ভারতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঘুরেফিরে আসছে শেখ হাসিনার পরিণতি
- আপডেট সময় : ০৬:১৭:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪ ২০১ বার পড়া হয়েছে
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের গভর্নরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারসহ কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। ১৯ আগস্ট ছবি: এএনআই
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিণতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন নিত্য তুলনীয় হচ্ছেন ভারতে। পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে বারবার আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ও হাসিনার পরিণতির কথা। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কলকাতায় বলেছেন, ওরা ভেবেছে, এখানেও বাংলাদেশের মতো আন্দোলন করে সরকার ফেলা যাবে।
একই প্রসঙ্গ প্রতিধ্বনিত হলো ভারতের কর্ণাটক রাজ্যেও। কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে দক্ষিণের ওই রাজ্যের এক কংগ্রেস নেতা বলেছেন, রাজ্যপালের রাশ টানা না হলে শেখ হাসিনার মতো তাঁকেও বিদায় নিতে বাধ্য করা হবে।
কর্ণাটকের শাসক দল কংগ্রেসের দেওয়া এই হুমকির মধ্যেই নিহিত রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি দিয়ে বিজেপি সরকারের নিযুক্ত রাজ্যপাল পড়েছেন শাসক দলের রোষের মুখে। প্রদেশ কংগ্রেস রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। দাবি উঠেছে রাজ্যপালের অপসারণের।
রাজ্যপালবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে দলীয় নেতা ও বিধানসভার সদস্য ইভান ডিসুজা হুমকি দিয়েছেন, কেন্দ্র যদি রাজ্যপালকে না সরায়, তাহলে রাজ্যজুড়ে গড়ে তোলা হবে আন্দোলন। সেই আন্দোলনে রাজ্যপালের হাল হতে পারে শেখ হাসিনার মতো।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, জমি বণ্টনের ক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রীকে অবৈধভাবে লাভবান করা হয়েছে। এই অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মামলা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি দিয়েছেন রাজ্যপাল থাবরচাঁদ গেহলট।
কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যপাল রাজনৈতিক কারণে ওই পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা অবৈধ। তিনি রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চান। গত ২৬ জুলাই অভিযোগ পেয়ে বিবেচনা না করেই ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন।
থাবরচাঁদ গেহলট মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা। ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন নরেন্দ্র মোদি মন্ত্রিসভার সদস্য। তারপর তাঁকে কর্ণাটকের রাজ্যপাল করে পাঠানো হয়।
কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যপাল হয়েও থাবরচাঁদ দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর লক্ষ্য একটাই, কংগ্রেস সরকারকে প্রতি পদে বাধা দেওয়া ও হেনস্তা করা। সে কারণেই বিচার-বিবেচনা না করে অতি দ্রুত তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধাচরণ করে সিদ্দারামাইয়া কর্ণাটক হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। হাইকোর্ট তাঁকে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছেন। গত সোমবার জানিয়েছেন, ২৯ আগস্ট এই মামলার শুনানি পর্যন্ত নিম্ন আদালত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন না। পরিস্থিতি বিবেচনায় মুখ্যমন্ত্রী পরিষদীয় দলের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ২২ আগস্ট।
সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর স্ত্রীকে অবৈধভাবে জমি পাইয়ে দিয়েছেন। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বেআইনি কোনো সিদ্ধান্ত অথবা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। কর্ণাটক হাইকোর্টে গত সোমবার তিনি বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক-জীবনে তাঁর বিরুদ্ধে কখনো দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ওঠেনি। এখন যা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন তথ্য জানার অধিকার আন্দোলনের এক কর্মী। তাঁর অভিযোগ, ২০২১ সালে মাইসুরু আরবান উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (মুডা) সরকারি প্রকল্পের জন্য যেসব জমি অধিগ্রহণ করে তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী পার্বতীর তিন একর জমি ছিল।
তার পরিবর্তে আইন অনুযায়ী অন্যত্র তাঁকে যে জমি দেওয়া হয়েছে, তার বাজারমূল্য অনেক বেশি। সেই জমির কথা মুখ্যমন্ত্রী গত বিধানসভা ভোটে জমা দেওয়া হলফনামায় জানাননি।
সিদ্দারামাইয়ার ভাগ্যে কী আছে তা আদালতে বিচারাধীন। কংগ্রেসের কাছে এটা বিজেপি-জেডিএসের রাজনৈতিক চক্রান্ত। সেই ষড়যন্ত্রে শামিল হওয়ার দরুন তারা রাজ্যপাল থাবরচাঁদ গেহলটের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। নিরস্ত না হলে রাজ্যপালের দশা হাসিনার মতো করার হুমকি।