মোংলা বন্দরের সিবিএ অফিস এখন আ.লীগের দখলে ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ায় কর্মচারীদের ক্ষোভ

- আপডেট সময় : ০২:৪২:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫ ৫০ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী শ্রমিকলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘ (সিবিএ) অফিস সন্ত্রাসী কায়দায় জবরদখল করে রেখেছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা আ.লীগের সময়ও (সিবিএ) এ সংঘের অফিসটি দখল করে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কার্যক্রম করেছিল বলে বহু অভিযোগ রয়েছে। ঠিক একই রকম বর্তমানেও সংঘের অফিসসহ সকল কিছু নিজেদের দখলে নিয়ে পূর্বের ন্যায় সেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দখলদাররা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত থাকলেও অফিস না করে সিবিএ অফিসে বসে খোশগল্পে মেতে থাকে, আর সরকারি অফিস করছে নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো। এ ব্যাপারে বন্দরের নীতিমালা ও প্রশাসনিক ভাবে তাদের পত্রের মাধ্যমে অবহিত করতে গেলে বন্দরের উর্ধ্বতন ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেন এই আ.লীগ নেতারা। এতে ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের দাপ্তরিক কার্যক্রম, আর চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বন্দরে কর্মরত সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে।
বন্দরের সাধারণ কর্মচারী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘ (রেজিঃ নং খুলনা/ ১৯৫৭) হচ্ছে মোংলা বন্দরে চাকরিরত শ্রমিক কর্মচারীদের সিবিত্র প্রতিষ্ঠান। প্রায় আট শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী এ সংগঠনের সদস্য। গত ২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে সংগঠনটির দ্বি-বার্ষিক সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নানা জটিলতায় এ পর্যন্ত সংঘটির নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য নতুন কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ আওয়ামী সরকার পতনের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে সংগঠনটিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাব রক্ষক ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মতিয়ার রহমান সাকিব এবং ওয়্যারলেস অপারেটর ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক এস এম আসিফ নাঈম সহ কয়েক নেতা মিলে কৌশলে সিবিএ নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে।
এরই মধ্যে গত বছরের ৭ অক্টোবর বন্দরের জুনিয়র অফিসার ও সাবেক সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ’লীগ নেতা মোঃ ফিরোজকে দিয়ে তার অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় সিবিএ অফিস জোরপূর্বক দখল করানো হয়। এ সময় ফিরোজ তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সিবিএ অফিসে অবস্থান করে নিজেকে ওই সংগঠনের আহবায়ক হিসেবে দাবি করে বন্দরের কর্মচারীদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এছাড়া নিজেকে আ.লীগের বড় নেতা পরিচয় দিয়ে অন্যান্য কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ সাধারণ কর্মচারীদের। আ.লীগ নেতা ফিরোজের এমন আচরণে সিবিএর সাধারণ কর্মচারীরা ভীতসন্ত্রন্ত হয়ে পড়েন। এ ব্যাপারে সাধারণ কর্মচারীদের পক্ষ থেকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করা হলে বিষয়টি সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে পড়ে। ফিরোজ বর্তমানে বন্দরের জুনিয়র অফিসার হওয়ায় কর্মচারীদের সংগঠন থেকে তাকে ফিরে আসার জন্য কর্তৃপক্ষ তাগিদ দিলে এখন শ্রমিক লীগ নেতা মতিয়ার রহমান সাকিব ও আসিফ নাঈমকে দিয়ে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র করছে।
কর্তৃপক্ষের (সিবিএ) সংগঠটিতে এ পর্যন্ত ফিরোজ, জাহিদুল ইসলাম, শাহিনুর রহমান ও সাকিব সহ একে একে ৪টি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন এবং যখন যার ইচ্ছা তিনি তখন এডহক কমিটির আহবায়ক দাবী করে তাদের অপরাধমূলক কার্যকলাপ করতে থাকে। সর্বশেষ সকলকে হটিয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান সাকিব ও সহ-সাধারণ সম্পাদক এস এম আসিফ নাঈম সুকৌশলে (সিবিএ) অফিস জোর পুর্বক দখলে নেন। আর শ্রমিকলীগের এ সকল নেতারা বন্দরের নিজেস্ব অফিস না করে সিবিএর অফিসে তাদের কার্যকলাপে স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্টসহ আইনশৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি করছে।
এদিকে, মতিয়ার রহমান সাকিব ও এস এম আসিফ নাঈম গত ৮ ডিসেম্বর থেকেই মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শফিকুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী (মেরিন) কমান্ডার আবু মোহাম্মাদ শোয়েব ও মেরিন অফিসার মোঃ আঃ রশিদ এর দপ্তরে গিয়ে কর্মচারী সংঘের এডহক কমিটির নেতা পরিচয় দেয়। এছাড়া ওই সময় থেকে মোংলা বন্দরের প্রতিটি দপ্তর তারা যেভাবে বলবে সেই ভাবেই কার্যক্রম চলবে বলে কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেয়। এর পর থেকে বন্দরের অফিসের নিজস্ব দাপ্তরিক কাজ ফেলে রেখে সিবিএর নেতা পরিচয়ে বিভিন্ন দপ্তরের নিয়োগ বাণিজ্য সহ নিজেদের স্বার্থে তদবির করতে থাকে। এ বিষয় বন্দর চেয়ারম্যানসহ সকলেই অবগত বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। ঠিক একই ভাবে চলতি বছরের ৯ ও ১২ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষের অফিস না করে পুনরায় বন্দরের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি তাদের অবগত করা হয়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৪ এপ্রিল কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শফিকুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) উপ-সচিব মোঃ নুরুজ্জামান, সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) উপ-সচিব মোঃ শাহীনুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী (মেরিন) কমান্ডার আবু মোহাম্মাদ শোয়েব ও মেরিন অফিসার মোঃ আঃ রশিদকে অভিযুক্ত করে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করে বন্দরের ওয়্যারলেস অপারেটর এস এম আসিফ নাঈম।
তবে দীর্ঘদিন যাবত আসিফ নাঈম ও সাকিব বিভিন্ন অনৈতিক বেআইনী কর্মকান্ড ও অফিস শৃংখলা পরিপন্থী কাজ করার কারণে বিভিন্ন সময়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করার বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এ শ্রমিক লীগ নেতারা। আসিফ নাঈম ও সাকিবের এসব অবৈধ ও বেআইনী কর্মকান্ড থেকে বিরত করা না হলে ভবিষ্যতে মোংলা বন্দর অস্থিতিশীল ও অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা প্রকাশ করছে বন্দরের সাধারণ কর্মচারীরা।
এ ব্যাপারে ওয়্যারলেস অপারেটর আসিফ নাইম ও হিসাব রক্ষক মতিয়ার রহমান সাকিব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, (সিবিএ) সংগঠনের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় সাধারণ কর্মচারীরা সভা করে এডহক কমিটি করে আহবায়ক ও ও সদস্য বানিয়েছেন। বিধি অনুযায়ী তারা সিবিএ অফিসে সভা করতে গেলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম বন্ধের পায়তারা করছে। আমরা বন্দরে কর্মরত কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করছি, কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিতে পারছেনা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শফিকুল ইসলাম মামলাটি তদন্তাধীন থাকায় কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে (সিবিএ)র সাবেক সভাপতি মোঃ নাসির চৌধুরী সিবিএর অফিস দখলসহ অন্যান্য অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, আমার চাকরীর বয়স ৩২ বছর। সংগঠনের সভাপতি হিসেবে বেশ কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেছি। তবে কখনো ম্যানেমেন্টের সাথে দ্বন্ধ করে দাবি আদায় করা যায় না, যা আমরা সাহস পাইনি।
আর আসিফ নাঈম ও মতিয়ার রহমান সাকিব এক দিকে শ্রমিক লীগ নেতা অন্যদিকে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়ে বন্দরের উর্ব্বতন কর্মকর্তারদের বিরুদ্ধে মামলা করলো তা দুখঃজনক, এতে বন্দরের ভাবমুর্তি নষ্ট সহ কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হলো। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বন্দরের আইনানুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হউক।