরোধীতা করলেই মাটি চাপা!
- আপডেট সময় : ০৬:০২:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪ ২১৩ বার পড়া হয়েছে
আইন-কানুন থানা-পুলিশ এবং আইনপ্রযোগকারী বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থাকা সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকার পাজরঘেষা সাভারে মাদক সম্রাট হয়ে ওঠেন স্বপন মিয়া।
ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) স্বপন মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর গা হিমকরা সব তথ্য বেড়িয়ে আসে। এই মাদক পান্ডা গোয়েন্দা জালে আটকানোর পর একে একে বেড়িয়ে আসতে থাকে লোমহর্ষক সব ঘটনা! ঠান্ডা মাথায় এক একটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ফিল্মী স্টাইলকেও হার মানায়।
গত ১১ জুন স্বপন মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর তার স্বীকারোক্তিতে গোয়েন্দারা জানতে পারে, এক নারীসহ একাধিক ব্যক্তিকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে স্বপন। স্বপনের লোমহর্ষক তথ্য গোয়েন্দাদেরও ভাবিয়ে তোলে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী স্বপনের সাভারের বাড়ির মেঝে খুঁড়ে ১৪ মাস আগে নিখোঁজ তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টোনোর মাথার খুলি এবং হাড়গোড় উদ্ধার করে। গত ৬ মে স্বপনের বিরুলিয়ার বাড়ির পাশ থেকে পুলিশের সোর্স সীমা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সীমা স্বপনের স্ত্রীকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করেছিলো। সেই অপরাধে সীমাকে জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে মৃত্যু কার্যকর করে স্বপন ও তার সহযোগীরা।
স্বপনের সহযোগী কালুর সঙ্গে মারামারির ঘটনার পর থেকে তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টোনোর বন্ধু ইলিয়াস হোসেনও প্রায় ১৫ মাস ধরে নিখোঁজ। তার পরিবারের দাবি, তাকেও স্বপন ও তার সহযোগী কালু মিলে হত্যার করে থাকতে পারে!
এমনিভাবেই স্বপন দোর্দন্ড প্রতাপে সাভারে বিনে বাধায় মাদক ব্যবসার প্রসার ঘটায়। এক পর্যায়ে স্বপন মাদক সম্রাট হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। একের পর এক হত্যাকান্ডের পরও দিনের দিন কিভাবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে স্বপন? যুক্তি তোলা হয়, মুক্তিযোদ্ধার ছেলে পরিচয় দেওয়া এবং দীর্ঘদিন ধরে সাভারে মাদকের কারবার করে আসা স্বপনকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাবর হয়রানির অভিযোগ করতো।
মাদক বিক্রিতে বাধা কিংবা পুলিশকে তার তথ্য দিলেই জীবিত মাটিচাপা দিয়ে প্রতিপক্ষকে হত্যা করতো স্বপন! এই ভয়ঙ্কর চরিত্রের মানুষটিকে চিহ্নিত করা গেলো কয়েকটি প্রাণ ঝরে যাবার পর। অথচ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কিছুই বুঝতে বা জানতে পারেনি।
বলা হচ্ছে, সম্প্রতি পুলিশের সোর্স সীমা বেগম হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে স্বপনের লোমহর্ষক কর্মকান্ডের সব তথ্য মেলে। এর ভিত্তিতে স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় আরও একজনের হাড়গোড়।
সাভারের শাহীবাগ এলাকার মৃত কালু মিয়ার ছেলে নিখোঁজ ইলিয়াস হোসেনের ভাই শাহ-আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্বপনের সহযোগী কালুর সঙ্গে তার ভাই ইলিয়াসের বিরোধের জেরে কালুর মারামারি হয়। গত বছরের (২০২৩ সাল) ৯ মে সকালের নাস্তা সেরে বাইরে যাবার পর আর ফিরে আসেননি ইলিয়াসকে (৩৫)। স্বপন ও তার সহযোগী কালু মিলে হত্যার পর গুম করেছে বলে অভিযোগ নিখোঁজ ইলিয়ানের ভাই শাহ-আলমের।
সম্প্রতি স্বপনের সাভারের বাড়ির মেঝে খুঁড়ে মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার হওয়া তোফাজ্জল হোসেন টোনোর বন্ধু ছিলেন ইলিয়াস। নিখোঁজ ইলিয়াসেরও খোঁজ করবে ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ। একই সঙ্গে স্বপনের ওপর আনা অভিযোগের বিষয়েও তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গত ১৩ মে স্বপনের বিরুলিয়ার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্বপনের স্ত্রী পপিসহ যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা গেলেও স্বপন পালিয়ে যায়। স্ত্রীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার শাস্তি হিসাবে সোর্স সীমাকে জীবিত মাটিচাপা দেয় স্বপন।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মুবাশ্শিরা হাবীব খান সাংবাদিকদের জানান, নিখোঁজ ইলিয়াসের পরিবার গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন গোয়েন্দারা।