ভালুকায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ
- আপডেট সময় : ১১৪ বার পড়া হয়েছে
তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্কুল পরিচালনা করা যার দায়িত্ব। কিন্তু তিনিই কিনা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায়। বলছি ময়মসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাঁও সানরাইজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আব্দুল মতিনের কথা।
তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এরই মধ্যে গড়িয়েছে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভালুকা মডেল থানা, দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত।অভিযোগ রয়েছে,পাঁচগাঁও সানরাইজ উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া মোট ৩টি পদে জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আব্দুল মতিন, স্কুল কমিটির সভাপতি আবু হানিফ, সদস্য বুলবুল ইসলাম ও ফেরদৌস কবির বিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগের জন্য একত্রে অফিস সহায়ক পদে গোলাম রব্বানীর(রুন্টি)’র কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা, পরিচ্ছন্নদা কর্মী পদে লতিফের কাছ থেকে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, আয়া পদে রিমার কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে মোট ২০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করে প্রার্থী বাছাই করে।
এ ঘটনায় মোঃ জাহাঙ্গীর আলম নামে আরেক চাকুরী প্রত্যাশী ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে নিয়োগের প্রেক্ষিতে চাকুরি প্রদানের প্রত্যাশা দেখিয়ে ৪শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে করে নেওয়ার ও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর।
অন্যদিকে আরেক ভুক্তভোগী মোছাঃ শাহিদা আক্তারের পিতা মোঃ শুক্কুর আলী বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২ বছর পূর্বে পাঁচগাঁও সানরাইজ উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়া পদে মোছাঃ শাহিদা আক্তার আবেদন করলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আব্দুল মতিন চাকুরী দেওয়ার কথা বলে ৪লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গ্রহন করে। পরে মোছাঃ শাহিদা আক্তার চাকুরীটি না পেলে তার পিতা প্রধান শিক্ষকের নিকট অর্থ ফেরত চাইলে প্রধান শিক্ষক ১ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে বাকি ২ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা ২/৩ মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। পরে বিদ্যালয়ের জমিদাতা সদস্য মোঃ সেলিম শুক্কুর আলীর পক্ষে বাকি টাকা ফেরত চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে শুক্কুর আলী, সেলিম সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের বিরুদ্ধে মারধর ও চাঁদা দাবীর একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন।
পাঁচগাঁও সানরাইজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে এসব দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ময়মনসিংহের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখায় দায়ের করা মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগের ভিত্তিতে ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে ০৫.৪৫.৬১১৩.০০১.৪২.০০৪.২৩.১২২৬ নং স্বারক মূলে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেন তৎকালীন ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলীনূর খান।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের সত্যতা পাওয়া যায়। এছাড়াও বিদ্যালয়টির বর্তমান সভাপতি সহ পূর্বের সভাপতিগণ স্কুলের স্বার্থ বিরোধী কাজ করেছেন যেখানে প্রধান শিক্ষকের সমর্থন রয়েছে বলে সার্বিক মতামত দেন তৎকালীন ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের জমি দাতা সদস্য মোঃ সেলিম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমানিত হয়েছে প্রধান শিক্ষক দূর্নীতির সাথে জড়িত। তাই দূর্নীতিবাজ ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এসব দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শাহ আব্দুল মতিন ঘটনার অস্বীকার করে জানান, জনবল নিয়োগের বিষয়ে আমি কোনো অর্থগ্রহন করিনি আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা।
এ বিষয়ে ভালুকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফা কামালের সাথে কথা হলে তিনি জানান, দুর্নীতির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি বিষয়টি মাত্র অবগত হলাম, যদি অভিযোগ সত্য হয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ভালুকা মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়ে শুক্কুর আলী ও প্রধান শিক্ষক কর্তৃক চাঁদা দাবীর ২টি পৃথক অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার এ প্রতিবেদককে জানান, এই ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট অনেক আগেই জেলায় পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমাদের নিকট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সিদ্ধান্ত আসা মাত্রই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

















