ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

মাফিয়ার নেটে এয়ার টিকিট!

আমিনুল হক ভুইয়া
  • আপডেট সময় : ১২:১৭:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১০০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

* বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঘিরেই টিকিট সিন্ডিকেটের সূত্রপাত। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ে নানা জায়গায়। যার মাশুল গুণতে হয় রেমিট্যান্সযোদ্ধা, হাজ-ওমরাযাত্রী, ট্রাভেল ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের
* এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সভাপতি করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া কমিটি সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তিকে শাস্তির জন্য সুপারিশ করবে

 

লালসবুজ পতাকাবাহী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঘিরেই টিকিট সিন্ডিকেটের সূত্রপাত। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ে নানা জায়গায়। যার মাশুল গুণতে হয় রেমিট্যান্সযোদ্ধা, হাজ-ওমরাযাত্রী, ট্রাভেল ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের। বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরব। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি কাজ করছেন। আর সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতো সিন্ডিকেট মাফিয়ারা হজম করে ফেলেছে। যে কারণে এই শ্রমবাজারটি হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। সৌদি আরবের মতো সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার ঘিরে গড়ে ওঠা অত্যন্ত শক্তিশালী গোষ্ঠী সিন্ডিকেট করে ভিসা ও বিমানটি নিজেদের কব্জায় নিয়ে ইচ্ছে মাফিক দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার নেপথ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’র কতিপয় ব্যক্তি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা-সৌদি আরব বর্তমানে বিমান ভাড়া ৯০-৯৫ হাজার টাকা। অথচ এক যাত্রার টিকিট সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকার বেশি হবার নয়, জানান সংশ্লিষ্ট ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা। ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা জানান, পবিত্র হজ আসন্ন। হজ মৌসুমে সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। হজকে সামনে রেখে এপ্রিল থেকে হজের আগ পর্যন্ত একটি কাফেলা যায় সৌদি আরবে।

হজের পর ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালনে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার মানুষ সৌদি আরবে যাতায়ত করেন। ডিসেম্বর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়েও একটা মোটা দাগের মানুষ ওমরাহ ও ভ্রমণ ভিসায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাতায়ত করে থাকেন। বাংলাদেশ হজ-ওমরাহ মুয়াল্লিম ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর ওমরা পালনের লক্ষ্য ছিলো প্রায় ৮০ হাজার। বর্তমানে প্রতিদিন ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কাছে গড়ে দুই শতাধিক পাসপোর্ট থাকছে। কিন্তু টিকিট সংকট। সম্প্রতি সিন্ডিকেটের সদস্যরা একদিনের মধ্যে ২১ হাজার টিকিট ব্লক করে ফেলে। এভাবে তারা ৬০ হাজার টিকিট ব্লক করে ফেলে। এই টিকিট ব্লক করায় সংকট তৈরি হয়েছে। কতিপয় ট্রাভেল এজেন্ট এয়ারলাইনসগুলোর টিকিট আগাম ব্লক করে নিজেদের কব্জায় নিচ্ছে বিমানে টিকিট। ফলে স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুণ পর্যন্ত বেশি টাকায় টিকিট কিনতে হচ্ছে। সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনস ব্যবসায়ী ও দেশীয় কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেছে। তারা বিভিন্ন এজেন্সির চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা ও ভ্রমণ নথিপত্র ছাড়াই শুধু ই-মেইলের মাধ্যমে কিছু এয়ারলাইনসের বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট বুকিং করে থাকে। এই সিন্ডিকেট দু’-তিন মাস আগে অগ্রিম তারিখের পিএনআর তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখে। কিন্তু এই পিএনআরে কোনো যাত্রীর নাম উল্লেখ থাকে না। এজেন্সি বা যাত্রীর ফ্লাইটের টিকিট খালি আছে কি না তা জানার কোনো সুযোগ থাকে না। টিকিট খুঁজতে গেলে বিক্রি হয়ে যাবার বার্তা আসে।

মতিঝিলের এ এল মাসুদ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির মাহিন ওয়াহিদ জানান, তারা সৌদি আরবের সঙ্গে ব্যবসা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি খুবই নাজুক। যেখানে ঢাকা থেকে সৌদি আরবে একযাত্রার টিকিট সর্বোচ্চ ৫০ হাজারের বেশি হবার নয়, সেখানে ৯০ তেকে ৯৫ হাজার টাকায় কোন কোন লাখ টাকার ওপরে বিক্রি থাকে একটি টিকিট। বিমান টিকিটের এমন উচ্চমূল্যের জন্য দায়ি সিন্ডিকেট। মাহিন ওয়াহিদ বলেন, টিকিটই শুধু নয়, বিদেশের মাটিতে শ্রমবাজার ঘিরেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। বর্তমানে ভিসা, প্রতিষ্ঠানের নামে ওকালা (রেজি:) প্রসেসিং, মেনপাওয়ার, ক্লিয়ারেন্স এবং টিকিট সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে কোন বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরব যেতে পারেন। কিন্তু এই টাকার মোটা অংশই (প্রায় ৯০ হ্জাার টাকা) টিকেটে চলে যায়। অথচ প্রবাসগামী প্রায় ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি ঋণ করে যান। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ভিসা কেনা ও টিকিটের বিষয়ে বিশেষ নজরধারী উদ্যোগ নিলে দুই থেকে আড়াই টাকায় বাংলাদেশিরা সৌদি আরবে যাওয়া সম্ভব হবে।
বিমান টিকিট যে সিন্ডিকেটের কবলে তা সরকারের তরফেও স্বীকার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, অধিক হারে টিকিটের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্সযোদ্ধাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নাম, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া গ্রুপ বুকিং, বিভিন্ন এজেন্সি চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ নথিপত্র এবং প্রবাসগামী কর্মীদের বৈদেশিক ওয়ার্ক পারমিট এমনকি যাত্রী তালিকা ছাড়াই ই-মেইল তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিমান টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়। সেখানে বলা হয়, পিএনআর-এ কোনো যাত্রীর নাম উল্লেখ থাকে না। সিট ব্লক থাকায় এজেন্সি বা যাত্রীদের ঐ ফ্লাইটের টিকিট খালি আছে কি না তা জানার কোনো সুযোগও থাকে না। নামবিহীন গ্রুপের সিট বুকিং রাখার কারণে টিকিট মজুতদারি করা হয়।

সিন্ডিকেটের কারণে আসন সংকট দেখা দেয় এবং টিকিট মূল্য বৃদ্ধি পায়। এখন থেকে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্ট কপি ছাড়া টিকিট বুকিং করা যাবে না। টিকিট বুকিংয়ের ঘন্টার মধ্যে ইস্যু না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এয়ারলাইন্স উক্ত টিকিট বাতিল হয়ে যাবে। গত ছয় মাসে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সভাপতি করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া কমিটি সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তিকে শাস্তির জন্য সুপারিশ করবে। টিকিটের উচ্চ মূল্যের বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের ১৩ সদস্য সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মাফিয়ার নেটে এয়ার টিকিট!

আপডেট সময় : ১২:১৭:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

* বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঘিরেই টিকিট সিন্ডিকেটের সূত্রপাত। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ে নানা জায়গায়। যার মাশুল গুণতে হয় রেমিট্যান্সযোদ্ধা, হাজ-ওমরাযাত্রী, ট্রাভেল ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের
* এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সভাপতি করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া কমিটি সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তিকে শাস্তির জন্য সুপারিশ করবে

 

লালসবুজ পতাকাবাহী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঘিরেই টিকিট সিন্ডিকেটের সূত্রপাত। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ে নানা জায়গায়। যার মাশুল গুণতে হয় রেমিট্যান্সযোদ্ধা, হাজ-ওমরাযাত্রী, ট্রাভেল ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের। বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরব। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি কাজ করছেন। আর সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতো সিন্ডিকেট মাফিয়ারা হজম করে ফেলেছে। যে কারণে এই শ্রমবাজারটি হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। সৌদি আরবের মতো সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার ঘিরে গড়ে ওঠা অত্যন্ত শক্তিশালী গোষ্ঠী সিন্ডিকেট করে ভিসা ও বিমানটি নিজেদের কব্জায় নিয়ে ইচ্ছে মাফিক দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার নেপথ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’র কতিপয় ব্যক্তি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা-সৌদি আরব বর্তমানে বিমান ভাড়া ৯০-৯৫ হাজার টাকা। অথচ এক যাত্রার টিকিট সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকার বেশি হবার নয়, জানান সংশ্লিষ্ট ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা। ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা জানান, পবিত্র হজ আসন্ন। হজ মৌসুমে সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। হজকে সামনে রেখে এপ্রিল থেকে হজের আগ পর্যন্ত একটি কাফেলা যায় সৌদি আরবে।

হজের পর ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালনে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার মানুষ সৌদি আরবে যাতায়ত করেন। ডিসেম্বর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়েও একটা মোটা দাগের মানুষ ওমরাহ ও ভ্রমণ ভিসায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাতায়ত করে থাকেন। বাংলাদেশ হজ-ওমরাহ মুয়াল্লিম ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর ওমরা পালনের লক্ষ্য ছিলো প্রায় ৮০ হাজার। বর্তমানে প্রতিদিন ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কাছে গড়ে দুই শতাধিক পাসপোর্ট থাকছে। কিন্তু টিকিট সংকট। সম্প্রতি সিন্ডিকেটের সদস্যরা একদিনের মধ্যে ২১ হাজার টিকিট ব্লক করে ফেলে। এভাবে তারা ৬০ হাজার টিকিট ব্লক করে ফেলে। এই টিকিট ব্লক করায় সংকট তৈরি হয়েছে। কতিপয় ট্রাভেল এজেন্ট এয়ারলাইনসগুলোর টিকিট আগাম ব্লক করে নিজেদের কব্জায় নিচ্ছে বিমানে টিকিট। ফলে স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুণ পর্যন্ত বেশি টাকায় টিকিট কিনতে হচ্ছে। সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনস ব্যবসায়ী ও দেশীয় কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেছে। তারা বিভিন্ন এজেন্সির চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা ও ভ্রমণ নথিপত্র ছাড়াই শুধু ই-মেইলের মাধ্যমে কিছু এয়ারলাইনসের বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট বুকিং করে থাকে। এই সিন্ডিকেট দু’-তিন মাস আগে অগ্রিম তারিখের পিএনআর তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখে। কিন্তু এই পিএনআরে কোনো যাত্রীর নাম উল্লেখ থাকে না। এজেন্সি বা যাত্রীর ফ্লাইটের টিকিট খালি আছে কি না তা জানার কোনো সুযোগ থাকে না। টিকিট খুঁজতে গেলে বিক্রি হয়ে যাবার বার্তা আসে।

মতিঝিলের এ এল মাসুদ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির মাহিন ওয়াহিদ জানান, তারা সৌদি আরবের সঙ্গে ব্যবসা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি খুবই নাজুক। যেখানে ঢাকা থেকে সৌদি আরবে একযাত্রার টিকিট সর্বোচ্চ ৫০ হাজারের বেশি হবার নয়, সেখানে ৯০ তেকে ৯৫ হাজার টাকায় কোন কোন লাখ টাকার ওপরে বিক্রি থাকে একটি টিকিট। বিমান টিকিটের এমন উচ্চমূল্যের জন্য দায়ি সিন্ডিকেট। মাহিন ওয়াহিদ বলেন, টিকিটই শুধু নয়, বিদেশের মাটিতে শ্রমবাজার ঘিরেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। বর্তমানে ভিসা, প্রতিষ্ঠানের নামে ওকালা (রেজি:) প্রসেসিং, মেনপাওয়ার, ক্লিয়ারেন্স এবং টিকিট সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে কোন বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরব যেতে পারেন। কিন্তু এই টাকার মোটা অংশই (প্রায় ৯০ হ্জাার টাকা) টিকেটে চলে যায়। অথচ প্রবাসগামী প্রায় ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি ঋণ করে যান। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ভিসা কেনা ও টিকিটের বিষয়ে বিশেষ নজরধারী উদ্যোগ নিলে দুই থেকে আড়াই টাকায় বাংলাদেশিরা সৌদি আরবে যাওয়া সম্ভব হবে।
বিমান টিকিট যে সিন্ডিকেটের কবলে তা সরকারের তরফেও স্বীকার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, অধিক হারে টিকিটের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্সযোদ্ধাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নাম, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া গ্রুপ বুকিং, বিভিন্ন এজেন্সি চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ নথিপত্র এবং প্রবাসগামী কর্মীদের বৈদেশিক ওয়ার্ক পারমিট এমনকি যাত্রী তালিকা ছাড়াই ই-মেইল তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিমান টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়। সেখানে বলা হয়, পিএনআর-এ কোনো যাত্রীর নাম উল্লেখ থাকে না। সিট ব্লক থাকায় এজেন্সি বা যাত্রীদের ঐ ফ্লাইটের টিকিট খালি আছে কি না তা জানার কোনো সুযোগও থাকে না। নামবিহীন গ্রুপের সিট বুকিং রাখার কারণে টিকিট মজুতদারি করা হয়।

সিন্ডিকেটের কারণে আসন সংকট দেখা দেয় এবং টিকিট মূল্য বৃদ্ধি পায়। এখন থেকে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্ট কপি ছাড়া টিকিট বুকিং করা যাবে না। টিকিট বুকিংয়ের ঘন্টার মধ্যে ইস্যু না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এয়ারলাইন্স উক্ত টিকিট বাতিল হয়ে যাবে। গত ছয় মাসে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সভাপতি করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া কমিটি সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তিকে শাস্তির জন্য সুপারিশ করবে। টিকিটের উচ্চ মূল্যের বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের ১৩ সদস্য সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।