মার্কিন পণ্যে ৫০% শুল্ক কমাতে পারে বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ০২:২৩:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫ ৩৮ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসাসামগ্রী আমদানিতে ৫০% শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব দিতে পারে বাংলাদেশ। এছাড়া বিভিন্ন শস্য, তুলাসহ যেসব পণ্যে শুল্ক নেই, সেসব পণ্য বিনা শুল্কে আমদানির নীতি অব্যাহত রাখা হবে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে বেশ কিছু মার্কিন পণ্য বিনা শুল্কে আমদানি করছে
বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত শুল্ক কমাতে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যে ৫০% শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে ৩৭% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর। বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্য পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেছেন। গত শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডা কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা উপস্থিত ছিলেন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসাসামগ্রী আমদানিতে ৫০% শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব দিতে পারে বাংলাদেশ। এছাড়া বিভিন্ন শস্য, তুলাসহ যেসব পণ্যে শুল্ক নেই, সেসব পণ্য বিনা শুল্কে আমদানির নীতি অব্যাহত রাখা হবে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে বেশ কিছু মার্কিন পণ্য বিনা শুল্কে আমদানি করছে। সেগুলো হলো কটন বা সুতা, ভাঙা বা আস্ত সয়াবিন, তরলীকৃত বিউটেনাস, সমুদ্রগামী জাহাজ ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস।
বিডার সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ফলপ্রসূ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আগামী তিন মাসের জন্য এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনকে। সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে চিঠি লেখা হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক হার পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশযুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক হার পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ
বিডার সভায় আরও জানানো হয়, শুল্কবাধা অপসারণের পাশাপাশি অশুল্কবাধা অপসারণের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কটন বা সুতা আমদানির ক্ষেত্রে ফিউমিগেশনের শর্ত বাতিল করা, যুক্তরাষ্ট্রের সুতা গুদামজাত করার অনুমতি দেওয়া, মার্কিন কৃষি ও প্রযুক্তিপণ্য কেনায় অগ্রাধিকার দেওয়া ইত্যাদি। পাশাপাশি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেসব শীর্ষ কোম্পানি ব্যবসা করে যেমন ওয়ালমার্ট, শেভরন, মেটা, টেসলা ও বোয়িংয়ের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হবে। আরও জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও চারটি পণ্য আমদানি করার সিদ্ধান্ত হতে পারে। সেগুলো হলো ক্যালসিয়াম কার্বনেট, তাজা অথবা হিমায়িত প্রাণী, হাড়সহ প্রাণীর মাংসের তাজা বা হিমায়িত টুকরা, হাড়বিহীন তাজা ও হিমায়িত প্রাণীর মাংস।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, “ভেবেছিলাম চীনের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। এখন আমাদের ওপরও শুল্ক বসিয়েছে। আমরা বলেছি, এত শুল্ক থাকলে দেশে বিনিয়োগ আসবে না। দ্রুতই সরকারের তরফে শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিডার সভায় বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি শামীম এহসান প্রমুখ অংশ নেন। এছাড়া ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান, পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার, সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।