ঢাকা ০৩:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

মঠবাড়িয়ায় ৬০ কোটি টাকার ১৭টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মানে অনিয়ম

মঠবাড়িয়া পিরোজপুর প্রতিনিধি 
  • আপডেট সময় : ১৩৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এমডিএসপি প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।প্রতিটি ভবনে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় হিসেবে ১৭টি ভবনে বরাদ্দ প্রায় ৬০ কোটি টাকা।পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা স্বত্বেও নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের ছিল চরম অনিয়ম আর অবহেলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর (সাইক্লোন শেল্টার) নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মোঃ আশরাফুল ইসলাম।আবার এলজিইডির এসও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন ওই একই ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলাম। যদিও এলজিইডির আওতায় জিওবির কাজ তদারকির জন্য এলজিইডির একজন এসও দায়িত্ব পালন করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী ঠিকাদারদের ক্ষমতাবলে কোন নিয়মকানুনের ধার ধারেননা না উপজেলা প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলাম। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও নির্মাণ কাজ তদারকির নামে তার আত্মীয় আশরাফুল ইসলামকে (প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ার) এলজিইডির এসও দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকার ওপরে পার্সেন্টেজ নিয়ে অবৈধ উপায়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হন উপজেলা প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলাম। অন্তবর্তী সরকার ইতোমধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করলেও এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে এই কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় হলেও শ্বশুর বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়।অন্যদিকে প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলামের বাড়িও কুষ্টিয়া এলাকায়। সেই সুবাদে আত্মীয়ের শখ্যতায় পরষ্পর যোগসাজশে জড়িয়ে পড়েন অনিয়ম আর অবহেলায়।আর এসব অনিয়ম ঢাকতে তারা কৌশলে আশ্রয় নেন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়।
প্রতিটি ভবনে ১০০ ফুট করে ৭৭টি পাইল বসানোর কথা থাকলেও বসানো হয়েছে মাত্র ৩৯ ফুট।ব্যবহার করা হয়েছে নিম্ন মানের পাথর।পাইল বসানোর সময় সাইডে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি স্থানীয়দের।অধিকাংশ পাইল বসানো হয়েছে রাতের আধারে। রাত ৪ টার সময়ও শোনা গেছে পাইল বসানোর শব্দ। পর্যাপ্ত দৈর্ঘ্যের পাইল না বসানোয় উদ্ধৃত রড ও সিমেন্ট ট্রাক ভরে ফেরত নিয়ে গেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
৩৯ নং ভগিরাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান M/S-MR-KE-KSA.ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাজটি ক্রয় করে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করেন মিরুখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ আবু হানিফ। নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম করলেও এলজিইডির এসও না থাকায় এসব অনিয়ম দেখার ছিল না কেউ।এভাবে টিয়ারখালী,  শাখাড়িকাঠি ও নলী চান্দখালী সহ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত সবকটি প্রাইমারি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজানের সাথে কথা বললেও এলজিইডির এসও কে ছিলেন তা বলতে পারে নি তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলাম জানান, নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করতে এলজিইডি’র এসও’র প্রয়োজন নেই।অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ঠিকাদারের সাথে কথা বলতে বলেন তিনি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন,তথ্য প্রমান পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এলজিইডির কোন অনিয়ম ছাড় দেওয়া হবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মঠবাড়িয়ায় ৬০ কোটি টাকার ১৭টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মানে অনিয়ম

আপডেট সময় :
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এমডিএসপি প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।প্রতিটি ভবনে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় হিসেবে ১৭টি ভবনে বরাদ্দ প্রায় ৬০ কোটি টাকা।পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা স্বত্বেও নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের ছিল চরম অনিয়ম আর অবহেলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর (সাইক্লোন শেল্টার) নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মোঃ আশরাফুল ইসলাম।আবার এলজিইডির এসও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন ওই একই ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলাম। যদিও এলজিইডির আওতায় জিওবির কাজ তদারকির জন্য এলজিইডির একজন এসও দায়িত্ব পালন করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী ঠিকাদারদের ক্ষমতাবলে কোন নিয়মকানুনের ধার ধারেননা না উপজেলা প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলাম। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও নির্মাণ কাজ তদারকির নামে তার আত্মীয় আশরাফুল ইসলামকে (প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ার) এলজিইডির এসও দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকার ওপরে পার্সেন্টেজ নিয়ে অবৈধ উপায়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হন উপজেলা প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলাম। অন্তবর্তী সরকার ইতোমধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করলেও এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে এই কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় হলেও শ্বশুর বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়।অন্যদিকে প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলামের বাড়িও কুষ্টিয়া এলাকায়। সেই সুবাদে আত্মীয়ের শখ্যতায় পরষ্পর যোগসাজশে জড়িয়ে পড়েন অনিয়ম আর অবহেলায়।আর এসব অনিয়ম ঢাকতে তারা কৌশলে আশ্রয় নেন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়।
প্রতিটি ভবনে ১০০ ফুট করে ৭৭টি পাইল বসানোর কথা থাকলেও বসানো হয়েছে মাত্র ৩৯ ফুট।ব্যবহার করা হয়েছে নিম্ন মানের পাথর।পাইল বসানোর সময় সাইডে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি স্থানীয়দের।অধিকাংশ পাইল বসানো হয়েছে রাতের আধারে। রাত ৪ টার সময়ও শোনা গেছে পাইল বসানোর শব্দ। পর্যাপ্ত দৈর্ঘ্যের পাইল না বসানোয় উদ্ধৃত রড ও সিমেন্ট ট্রাক ভরে ফেরত নিয়ে গেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
৩৯ নং ভগিরাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান M/S-MR-KE-KSA.ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাজটি ক্রয় করে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করেন মিরুখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ আবু হানিফ। নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম করলেও এলজিইডির এসও না থাকায় এসব অনিয়ম দেখার ছিল না কেউ।এভাবে টিয়ারখালী,  শাখাড়িকাঠি ও নলী চান্দখালী সহ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত সবকটি প্রাইমারি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজানের সাথে কথা বললেও এলজিইডির এসও কে ছিলেন তা বলতে পারে নি তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলাম জানান, নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করতে এলজিইডি’র এসও’র প্রয়োজন নেই।অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ঠিকাদারের সাথে কথা বলতে বলেন তিনি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন,তথ্য প্রমান পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এলজিইডির কোন অনিয়ম ছাড় দেওয়া হবে না।